ডার্ক মোড
Friday, 01 November 2024
ePaper   
Logo
উৎক্ষেপণ হতে যাচ্ছে হাবলের উত্তরসূরি, জানা যাবে মহাবিশ্বের জন্মরহস্য

উৎক্ষেপণ হতে যাচ্ছে হাবলের উত্তরসূরি, জানা যাবে মহাবিশ্বের জন্মরহস্য

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক

প্রায় বিশ বছরের কাজ শেষে আগামী ১৮ ডিসেম্বর জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটি হচ্ছে হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরি, যেটি এ পর্যন্ত বানানো সর্ববৃহৎ নভোমানমন্দির। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ টেলিস্কোপটি সঠিকভাবে কাজ করলে মহাবিশ্ব নিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ ও অজানা প্রশ্নের সমাধান হবে।

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে টেলিস্কোপটি বানানোর জন্য ১৭টি দেশ ঐকমত্য পোষণ করে যার নেতৃত্বে রয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। এছাড়া কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এ প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অ্যাপোলো অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি দিতে নাসার দ্বিতীয় প্রশাসক জেমস ওয়েবের নামানুসারে টেলিস্কোপটির নামকরণ করা হয়েছে। ২০১১ সালে যখন হাবল প্রায় অচল হয়ে যায় তখন প্রকল্পটি আরও গতিশীল হয়।

এরমধ্যে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা পেরিয়ে এ যাবত ১৭ বার উৎক্ষেপণ বাতিল করে নাসা। আগামী ১৮ ডিসেম্বর টেলিস্কোপটি উৎক্ষেপণের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে উৎক্ষেপণসহ এ প্রকল্পে মোট ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে।

পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে পৃথিবীর সাথে সমান্তরালে সূর্য, পৃথিবী ও L2 point লাইনে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে টেলিস্কোপটি। এতে সূর্যের আলো সরাসরি সরাসরি টেলিস্কোপে পড়বে না। ফলে পৃথিবী থেকে সবসময় এর সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে। তাছাড়া টেলিস্কোপটি যেহেতু অবলোহিত বা ইনফ্রারেড রশ্মি পর্যবেক্ষণ করবে তাই এই অবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা দেবে।

জেমস ওয়েব পাঠানোর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো নতুন গ্যালাক্সির গঠন ও তার প্রক্রিয়া অনুসন্ধান, গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণবিবরের সাথে গ্যালাক্সির সম্পর্ক বিশ্লেষণ, বিভিন্ন গ্রহ পর্যবেক্ষণ ও তাদের বৈশিষ্ট্য নির্ণয়, দূরের গ্রহ থেকে আসা আলো নিরীক্ষা, মহাকাশের বায়ুমণ্ডলের উপাদান গবেষণা ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে।

এছাড়া ইতোমধ্যে কয়েক হাজার এক্সো-প্ল্যানেট বা বহিঃসৌরমণ্ডলীয় গ্রহ শনাক্ত হয়েছে এবং ক্রমেই তার সংখ্যা বাড়ছে। এই টেলিস্কোপ সেসব নক্ষত্রের গঠন, বায়ুমণ্ডলের উপাদান, পানির ও প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধান সম্পর্কিত জ্যোতির্বিজ্ঞানে বেশ কিছু অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর দেবে।

জেমস ওয়েব শুধু গ্যালাক্সির নক্ষত্র পর্যবেক্ষণই করবে না, এটি পৃথিবীর সৌরজগতও প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করবে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রহ, কুইপার বেল্ট, গ্রাহাণু, ধূমকেতু, ইত্যাদি সম্পর্কে বহু তথ্য হাতে আসবে। টেলিস্কোপটির আকার দৈর্ঘ্যে ২১ মিটার ও প্রস্থে ১৪ মিটার। উৎক্ষেপণের ২-৩ মাস পর প্রথম ছবি পাওয়ার আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। এর আয়ুষ্কাল ৫-১০ বছর।

তবে জেমস ওয়েবকে নিয়ে আরও একটি বিষয়ে উৎসাহী বিজ্ঞানীরা। সেটি হচ্ছে, হাবল বিগ ব্যাংয়ের মাত্র ৫০০ মিলিয়ন বছর আগের আলো ধরতে পেরেছে। জেমস ওয়েব হয়তো তারও আগের আলো ধরতে পারে। আর সেটি সম্ভব হলে পৃথিবী সৃষ্টির আদি রহস্য এবার সমাধান হতে চলেছে।

 

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন