
মৌলভীবাজারে র্যাবের অভিযানে কুখ্যাত ডাকাত বজলু গ্রেপ্তার: এলাকাবাসীর স্বস্তি, সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি
মৌলভীবাজার সংবাদদাতা
র্যাব-৯ এর মৌলভীবাজার ক্যাম্পের ২৫ সদস্যের একটি চৌকস দল আজ ভয়ঙ্কর ও কুখ্যাত ডাকাত বজলুকে (৪০) গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এসময় বজলু র্যাব সদস্যদের ওপর কোদাল দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে এক সদস্যকে আহত করলেও, দলবদ্ধ অভিযানে বাকিরা তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন।
বজলুর প্রকৃত নাম বজলুর রহমান। সে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ৪নং আপার কাগাবলা ইউনিয়নের বিন্নীগ্রামের মৃত জিলাদার মিয়ার ছেলে। জিলাদার মিয়া নিজেও একসময় ডাকাতির সর্দার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বজলু তার বাবার পথ অনুসরণ করে গত চার দশক ধরে মৌলভীবাজার ও আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল।স্থানীয়দের মতে, নবীগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এলাকায় সে ছিল একপ্রকার সাক্ষাৎ যমদূত। জেলার প্রায় প্রতিটি বড় ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং হত্যাকাণ্ডে তার গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিশেষ করে হাইওয়ে ডাকাতির ভয়ঙ্কর সব ঘটনায় বজলু ও তার সহযোগীরাই মূল নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে।:২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে বজলুর নেতৃত্বে আতর মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে স্থানীয় শমশেরগঞ্জ বাজার থেকে অপহরণ করে পাশের বিলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে গোটা এলাকা স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপরও একের পর এক ঘটনায় সে মানুষ হত্যা ও গুরুতর জখম করার মতো অপরাধ চালিয়ে গেছে।সর্বশেষ, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, সূর্যপাশা গ্রামের জয়নাল মিয়া (৪০) ও তার ১২ বছরের ছেলেকে সাতবাক পুলিয়া বিলে প্রকাশ্যে হামলা করে। জয়নাল মিয়া পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান, আর তার ছেলে এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।মাদকের সাম্রাজ্য:বজলু এলাকায় ইয়াবা ও ফেনসিডিল ব্যবসার মূল হোতা হিসেবেও পরিচিত। তার নির্দেশ ছাড়া কেউ এসব অবৈধ ব্যবসা চালাতে সাহস করে না। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সে তিনটি অস্ত্র বহন করে যেগুলো নিয়মিত ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করে।বজলুর পরিবার ও গোত্রের প্রায় প্রতিটি সদস্যই কোনো না কোনোভাবে ডাকাতি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রায় ৫০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। তবে ভয়ের কারণে কেউই প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পায় না। র্যাবের অভিযানে বজলু গ্রেপ্তার হওয়ায় এলাকায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও তার ও পরিবারের প্রতিশোধের আশঙ্কায় এখনো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ।এলাকাবাসী বজলুর সব অপকর্মের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি—মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানায়। একই সঙ্গে তার কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয়রা বলছেন, একাধিক হত্যা, মাদক ব্যবসা এবং নিরীহ মানুষের ওপর সন্ত্রাস চালানোর পরও যেন সে কোনোভাবেই জামিনে মুক্তি না পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।বজলুর গ্রেপ্তার মৌলভীবাজারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বড় একটি পদক্ষেপ। তবে তার নেটওয়ার্ক, অস্ত্রভাণ্ডার ও সহযোগীদের ধরতে র্যাব ও প্রশাসনের আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বজলুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই হতে পারে এই অঞ্চলের জন্য নতুন এক নিরাপদ অধ্যায়ের সূচনা।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?