ডার্ক মোড
Tuesday, 22 July 2025
ePaper   
Logo
এতগুলো মাসেও হত্যা, নিপীড়ন ও গুমের বিচারে অগ্রগতি নেই: আখতার

এতগুলো মাসেও হত্যা, নিপীড়ন ও গুমের বিচারে অগ্রগতি নেই: আখতার

নিজস্ব প্রতিনিধি

জুলাই অভ্যুত্থানের পর এতগুলো মাস পেরিয়ে গেলেও শেখ হাসিনার আমলের হত্যা, নিপীড়ন ও গুম-খুনের বিচারে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

শনিবার (১৯ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জুলাই-আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

আখতার বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ছিল, বাংলাদেশের বিচার কাঠামো এমন হবে, যেখানে বিগত সময়ে দেশের মানুষের ওপর যে অত্যাচার, নিপীড়ন, গুম-খুন ও গণহত্যা হয়েছে, সেগুলোর পরিপূর্ণ বিচার হবে। কিন্তু এতগুলো মাস পেরিয়ে গেলেও আমরা বিচারের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি খেয়াল করিনি।’

গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে বাহাত্তরের সংবিধান পেয়েছিলাম, সেটা আমাদের কাঙ্ক্ষিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সুবিচারের দেশ আমাদের উপহার দিতে পারেনি। যে অর্থনৈতিক অধিকারগুলো আছে, সেগুলোর সাংবিধানিক স্বীকৃতি অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশের মানুষ। আমরা আমাদের অর্থনৈতিক অধিকারগুলোকে সাংবিধানিক স্বীকৃতির পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি।’

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আমাদের যে সংবিধান প্রণীত হয়েছিল, সেটি এক ব্যক্তিকে রাষ্ট্রকাঠামোর মূলে রেখে হয়েছিল। যে কারণে গেল অর্ধশতাব্দিতে বাংলাদেশে কোনো ক্ষমতার ভারসাম্য আমরা দেখিনি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধানের বাস্তবতা রয়েছে।

‘একটি গণপরিষদের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন করে, সেটি যাতে একক কোনো দলের ইশারায় পরিবর্তিত হতে না পারে— এমন এক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও জনগণের মতামতের ভিত্তিতে এটি গ্রহণ করা সম্ভব হবে।’

ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর এক থাকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘নানা কারণে আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার জায়গা তৈরি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাওয়া–পাওয়ার হিসাব–নিকাশ থেকে পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণের জায়গা তৈরি হয়েছে।’

কিন্তু এটা গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশার জায়গা ছিল না বলে উল্লেখ করে আখতার বলেন, ‘আমরা এমন এক বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, যেখানে প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ ও পেশিশক্তির রাজনীতি উতরে গিয়ে আমরা মানুষের সমস্যা সমাধানে নাগরিক ও মানবিক মর্যাদার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’

‘সেই পথে আমরা কতদূর অগ্রসর হতে পেরেছি, সেটা ইতিহাস বিবেচনা করবে। আমার কাছে এখনো মনে হয়, এক বছর পার হলেও আমাদের অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের আশা নিঃশ্বেষ হয়ে যায়নি।’

আখতার আরও বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের হাত থেকে সরে গিয়ে গণঅভ্যুত্থান মুষ্টিমেয় কিছু রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর কাছে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ুক— আমরা সেটা চাই না। এই গণঅভ্যুত্থান আমাদের সবার। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান একক কোনো রাজনৈতিক দলের কাছে বন্দি না রেখে ফ্যাসিবাদবিরোধী সবপক্ষ সমানভাবে ধারণ করে আমরা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে সামনে অগ্রসর হতে পারব।

আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু। আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ১২–দলীয় জোট প্রধান ও জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ কায়সার, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের আহ্বায়ক নাঈম জাহাঙ্গীর, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত প্রমুখ।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন