হাওর অঞ্চলকে ইকোনমিক হাবে রূপান্তর: আগামী মাসে চালু হচ্ছে কিশোরগঞ্জ ইজেড
নিজস্ব প্রতিবেদক
৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কারখানায় বছরে ২ হাজার পিকআপ ভ্যান উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে টাটার লোকাল পার্টনার নিটল-নিলয় গ্রুপ।
হাওর অঞ্চলের প্রথম ইকোনমিক জোন হিসাবে শিগগিরই চালু হচ্ছে কিশোরগঞ্জ ইকোনমিক জোন (ইজেড)। আগামী মাসেই ভারতীয় টাটা গ্রুপ তাদের পিকআপ উৎপাদন শুরু করবে এ ইকোনমিক জোনে।
৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কারখানায় বছরে ২ হাজার পিকআপ ভ্যান উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে টাটার লোকাল পার্টনার নিটল-নিলয় গ্রুপ।
নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে টাটা। মেশিনারিজসহ সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মার্চে উৎপাদনে যাবে তারা। বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি ছাড়াও শ্রীলংকাসহ অন্য দেশে পিকআপ বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে টাটা গ্রুপের।
তিনি আরো বলেন, আগামী জুনের মধ্যে সব জমি 'ডেভলপড' হয়ে যাবে। এখন একদিকে অবকাঠামো হচ্ছে, আর একদিকে ফ্যাক্টরি তৈরী হচ্ছে। ল্যান্ড ডেভলপমেন্ট ৬০ শতাংশ হয়ে গেছে, সীমানা প্রাচীরে দেয়াল নির্মাণ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন।
"টাটা ছাড়াও টায়ার ইন্ডাস্ট্রিতে ৬০০-৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে নিটল-নিলয় গ্রুপ। যেখানে বছরে সাড়ে ৩ লাখ টায়ার তৈরী হবে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য খাতে কিছু বিনিয়োগ আসছে। সব মিলিয়ে এই ইকোনমিক জোনে দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আসবে। আশা করছি ২০২৩ সালে সব প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাবে," যোগ করেন আবদুল মাতলুব।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় ভৈরব-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক সংলগ্ন প্রায় ৯১ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে এ জোন করছে নিটল-নিলয় গ্রুপ। এ জোন প্রতিষ্ঠিত হলে প্রাথমিকভাবে ২ হাজার এবং পরে ৫ বছরে ক্রমান্বয়ে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
আবদুল মাতলুব বলেন, এ বেসরকারি ইকোনমিক জোনটি কৃষিনির্ভর হাওরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার ভৈরবের কাছে হওয়ায় সহজে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও এই এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, পিকআপ, টায়ার শিল্প ছাড়াও এ জোনে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য একটি হাব তৈরী করতে চাচ্ছে নিটল–নিলয় গ্রুপ। যেখানে ভারত, চায়না, তুরস্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছোট ফ্যাক্টরি তৈরী করতে আগ্রহী। তারা গাড়ির বাম্পার, লাইট, বিশেষ করে ইলেট্রনিক্স গাড়ির কম্পোনেন্টস তৈরী করবে। এগুলো বাংলাদেশেও বিক্রি হবে আর বিদেশেও রপ্তানি হবে।
নিটল-নিলয় গ্রুপ জানিয়েছে, ২০২২ এর ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে (ট্রায়াল বেসিসে) তাদের বাস-ট্রাকের টায়ার কারখানা চালু হবে। জানুয়ারির প্রথমে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আসবে। একদিকে ফ্যাক্টরি তৈরীর কাজ চলছে, আরেকদিকে নতুন মেশিন আসবে।
আবদুল মাতলুব বলেন, "২০২৩ থেকে বাংলাদেশে যত বাস-ট্রাক আছে, সেখানে যে টায়ার প্রয়োজন হবে তা আমরাই দিতে পারবো। আমাদের ব্র্যান্ডেই টায়ার বিক্রি করবো। নিটল টায়ার, নিলয় টায়ার।"
নির্মিত হবে আন্তর্জাতিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ
পণ্য পরিবহনসহ অন্যান্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এটি ভৈরব-কিশোরগঞ্জ ১০০ ফুট মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত।
জোনের নিজস্ব রেললাইনটি গচিহাটা রেলস্টেশন পয়েন্টে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ লাইনে যুক্ত আছে এবং আশুগঞ্জ ও ভৈরব নদীবন্দর থেকে জোনের দূরত্ব মাত্র ৪০ কি.মি.।
এই জোনে থাকবে নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ পানি শোধনাগার। এটি হবে পূর্ণাঙ্গ লজিক্টিকস জোন। প্রধান গেটে থাকবে সংক্রিয় ওজন পরিমাপ সহ সর্বাধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
থাকছে জলাধার, বিনোদন কেন্দ্র, অত্যাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ডে-কেয়ারসহ সবুজ বনায়ন। ব্যাংক, বিমা, সরকারি অফিসসহ প্রশাসনিক কাজের জন্য আলাদ ভবন নির্মাণ হবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য থাকছে বেজা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ। থাকছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) ফ্যাসিলিটি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ গ্যাস সংযোগ সহ দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তিগত সুবিধা। থাকবে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল ও রেস্তোরাঁ।
২০৩০ সালের মধ্যে বেজা সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। লক্ষ্য হলো, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো জুড়ে বার্ষিক ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানির প্রত্যাশা তাদের।