অস্তিত্ব সংকটে নিকলীর কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
মৃৎশিল্প, পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এবং বাঙালি সংস্কৃতির গভীর শিকড়ে প্রোথিত একটি শিল্প, আজ অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। এই শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে নিকলীর কুমোরপাড়ার মৃৎশিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরে ঐতিহ্যবাহী পাত্র, হাঁড়ি, কলসিসহ নানা রকমের মাটির জিনিস তৈরি করে আসছেন। কিন্তু আধুনিককালে প্লাস্টিক, স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের পণ্য বাজার দখল করায় মৃৎশিল্পের বাজার হারিয়ে যেতে বসেছে।
নিকলীর কুমোরপাড়ার অন্যতম প্রবীণ মৃৎশিল্পী হরিদাস পাল বলেন, "আগে মানুষ মাটির হাঁড়ি-পাতিল ব্যবহার করত, সেগুলো খুবই সাধারণ ছিল। কিন্তু এখন প্লাস্টিক ও স্টিলের তৈজসপত্র সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ সেগুলোর দিকেই ঝুঁকছে। প্লাস্টিকের জিনিস সস্তা, টেকসই এবং সহজে বহনযোগ্য। অন্যদিকে, মাটির জিনিস খুবই ভঙ্গুর। সামান্য আঘাতেই ভেঙে যায়। তাই এখন আর কেউ মাটির জিনিসপত্র কিনতে আগ্রহী নয়।"
এদিকে, মৃৎশিল্পীরা এ শিল্প থেকে আর্থিক সুরক্ষা পাচ্ছেন না। সারা বছর ধরে পরিশ্রম করেও তারা পর্যাপ্ত উপার্জন করতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে অনেক কুমোর পেশা পরিবর্তন করছেন, কেউ কেউ ভিন্ন ব্যবসায় বা শ্রমিক হিসেবে কাজ খুঁজছেন।
এছাড়াও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে তাদের কাজ সম্পূর্ণ ম্যানুয়ালভাবে করতে হয়, যা কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ। পাশাপাশি চাহিদার অভাবের কারণে তারা পণ্যের মূল্য নির্ধারণেও সমস্যায় পড়েন। হরিদাস পাল বলেন, "আমরা খুব কম লাভে মাটির জিনিস বিক্রি করতে বাধ্য হই, কারণ বেশি দামে কেউ কিনতে চায় না।"
বর্তমানে সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় এই শিল্পের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ বা আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার ফলে কুমোররা তাদের প্রাচীন এই পেশা ধরে রাখতে পারছেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হয়, তাহলে এই শিল্পকে আধুনিক চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। মৃৎশিল্পের পণ্যগুলোর আধুনিকায়ন করা, ডিজাইনিং ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিত্যনতুন বৈচিত্র্য আনা এবং মৃৎশিল্পীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়া সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত এই শিল্পের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং আর্থিক অনুদান বা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?