পিলখানা হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় : জামায়াত আমির
নিজস্ব প্রতিনিধি
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ২০০৯ সালের ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি মিলনায়তনে পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের মর্মান্তিক নৃশংস ঘটনার বিচারের দাবি ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার রূহের মাগফেরাত কামনা করে বলেন, জাতির জন্য এটি একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। পিলখানা হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এটা আধিপত্যবাদী শক্তির বাংলাদেশকে করদরাজ্য বানানোর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। পাক-ভারত উপমহাদেশে আলাদা মুসলিম রাষ্ট্র হবে ভারত তা কোনদিনই মেনে নেয়নি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরে কংগ্রেসের একটি মিটিং-এ অফিসিয়ালি জওহরলাল নেহেরু স্পষ্ট করে বলে আপাতত আমরা এটা মেনে নিচ্ছি। তার অর্থই হচ্ছে স্থায়ীভাবে তারা কখনই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূখণ্ড মেনে নিতে পারেনি।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মু. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন দেশ ঠিকই পেয়েছি কিন্তু ভারতীয় আগ্রাসন থেকে আজও মুক্ত হতে পারিনি। এই আধিপত্যবাদী শক্তি আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে তার করদরাজ্য বানানোর জন্য সকল ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি বাংলাদেশকে একটি তাবেদার রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। এজন্যই পিলখানার এই ঘটনা সংগঠিত করা হয়েছিল। বিডিআর বিদ্রোহের এই ঘটনাকে পরিকল্পিতভাবে জয়েন্ট প্রজেক্ট বা যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই দুটি শক্তির একটি হলো এ দেশীয় সহযোগী শক্তি এবং অপর শক্তি হলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একটি বিশেষ সংস্থা। তারা এখনও এদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেই চলেছে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ২০০৬ সালে পল্টন ময়দানে লগি-বৈঠা দিয়ে জনগণকে পিটিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী কায়দায় রাজনীতিকে ধ্বংস করে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় অল্প সময়ের ব্যবধানেই রাষ্ট্র ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেই ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস অফিসারকে হত্যা করা হয়।
আব্দুস সবুর ফকির বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ১৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও বাংলাদেশের মানুষ এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর পায়নি। সেই দিন দরবার হলে আসলে কী হয়েছিল? বিডিআরের এই প্রোগ্রামে মূলত প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তিনি গেলেন না কেন? অল্প সময়ের মধ্যে দেশের সকল মেধাবী অফিসারকে বিডিআরে বদলি করে কেন সবাইকে একত্রিত করা হলো? এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট আজও জনসম্মুখে আসতে দেওয়া হয়নি কেন?
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান।
আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সালাম, অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিক। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী প্রচার সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন, সহকারী অফিস সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন, সহকারী সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শাহীন আহমদ খান প্রমুখ।