
মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ৩ বন্ধুর মৃত্যু, ১৭ দিনেই বিধবা হলেন মারুফা গ্রামে শোকের মাতম
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো মারুফার জীবন। মাত্র ১৭ দিনেই ট্রেনের ধাক্কায় বিধবা হলো সে।
জুনের ৩ তারিখে টাঙ্গাইলের গোপালপুর এলাকার মেয়ে মারুফা খাতুনকে বিয়ে করেন মিরসরাই উপজেলার ৩ নং জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যম সোনাপাহাড় গ্রামের আবু তাহেরের পুত্র আনিসুর রহমান। নিজের পছন্দে বিয়ে করায় প্রথমে বাড়িতে বৌ না এনে মিরসরাইয়ের মিঠাছড়া ভাড়া বাসায় উঠেন আনিস। মাত্র ৫ দিন আগে ১৫ জুন পারিবারিকভাবে নতুন বৌকে ঘরে তুলে আনেন ছোট
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আনিসের পরিবার আনন্দ উল্লাসে নতুন বৌকে গ্রহণ করে। আনিস বাড়ির পাশে বিএসআরএম কারখানায় এক ঠিকাদারের গাড়ির চালক ছিলো সে। শুক্রবার রাত ৮ টায় চার বন্ধু মিলে ওই ঠিকাদারের কাছে বকেয়া বেতন আনতে রেললাইনে হেঁটে যাচ্ছিলেন।
পেছন থেকে একটি উল্টো পথে ট্রেনের ধাক্কায় তিন বন্ধু নিহত হয়। ভাগ্যক্রমে লাফিয়ে বেঁচে যায় এক বন্ধু রায়হান।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পাগল প্রায় পিতা আবু তাহের। জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যম সোনাপাহাড় পাশাপাশি তিনটি টিলায় নিহত তিন বন্ধুর বসবাস। ওই এলাকার অনেকে স্থানীয় বিএসআরএম কারখানায় বিভিন্ন ধরনের কাজে নিয়োজিত। তারা ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করে থাকেন। নিহত আনিসের বোন আইরিন সুলতানা পপি বলেন, 'বৃহস্পতিবার রাতে আনিস বাড়িতে এসে মোবাইল ফোন ঘরে রেখে বন্ধুদের সাথে পাওনা টাকা আনতে রেললাইন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। কিন্তু পেছন থেকে একটি ট্রেন তাদের ধাক্কায় দেয়। এ সময় তাদের সাথে থাকা এক বন্ধু লাফিয়ে পড়ে যায়। কিন্তু আনিস, রিয়াজ ও আরাফাতকে ট্রেনটি ধাক্কা দেয়। ট্রেনটি মূলত আপ লাইনের (ঢাকা-মুখী) আসার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি চলে আসে ডাউনলাইনে (চট্টগ্রাম-মুখী)। তাই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
এদিকে নিহত রিয়াজের পিতা জিয়াউর রহমান বলেন, 'আমার একমাত্র ছেলে রিয়াজ। সে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে এসে মোবাইল ফোন চার্জে দিয়ে বকেয়া টাকা আনতে আরো কয়েকজন বন্ধুসহ রেল লাইন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। কিন্তু উল্টো পথে ((ডাউনলাইনে) আসা একটি ট্রেন তাদের ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে মারা যায়'।
ঘটনায় জানা গেছে, উপজেলার বড়তাকিয়া এলাকায় পাহাড়ি ঢলে রেললাইনের উপর নির্মিত একটি কালভাট কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই স্থানে সংস্কার কাজ চলায় বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ট্রেন একমুখী চলছিল। অর্থ্যাৎ আপ লাইনের (ঢাকামুখী) ট্রেনও ডাউনলাইনে (চট্টগ্রামমুখী) চলাচল করছি।
অন্যদিকে প্রায় ১৬ বছর আগে মাকে হারায় আরাফাত হোসেন (১৮)। বোন মারা যাওয়ার পর জামাল উদ্দিন ভাগিনা আরাফাতকে নিয়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে মামার বাড়িতে সে বড় হয়। আরাফাত বিএসআরএম কারখানায় এক ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ করতো। বৃহস্পতিবার রাতে অপর দুই বন্ধুসহ বকেয়া বেতনের জন্য সেও বের হয়। কিন্তু অন্য দুই বন্ধুর মতো সেও ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার আবু জাফর বলেন, গত কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বড়তাকিয়ার খৈয়াছরা এলাকায় একটি কালভাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে বৃহস্পতিবার মিরসরাইয়ে রেললাইনের একটি অংশে ট্রেন এক লেইন দিয়ে (সিঙ্গেল লাইন ওয়ার্কিং) চলছিল। রেল লাইনে সাধারণ
মানুষের অবৈধ অবস্থানের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে তিনি জানান। সীতাকুণ্ড রেলওয়ে থানার ইনচার্জ আশরাফ সিদ্দিকী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চার বন্ধু হেঁটে যাওয়ার সময় একটি ট্রেন ধাক্কা দিলে তিন জন নিহত হয়। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?
হ্যাঁ
না
মন্তব্য নেই
0%
0%
0%
Popular Posts
Archive
Please select a date!
Submit