
বান্দরবানে দুটি অভ্যন্তরীন সড়কে পাল্টে যাবে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন
সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান
বান্দরবান জেলা সদরে দুটি অভ্যন্তরীন সড়কে উন্নত হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা, কৃষি ক্ষেত্রে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, পাল্টে যাবে দুই এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন। বান্দরবান সদর উপজেলার বাঘমারা-খানসামা পাড়া হতে বৌদ্ধ বিহার সড়ক অপরটি সুয়ালক বাজার হতে বঙ্গপাড়া-গণেশ পাড়া অভ্যন্তরিন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ইতোমধ্যে একটির কাজ শেষ হয়েছে, অপরটির কাজও প্রায় শেষ প্রান্তে। খুব শীঘ্রই এই দুটি অভ্যন্তরীন সড়ক উদ্বোধনের মাধ্যমে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এদিকে দীর্ঘদিন পর এই গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীন সড়ক দুটি নির্মাণ করায় খুশি স্থানীয়রা।
সরেজমিনে জানা যায়, বাঘমারার খানসামা পাড়ার বিস্তৃর্ণ এলাকা সমতল ভ‚মি। সেখানকার স্থানীয় অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষির উপর নির্ভরশীল। জীবিকা নির্বাহের জন্য যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ফলফলাদি থেকে শুরু করে জুমচাষ ও বাগান করে আসছে স্থানীয়রা। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সঠিক সময়ে মাঠে উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে না পারায় অনেক সময় মাঠেই নষ্ট হতো ফসল। বর্তমানে বাঘমারা-খানসামা পাড়া হতে বৌদ্ধ বিহার পর্যন্ত অভ্যন্তরীন সড়কটি হওয়াতে সহজেই উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে আসতে পারবে স্থানীয় কৃষকরা। একই ভাবে সুয়ালক বাজার হতে বঙ্গপাড়া-গণেশ পাড়াসহ আশপাশের লোকজনও কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট পোহাতে হয়েছিল এসব এলাকার বাসিন্দাদের। কিন্তু সম্প্রীতি অভ্যন্তরীন সড়ক নির্মাণের ফলে পাল্টে গেছে স্থানীয়দের জীবনমান, সহজেই কৃষি পণ্য পরিবহন করতে পারার কারণে কৃষি ক্ষেত্রে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যার ফলে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালিদের কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে, তেমনই স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটবে। সেখান থেকে চিন্তা করলে এটা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেও একটা বিরাট ভূমিকা রাখবে।
এলজিইডি তথ্যমতে, এই দুটি সড়কের প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাঘামারা খানসামা চাকমা পাড়া হতে ভায়া পর্যন্ত সাড়ে ৭ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। অপরদিকে সুয়ালক বঙ্গপাড়া হতে গণেশ পাড়া প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এই দুটি সড়কের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সড়কটি কাজ শেষ হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াত সুবিধা, অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির বিরাট এক বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ে এই দুটি সড়কের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার যে উন্নয়ন সেটি এখন সবার কাছেই অভাবনীয়। তাছাড়া দুর্গম পাহাড়ি জনপদে ভোগান্তি এলাকার জুড়ে উন্নত মানে কার্পেটিংযুক্ত এত সুন্দর সড়ক সেটি কেউ কল্পনা করতে পারেননি। আগে কোথাও গেলে ধুলাবালি ও ভিজা মাটি স্যাতস্যাতে যাতায়াতে কষ্ট হতো, বর্তমানে সেই সড়ক দিয়ে কৃষিপণ্য পরিবহন ও যাতায়াত সুবিধা পাচ্ছে। নতুন এই দুটি সড়ক নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও কৃষি অর্থনীতির একটা দারুণ পরিবর্তন হবে মনে করেন স্থানীয়রা।
বাঘমারা স্থানীয় বাসিন্দার অংসুই প্রæ জানান- আমাদের বর্ষা মৌসমে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হত। এক পাড়া থেকে অন্য পাড়াতে যেতে হলে পাহাড়ি পথে দিয়ে যেতে হত। শুধু তাই নয়, আমাদের জুমে উৎপাদিত ফসলও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে বাজারে নিয়ে যেতে পারতাম নাম। কিন্তু রাস্তার কাজ হওয়া মুহুর্তে মধ্যে গন্তব্যে যেতে পারবো এবং আমাদের কষ্টও কমে যাবে।
বঙ্গপাড়া বাসিন্দা সমীরণ তংচঙ্গ্যা বলেন, এই সড়ক আগে প্রচুর ধুলাবালী ও গর্ত ছিল। সামান্য বৃষ্টি পড়লে হাটতে যেতে পারতাম না। কষ্ট হত এই এলাকার মানুষের। এখন এলজিইডি উন্নত মানের সড়কের নির্মানের ফলে আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক সহজ হয়েছে।
বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাসাউর বলেন, এই দুটি সড়ক নির্মাণের ফলে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষিপণ্য পরিবহন, যাতায়াতের অনেক সহজ হবে। যেসব এলাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হত সেখানে এই সড়কের মাধ্যমে উপকার হবে। পাহাড়ের চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফসলের নায্য মূলে পাবে আর এলাকায় আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে। বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে তিনি।
মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন
আপনি ও পছন্দ করতে পারেন
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
আর্কাইভ!
May 2025
2027
2026
2025
2024
2023
Jan
Feb
Mar
Apr
May
Jun
Jul
Aug
Sep
Oct
Nov
Dec
Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat
1
2
3
4
5
6
7
8
9
10
11
12
13
14
15
16
17
18
19
20
21
22
23
24
25
26
27
28
29
30
31