ডার্ক মোড
Saturday, 03 May 2025
ePaper   
Logo
বিশ্বঐতিহ্য ষাটগম্বুজ সুন্দরবনে ৩ দিনের সরকারি  ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়

বিশ্বঐতিহ্য ষাটগম্বুজ সুন্দরবনে ৩ দিনের সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়

    এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির,সুন্দরবন

৩ দিনের সরকারি  ছুটিতে বাগেরহাটের দু’টি বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবনসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। ৩ দিনের সরকারি  ছুটিতে ৩দিনে বৃহস্পতিবার(১ মে ) ও শনিবার (৩ মে) থেকেই সুন্দরবনের বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। চোখ জুড়ানো, শিহরন জাগানো অরণ্য সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সুন্দরবন।  এসব স্থানে ৩ দিনের সরকারি  ছুটিতে উপচে পড়ছে মানুষের ঢল। পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্মল পরিবেশে সময় কাটাতে পেরে খুশি দর্শনার্থীরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের পর্যটকরা ৬’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী ষাটগম্বুজ মসজিদ ও বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন।সুন্দরের রানি সুন্দরবন ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ বদলায়। বলা হয়ে থাকে, সুন্দরবন দিনে চার বার তার রূপ বদলায়, যার সকালে এক রূপ, দুপুরে অন্যরূপ আর পড়ন্ত বিকালে নতুন রূপে উদ্ভাসিত হয়। আর রাতে গহিন অরণ্যের মধ্যে এক ভিন্ন শিহরন তৈরি করে সুন্দরবন। তাছাড়া অমাবস্যায় কিংবা চাঁদনি রাতে নানান রূপে পর্যটকদের কাছে ধরা দেয় সুন্দরবন।বিশ্বের ঐতিহ্যবৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের মৎস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগারওচিত্রল  মায়া হরিণের। সাধারণ মানুষের আকর্ষণ ও গুরুত্বের দিক দিয়ে বাঘের পরেই চিত্রল ও মায়া হরিণের অবস্থান।৩ দিনের সরকারি ছুটিতে পর্যটকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন সুন্দরবনে। ম্যানগ্রোভ, গোলপাতার সুন্দরবন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ বাংলাদেশের সুন্দরবন। সুন্দরবন বাংলাদেশের গর্ব, বাংলাদেশের রক্ষাকবচও। ঝড়ঝঞ্ঝা নিজের শরীর দিয়ে আটকে দিয়ে পুরো দেশকে রক্ষা করে এই সুন্দরবনই। প্রকৃতির ‘অনিন্দ্যসুন্দর সৌন্দর্য’ কথাটা অবলীলায় শুধু এই বনকে নিয়েই বলা যায়। নদী, খাল ও সমুদ্র আর রহস্যঘেরা বনভূমি এই সুন্দরবনকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বনের মায়াবী রূপের ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়ায়, শিহরন জাগায় প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে।করমজল, হারবারিয়া, হিরণ পয়েন্ট, কচিখালী ও দুবলার চরসহ বনের প্রতিটি ভ্রমন স্পটে ঘুরে আনন্দ উপভোগ করছেন তারা। একইসাথে বলেশ্বর ও ভৈরব নদীর বাঁধে পর্যটকদের ঢল নেমেছে।লাখো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের সুন্দরবনসংলগ্ন শরণখোলার বলেশ্বর নদীর তীরের “রিভারভিউ ইকোপার্ক”। বিশাল বলেশ্ব নদী, নিল আকাশ ও প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে রিভারভিউ ইকো পার্কে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
বনভূমি এই সুন্দরবনকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বনের মায়াবী রূপের ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধতা ছড়ায়, শিহরন জাগায় প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে। মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর সুন্দরবনে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও পর্যটকদের জন্য ফের উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বাঘ-হরিণের আবাসভূমি সুন্দরবন। আর এর পর থেকেই সুন্দরবনে আসতে শুরু করেছে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।

নানা প্রজাতির প্রাণীসহ বনের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেছেন। মুগ্ধ হয়েছেন বনের জীববৈচিত্র্য দেখে।পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে করমজলে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। সুন্দরবনের স্পটগুলোকে আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি।সুন্দরবন বিভাগ জানায়, এখন সুন্দরবনে ভ্রমণ মৌসুম নয়। তাপরও ঈদের ছুটি কাটাতে দূর-দূরান্ত থেকে সুন্দরবনে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা। ঈদের ছুটিকে স্মরণীয় রাখতে কেউ এসেছেন বন্ধুবান্ধব নিয়ে আর কেউ পরিবার নিয়ে।
সিরাজগঞ্জ থেকে বন্ধুদের নিয়ে সুন্দরবনে প্রথমবার এসেছেন বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইয়াসির আরাফাত (২৯)। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এতো সুন্দর পর্যটন স্পট বাদ দিয়ে কেন আমরা বিদেশ যাই, এখানে এলেই যেকোন মানুষের মন ভালো হবে। আমরা আবার সুযোগ পেলে আসবো।’পাবনা থেকে এসেছেন জাহিদুর রহমান (৩৮)। পেশায় সরকারি চাকরীজীবী। দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে ঈদের ছুটিতে সুন্দরবনে এসেছেন। গত ঈদেও তারা সুন্দরবন ঘুরে গেছেন। সুন্দরবনের অপরুপ সৌন্দর্য তাদের মন কেড়েছে তাই আবার ছুটে আসা বলে জানান তিনি।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো: রেজাউল করিম চৌধুরী  জানান, ‘বনের কচিখালীতে আছে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্যের হাতছানি। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য কচিখালী হচ্ছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। এরপর কটকা ও হিরণ পয়েন্ট। এ তিনটি পয়েন্টে মোংলা থেকে ট্রলারে করে পৌঁছাতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগে। বনের কটকাতে রয়েছে হরিণের অভয়ারণ্য। আছে ওয়াচ টাওয়ার। এ টাওয়ারে উঠে এক নজরে দেখা যায় অপূর্ব সুন্দর সুন্দরবন। আর করমজলে আসা পর্যটকদের মন কাড়ছে সেখানকার সৌন্দর্য। তবে মৌসুম না হলেও ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের ছুটিতে এ বনে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মোংলার আহ্বায়ক নুর আলম শেখ বলেন, ‘সুন্দরবন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের তালিকায় নিঃসন্দেহে সেরা। এজন্য দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষ একটু সুযোগ পেলেই ছুটে আসেন এখানে। যারা সুন্দরবনে প্রথম এসেছেন সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে তারা বার বারই ছুটে আসেন।’

মোংলা ট্যুরিস্ট পুলিশ সুন্দরবন জোনের ওসি বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, ‘৩ দিনের সরকারি  ছুটিতে পর্যটকরা আসা শুরু করেছেন। দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা মোংলা থেকে ছোট নৌযানে করে সুন্দরবন ভ্রমণে রওনা হচ্ছেন। তাদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আমরা তৎপর আছি।অপর পর্যটক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, পরিবারের সঙ্গে ষাটগম্বুজ ও সুন্দরবনে এসে ঈদের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে গেছে। এর আগে চিড়িয়াখানায় অনেক বন্যপ্রাণী দেখেছি। অনেক ইচ্ছা ছিল সুন্দরবন এসে খোলা পরিবেশে বন্যপ্রাণী দেখার। সেই ইচ্ছা পূরণ হলো। গাছ গাছালির ভেতর থেকে হেঁটে বনের আসল পরিবেশ উপভোগ করেছি। কচ্ছপ, কুমির, বানর, হরিণ এবং বিভিন্ন রকমের পাখি দেখে ভালো লাগছে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, এবার  সরকারি ছুটির কারণে করমজল পয়েন্টসহ সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলোতে মানুষের ভিড় বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ আসছেন। ঈদের দিন থেকে দর্শনার্থীর চাপ অনেক বেড়েছে। অতিরিক্ত পর্যটকের আগমনে যাতে বনের পরিবেশ নষ্ট না হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখছি। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমাদের কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন।
বাগেরহাট জাদুঘরে কাস্টোডিয়ান বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থাপনা। এই স্থাপনার প্রতি দেশী বিদেশী দর্শনার্থী ও গবেষকদের আগ্রহের কমতি নেই। যার ফলে প্রতিনিয়ত এখানে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল অনেক কম। যার ফলে দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে আমাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হয়। তারপরে আমরা সব সময় চেষ্টা করি দর্শনার্থীদের সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে।অপরদিকে, ৩ দিনের সরকারি  ছুটিতে লাখো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদীর তীরের “রিভারভিউ ইকোপার্ক”। বিশাল বলেশ্ব নদী, নিল আকাশ ও প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে রিভারভিউ ইকো পার্কে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। ঈদের দিন থেকে উপচে পড়ছে মানুষের ঢল। পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্মল পরিবেশে বিনামূল্যে সময় কাটাতে পেরে খুশি দর্শনার্থীরা।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুদীপ্ত কুমার সিংহ বলেশ্বর নদীর তীরে পর্যটন বান্ধব নান্দনিক পরিবেশ গড়ে তুলেন। তাঁর ভাষায়, নাগরিক কর্মব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করতে এ স্থানটি অত্যন্ত মনোরম আকর্ষনীয়। তাই প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী এখানে আসছেন। দর্শনার্থীদের ঘীরে পার্ক এলাকায় থাকা ফুসকা, চানাচুরসহ বিভিন্ন খাদ্য বিক্রেতা ও স্পিডবোট-নৌকা চালকসহ অনেক মানুষের কর্ম সংস্থান হচ্ছে। বিভিন্ন উৎসবে এখানে দর্শনার্থী ক্রমশ: বাড়তে থাকবে বলে তিনি আশাবাদী।

 
বিশ্বঐতিহ্য ষাটগম্বুজ সুন্দরবনে ৩ দিনের সরকারি  ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন