
আওয়ামী আমলের নাশকতার মামলায় বিএনপির ৫২ নেতাকর্মী আসামি,প্রধান স্বাক্ষী আ: লীগ নেতার সহোদর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সামাদ মুন্সী
হাবিব সরোয়ার আজাদ,সিলেট
আওয়ামী শাসনামলে নাশকতার মামলায় বিএনপির ৫২ নেতাকর্মী আসামি হয়ে কেউ ছিলেন জেল হাজতে আবার কেউ কেউ ছিলন ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে। ওই পাতানো মামলার প্রধান স্বাক্ষী ছিলেন বিএনপি সেক্রেটারী প্রার্থীর সহোদর ভাই আওয়ামী লীগের সাংগঠিক সম্পাদক ।
অভিযুক্ত বিএনপির সেক্রেটারী প্রার্থীর নাম আব্দুস সামাদ মুন্সী। তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের উওর শ্রীপুর ইউনিয়নের চারাগাঁও গ্রামের কাজল মিয়ার ছেলে।
একই সাথে সামাদ নবগঠিত ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য,আওয়ামী সরকার পতনের পর বিএনপি নেতাকর্মীদের হাত ধরে বিপুল অর্থ ব্যায় করে তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রপের চারাগাঁও স্থল শুল্ক ষ্টেশন পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন।
উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ ওরফে কালা কুদ্দুছের সহোদর (বড়ভাই) সামাদ মুন্সী ইতিমধ্যে ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারী পদ বাগিয়ে নিতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নিকট মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ায় পর দলটির নেতাকর্মীরা সংক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন।
শনিবার সামাদ মুন্সী ও তার সহোদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ ওরফে কালা কুদ্দুছ দুই সহোদর মিলে নিজেদের প্রভাব-ক্ষমতা জানান দিতে আওয়ামী সরকারের শাসনামলে বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলায় হয়রানী, জেল হাজতবাস করানো, ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকা সহ আওয়ামী সরকারের দলীয় সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, লন্ডনে পলাতক সাবেক এমপি রনজিত চন্দ্র সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খাঁন সহ দলের একাধিক নেতাকর্মী, পুলিশী প্রভাবে কয়লা-চুনাপাথরের কারবারের আড়ালে কিভাবে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সেই ফিরিস্থি তুলে ধরে বিএনপির উপজেলা, জেলা, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্ধের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন।
এরপুর্বে শুক্রবার জেলা শহর সুনামগঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে দুই সহোদর সামাদ -কুদ্দুছের প্রভাব প্রতিপক্তি অবৈধ আয়ের উৎস তুলে ধরা হয়।
এ প্রতিবেদকের নিকট অভিযোগের কপি,সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও ফুটেজ,বিএনপির সংক্ষুদ্ধ নেতাবর্মীদের বক্তব্য সংরক্ষিত রয়েছে।
শনিবার উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামাল হোসেন জানান, ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ১২ নভেম্বর রাতে উপজেলার কলাগাঁও সীমান্ত এলাকায় একটি পাতানো নাশকতার ঘটনা দেখিয়ে থানা পুলিশেকে দিয়ে সামাদ মুন্সী তার ভাই আ,লীগ নেতা কুদ্দুছ চক্র আমি সহ বিএনপির ৫ নেতাকর্মীকে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করায়।
পরদিন ১৩ নভেম্বর পাটের সলতা,লাল কসটেপ দিয়ে মোড়ানো পেট্রোল ভর্তি কাঁচের বোতল, পাথর, রামদা, গ্যাস লাইট জব্দ দেখিয়ে বিএনপির ৫২ নেতাকর্মীর নামে মামলা দায়ের করায়।
ওই মামলায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনিসুল হক,অপর মনোনয় প্রত্যাশী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলকেও আসামি করা হয়।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, সামাদ-কুদ্দুছের পাতানো ওই মামলায় পড়ে আমরা কেউ কেউ ছিলাম জেল হাজতে, অনেকেই ৪ থেকে ৫ মাস ঘরবাড়ি পরিবার পরিজন ছাড়া আত্মগোপনে ছিলেন, ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা জীবনেও ওই মামলার প্রভাব ফেলেছিলো। বাগলী শুল্ক ষ্টেশনে আমার এলসি কৃত ৬০ লাখ টাকার চুনাপাথর লুট করিয়ে নেয় ওই দুই সহোদরের লালিত চক্র।
উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আওয়ামী অপর সদস্য সাবেক ইউপি সদস্য সামসুল হক অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালে জেলা বিএনপি থেকে একটি পদ দিতে চেয়েছিলো সামাদ মুন্সীকে সে তখন পদ নিতে অস্বীকার করে। মূলত এরপুর্বেই আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর উপজেলা আ,লীগ নেতা আবুল হোসেন খানের সাথে সখ্য তৈরি করে তার ভাই আব্দুল কুদ্ধুছকে আওয়ামী লীগে পদ পাইয়ে দিতে গোপনে সহযোগিতা করেন সামাদ মুন্সী।
পরবর্তীতে দিন রাতের ভোটে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করলেও এরপর সাবেক এমপি রতন, সাবেক এমপি রনজিত চন্দ্র সরকারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী প্রার্থীথের পক্ষে ভোটের মাঠে প্রকাশ্যে টাকা খরচ করেন কুদ্দুছ, গোপনে টাকা খরচ করেন সামাদ মুন্সী।
এসবের বিনিময়ে দলীয় সুবিধা নিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে দ্ইু ভাই কয়লা চুনাপাথরের কারবার, কয়লা - চুনাপাথর চোরাচালানকে জায়েজ করা, ভেসে আসা কয়লার নামে চোরাচালানের কয়লা, সীমান্ত ছড়ার নুরী পাথর, বালি ইজারার নামে লোকজন দিয়ে বেপরোয়া চাঁদাবাজি লুপাট করায় সামাদ মুন্সী ও তার সহোদর আওয়ামী লীগ নেতা কুদ্দুছ।
তিনি আরো অভিযোগ করেন,২০২৩ সালের ওই নাশকতার মামলায় আসামি নিজেও ছিলাম। পাতানো নাশকতার মামলা উপরকরণ ও জব্দতালিকায় থাকা আলামতগুলো তৎকালীন সময়ে কুদ্দুছ, অপর আওয়ামী লীগ নেতা কলাগাঁও’র রানী গফুরের ছেলে সাইফুল ওরফে মুরগী সাইফুল, তার ভাগ্নে ইব্রাহিম ভারত থেকে সংগ্রহ করে পুলিশকে দেয়।
ওই মামলার প্রধান স্বাক্ষী কুদ্দুছ। এখন কুদ্দুছ আত্মগোপনে থেকে তার বড়ভাই আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী সামাদ মুন্সীকে ফের ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারী পদে বসাতে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করছেন।
উপজেলার চারাগাঁও এলাকার ৭৫ বছর বয়সি মহর আলী জানান, সামাদ মুন্সীর পিতা কাজল মিয়া তৎকালীন সময়ে চারাগাঁও বিওপির বিডিআর থাকাকালীন সময়ে কয়লা চোরাকাবারিদের স্পাই (সোর্স) ছিলেন। ভারতীয় বিএএফের হাতে আটকের পর ৫ থেকে ৬ মাস মেঘালয়ের শিংল জেল হাজতে ছিলেন কাজল মিয়া। প্রথমে সিলেট শহরে সামাদ মুন্সী রিক্সা চালাতেন। এরপর বিএনপি-আওয়ামী লীগ বিগত দুই সরকারের শাসনামলেই পিতার পথ ধরে প্রথমে কয়লা চোরাকারবার, এরপর কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সামাদ -কুদ্দুছ দুই সহোদর যৌথ পরিবার, যৌথ ভাবে বৈধ-অবৈধ আয়ে সুনামগঞ্জ জেলা শহরের ষোলঘর, হাসননগর, মরাটিলা, পুরাতন বাসষ্টেশন একাধিক বাড়ি-জায়গা, ডিএস রোডে বহুতল মার্কেট, আরো একটি মার্কেটে দোকানকোটা ক্রয়, ইটভাটা, সিলেটের বসতবাড়ির একাধিক প্লট ক্রয়, ভারতে মুদ্রা পাচার সহ তাহিরপুরের চারাগাঁও এলাকায় ডিপো, অফিস, হাওর জুড়ে জমি কিনে এখন শত কোটির টাকার মালিক।
শনিবার বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়ন আ,লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছের নিকট বিএনপি নেতাদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
শনিবার বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সামাদ মুন্সীর নিকট বিএনপি নেতাদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, সীমান্তে হাল চাষ করতে গিয়ে আমার পিতা অতীতে বিএসএফের হাতে আটকের পর শিলং জেল হাজতে ছিলেন। আমাদের এলাকায় যারা ধনী (বড়লোক) হয়েছেন তারা সবাই কর্ম করে ধনী হয়েছেন আমিও এক সময় সিলেটে রিক্সা চালাতাম।
তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্য্যন্ত আমি ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারী ছিলাম। এরপর আমাকে কোন পদ দেয়া হয়নি। ২০১৭ সালে ফের আমি উপজেলা বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক পদবী পাই। আমার ভাই আ,লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলে তাতে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। তার দাবি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের লোকজন চোরাচালান, ভারতে মুদ্রাপাচার,অৈেবধ আয়ের যে তথ্য দিয়েছে তা একবারে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিওিহীন।