
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্প চলছে স্লিপার ও রেলষ্ট্রেক বসানোর কাজ
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুনঃস্থাপন প্রকল্পের ৪৪ কিলোমিটার লাইনের কুলাউড়া জংশন স্টেশন এলাকা থেকে শুরু হয়েছে স্লিপার ও রেলষ্ট্রেক বসানোর কাজ। অবশেষে রেললাইন স্থাপনের মূল কাজ শুরু হওয়ায় তা দেখতে উৎসুক জনতা ভীড় করছেন। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস চলতে দেখা যায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পঞ্চম দফা বর্ধিত মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৫ ডিসেম্বর। তবে এই সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’ এর প্রজেক্ট ম্যানেজার অনিন্দ সারনাল গণমাধ্যমকে জানান, চলিত মেয়াদেই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। গত ৫ আগষ্টের পর তিনিসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা ভারতে আটকা পড়েছেন। ভিসা জটিলতায় তারা সাইটে (বাংলাদেশে) আসতে না পারায় কাজের অগ্রগতি কমেছে। যার কারণে শতভাগ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আরেক দফা মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। সম্প্রতি কাজের গতি বাড়লেও পঞ্চম দফা বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হচ্ছে না রেলপথ পুনঃস্থাপনের কাজ।
চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে পঞ্চম দফায় বর্ধিত মেয়াদ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়নি ৫০ শতাংশও। এরই মাঝে ষষ্ঠ দফা মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার অনিন্দ সারনাল।
সরেজমিনে প্রকল্পের কুলাউড়া জংশন এলাকা থেকে রেললাইনে স্লিপার ও রেলষ্ট্রেক বসানোর কাজ চলছে। স্টেশনের শিবির রোডস্থ লাতুর সিগনাল এলাকায় কাজ দেখতে সেখানে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০০ মিটারে লাইন বসানো সম্পন্ন হয়েছে। এই রেল লাইনের ১৭টি বড় ব্রিজের মধ্যে ৬টির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে আছুরিঘাট, কন্ঠিনালা, ধলছড়িসহ বাকিগুলোর কোনোটির কাজ চলছে, আবার কোনোটির বন্ধ রয়েছে। প্রকল্পের ৪২ টি কালভার্টের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২০টি। বাকিগুলোর কয়েকটিতে কাজ চলছে। ৬টি রেলস্টেশন ভবন ও প্ল্যাটফর্মের একটিরও কাজ সম্পন্ন হয়নি। তবে, শাহবাজপুরের ভারতীয় সীমান্ত থেকে মুড়াউল রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার লাইনের মাটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পাথর, স্লিপার ও রেলষ্ট্রেক বসানোর জন্য লাইনের পাশে তা মজুত রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, ব্রিটিশ-ভারত সরকার আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ হিসেবে ১৮৯৬ সালে চালু করে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেল সেকশনটি। ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত দীর্ঘ ১০০ বছরের বেশি সময় চালু এই রেলপথ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করে ২০০৩ সালের ৭ জুলাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার লোকজন।
রেলপথটির সংস্কার করে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবিতে বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি পালিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে বিদ্যমান মিটার গেজ লাইন সংস্কারের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৭ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি ব্যয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। পরবর্তী সময়ে এ প্রকল্পে যুক্ত হয় ভারত। কুলাউড়া-শাহবাজপুর প্রায় ৪৪ কিলোমিটার এই রেলপথটি ভারতের আসামের সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রকল্প অনুমোদনের ৬ বছর পর ২০১৭ সালের নভেম্বরে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’-এর সঙ্গে সিঙ্গেল লাইনের ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণের চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। সে সময় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭৮ কোটি টাকায়। চুক্তি অনুযায়ী ভারত এলওসির আওতায় ঋণ দেবে ৫৫৬ কোটি টাকা। বাকি ১২২ কোটি টাকা জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৮ সালের আগষ্টে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দুই বছর মেয়াদে ২০২০ সালের মে মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দফা মেয়াদ বাড়িয়েও নানা অজুহাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ সম্পন্ন করেনি। অবশেষে পঞ্চম দফায় ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়েছে। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে প্রকল্পের কুলাউড়া অংশ থেকে রেললাইনে স্লিপার ও রেলষ্ট্রেক বসানোর কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে, প্রকল্পের অধিকাংশ বড় বড় ব্রিজ, কালভার্ট, স্টেশন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন না করে এই বর্ধিত মেয়াদেও প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা নেই। রেলওয়ে সূত্র জানায়, কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন পুননির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৪৪ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার মেইন লাইন ও ৭ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ মোট ৫১ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মিত হবে। এ সেকশনে গার্ডার ব্রিজ ১৭টি ও ৪২টি কালভার্ট পুনঃনির্মাণ করা হবে। থাকবে আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা। একই সঙ্গে ৬টি স্টেশন ভবন এবং প্ল্যাটফর্ম পুননির্মাণ করা হবে।
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালক মো. সুলতান আলী জানান, ‘পঞ্চম দফায় কাজের মেয়াদ ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৪৮ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘কালিন্দ রেল নির্মাণ’ এর প্রজেক্ট ম্যানেজার অনিন্দ সারনাল জানান, ‘প্রকল্পের কুলাউড়ার দিক থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রথম ধাপে স্লিপার ও রেলষ্ট্রেক বসানোর কাজ চলছে। পঞ্চম দফার মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ চালিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, ৫ আগষ্টের পর তিনিসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা ভারতে গিয়ে আটকা পড়েছেন। ভিসা জটিলতায় তারা কাজের সাইটে আসতে না পারায় কাজের অগ্রগতি কিছুটা কমেছে। তবে এই মেয়াদেই ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্নে তিনি আশাবাদি।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?