ডার্ক মোড
Thursday, 08 May 2025
ePaper   
Logo
আবেগঘন পরিবেশে দেশে ফেরার প্রস্তুতি খালেদা জিয়ার

আবেগঘন পরিবেশে দেশে ফেরার প্রস্তুতি খালেদা জিয়ার

স্টাফ রিপোর্টার

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ সোমবার (লন্ডন সময় বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে) কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। তার প্রত্যাবর্তনের সব প্রস্তুতি এরইমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিত খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’ সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। নেতাকর্মীদের হাজারো ভিড়ের মধ্য দিয়ে তাকে বিমানবন্দর থেকে বাসায় পৌঁছানোর সময় অভ্যর্থনা জানানো হবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইউএনবিকে জানান, ‘তিনি মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন বলে আশা করছি।’

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি যেন না হয়

মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে যেন কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানজট সৃষ্টি না করেন। কারণ মঙ্গলবার এসএসসি পরীক্ষা রয়েছে।

তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান, যাতে সাধারণ মানুষের কোনও অসুবিধা না হয় এবং পরীক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেন।

‘কেউ যেন রাস্তায় দাঁড়াতে না পারে, পুলিশ ও ট্রাফিক কর্তৃপক্ষকে সেই ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছি,’ বলেন মির্জা ফখরুল।

ব্যাপক অভ্যর্থনার আয়োজন

খালেদা জিয়ার গাড়িবহর কাকলী রুট ধরে ফিরোজায় পৌঁছাবে। ফখরুল বলেন, ‘নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে তারা ফুটপাথে দাঁড়িয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা হাতে তাকে শুভেচ্ছা জানাবে।’

তিনি জনগণকে অনুরোধ করেন বিমানবন্দর থেকে কাকলী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে, যাতে রাস্তায় যানজট না হয়। মঙ্গলবার সকালে বিমানবন্দরে বিএনপি মহাসচিব, অন্যান্য নেতা ও খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।

বিএনপির পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়ান পর্যন্ত অবস্থান নেবে ঢাকা উত্তর সিটি ইউনিট, এরপর ছাত্রদল লে মেরিডিয়ান থেকে খিলখেত পর্যন্ত, যুবদল খিলখেত থেকে রেডিসন পর্যন্ত।

রেডিসন থেকে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত থাকবে দক্ষিণ সিটি ইউনিট, এরপর স্বেচ্ছাসেবক দল স্টেডিয়াম থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত, কৃষক দল কবরস্থান থেকে কাকলী পর্যন্ত, শ্রমিক দল কাকলী থেকে বনানী শেরাটন পর্যন্ত অবস্থান নেবে।

বনানী শেরাটন থেকে কিচেন মার্কেট পর্যন্ত থাকবে ওলামা দল, তাঁতি দল, জাসাস ও মৎস্যজীবী দল। মুক্তিযোদ্ধা দল ও অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠন থাকবেন কিচেন মার্কেট থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত, আর মহিলা দল ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা থাকবেন গুলশান অ্যাভিনিউ পর্যন্ত।

বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদেরও রুটের সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিমানবন্দর বা ফিরোজা বাসভবনে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না এবং খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে পায়ে হেঁটে বা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ থাকবে।

যাত্রা ও আগমনের সময়সূচি

বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই পুত্রবধূ—তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান—তার সঙ্গে থাকবেন। মেডিকেল টিমসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সফরে থাকবেন।

ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়া লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে লন্ডন সময় বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ১০ মিনিটে) রওনা হবেন। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির প্রেরিত বিমানে দোহায় একটি বিরতি থাকবে।

বিমানটি দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় রাত ২টা ৩০ মিনিটে পৌঁছাবে বলে জানান তিনি। তারেক রহমান নিজেই তার মাকে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছে দেবেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জাহিদ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ম্যাডাম আগের চেয়ে ভালো আছেন। আশা করি, আমরা সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারব।’

গত ৮ জানুয়ারি কাতারের আমির প্রেরিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে খালেদা জিয়া লন্ডন যান। তিনি লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিন চিকিৎসা গ্রহণ করেন এবং এরপর থেকে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।

‘ফিরোজা’ প্রস্তুত

গুলশান-২ এর হাউস ১, রোড ৮০–তে অবস্থিত ‘ফিরোজা’ বাসভবন খালেদা জিয়ার ফেরার জন্য প্রস্তুত।

বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্য সৈয়দ সায়রুল কবির খান জানান, বাড়ির সমস্ত ঘর পরিষ্কার করা হয়েছে, বাগানে ফুলের টব দিয়ে সাজানো হয়েছে, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির সংযোগ চেক করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রবেশ পথে পুলিশের নিরাপত্তা কক্ষ এবং চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)-এর সদস্যরা পালাক্রমে পাহারায় থাকবেন।’

১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন জোবাইদা রহমান

২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাসরত তারেক রহমান, ডা. জোবাইদা ও তাদের মেয়ে জাইমা রহমান। প্রায় ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন জোবাইদা।

তিনি থাকবেন তার বাবার ধানমন্ডির বাসা ‘মহবুব ভবনে’। বাসাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হলেও বাড়তি নিরাপত্তা ও আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠি দিয়ে জোবায়দার জন্য সশস্ত্র প্রহরা, পুলিশি উপস্থিতি এবং আর্চওয়ে স্ক্যানার বসানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন