আধুনিক প্রযুক্তির ইতিবাচক সেবা সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে
মোঃ জাহিদুল ইসলাম
প্রযুক্তির কল্যাণে আধুনিক জীবনে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। প্রযুক্তি এ সময়ে আমাদের সকলের জন্য যেন এক আশীর্বাদ। কেননা প্রযুক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। আধুনিক জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূণ বিষয় হলো প্রযুক্তির ইতিবাচক প্রভাব। বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি খাতে এ পরিবর্তন প্রভাব ফেলছে। যার ফলে পাল্টে যাচ্ছে উৎপাদন প্রক্রিয়া, ব্যবস্থাপনা, এমনকি রাষ্ট্র চালানোর প্রক্রিয়াও। পৃথিবীতে এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর যার জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কোনো প্রভাব নেই বা পরিবর্তন আনেনি। আমাদের সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। একসময় যোগাযোগ বলতে এক রাজ্য হতে আরেক রাজ্য দূত পাঠিয়ে খবর দিতে হতো। অতীতে যোগাযোগের জন্য অর্থাৎ চিঠি আদান-প্রদান প্রসঙ্গে কবুতরকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এরপর এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চিঠি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে উঠল ডাক বিভাগ। পরবর্তীতে টেলিগ্রাফ আর টেলিফোনের আবিষ্কার এই চিঠি আদান-প্রদান আরও সহজ করে ফেলেছিল।
বর্তমান আধুনিক যুগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) সামাজিক চাহিদা পূরণের ব্যাপার গুলোকে নিয়ে এসেছে ব্যবহারকারীদের হাতের মুঠোয়। মোবাইল ফোন, এসএমএসে এখন মনের সব কথা পৌঁছে যায় মুহূর্তেই শতসহস্র মাইল দূরে। আর স্মার্টফোন ব্যবহার তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমগুলো আরও সহজ করেছে মানুষের মাঝে মানুষের যোগাযোগের ব্যবস্থাকে। আমাদের জীবনধারা, কাজকর্ম, চিন্তাচেতনা সবকিছু বদলে যেতে শুরু করেছে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। প্রযুক্তির ইতিবাচক সেবা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ারই হচ্ছে আধুনিক বিশ্বের উন্নয়নের মূল লক্ষ্য।
প্রযুক্তির ইতিবাচক সেবা আমাদের সকলকে গ্রহণ করতে হবে। আমরা যদি প্রযুক্তির খারাপ দিকগুলোকে পরিহার করে ইতিবাচক সেবাগুলোকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারি তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরো সুন্দর এবং স্বাচ্ছন্দ জীবন লাভ করবে। প্রযুক্তির উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে বিশ্ব। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে সকল ক্ষেত্রে ইতিবাচক গতানুগতিক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে। এরই ফলশ্রুতিতে বিবর্তন ঘটছে মানুষের জীবনধারায়। মানুষের জীবন সহজ, আরামদায়ক ও নিরাপদ করতে প্রযুক্তি অবদান রাখছে বড়মাত্রায়। বর্তমানে প্রযুক্তি জীবনের মুখ্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ।
বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়তই আধুনিক প্রযুক্তির খোঁজ করে চলেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল হয়ে উঠছে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মহাবিশ্বের প্রায় সবকিছু। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির ইতিহাসে যুক্ত হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন বিশ্বায়নের ধারণায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তনে এসেছে। বর্তমান বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার যে দেশে যত বেশি এগিয়ে রয়েছে সেই দেশ তত বেশি উন্নত। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মহাকাশজুড়ে হাজার হাজার স্যাটেলাইটের পাশাপাশি সাগরের নিচের অপটিক্যাল ফাইবার মাধ্যমে ইন্টারনেটের ব্যবহার যেন সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রামে পরিণত করেছে। মানুষ এখন আগের উপায়ে অনেক কাজ না করে নতুন বিকল্প উপায় খুঁজে নিতেই পছন্দ করেন বেশি।আর এ ধারণাকেই সম্পূর্ণরূপে রূপদান করেছে আধুনিক প্রযুক্তির স্মার্টফোন।
স্মার্টফোন আসার পর বদলে গেছে অনেক কিছুই। স্বাভাবিকভাবেই স্মার্টফোনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ব্যবসা ও সেবা। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আইপড, ট্যাব, অ্যাপল, অ্যামাজন, গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুকের মোবাইল অ্যাপ, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ইউটিউব, রোবট, ড্রোন, মোবাইল ব্যাংকিং,অনলাইনে কেনাকাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এআইওটি, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম, রাইড, সর্বাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, ফিসিং প্রযুক্তিসহ বহু অভিনব প্রযুক্তি প্রতিনিয়তই যেন বিপ্লব সৃষ্টি করে চলেছে। নতুন নতুন বিনোদনের দুনিয়া যেন বদলে দিয়েছে পুরাতন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে । সময়ের পরিবর্তন ও চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন যাপন ব্যবস্থা।
আজকের উদ্ভাবনই হলো আগামীর সম্ভাবনা। আজকের তথ্য আগামী দিনের জন্য অমূল্য তথ্য ভান্ডার। তাই প্রযুক্তির সেবাকে পৌঁছে দিতে হবে সকলের কাছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের হাতের মুঠোয় ইতিবাচক সেবা পৌঁছে দিয়ে সময় ও অর্থের সাশ্রয় ঘটিয়ে একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা সম্ভব। প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারই হচ্ছে আধুনিক বিশ্বায়ন এবং অর্থনীতির উন্নয়নের মূল হাতিয়ার। ইন্টারনেটে গুগলে সন্ধান করলেই যেকোনো বিষয়ের তথ্য চাহিবা মাত্র পাওয়া যায়। কাগজের বইয়ের জায়গা দখল করে নিচ্ছে ইলেক্ট্রনিক বুক (ই-বুক)। কোন কিছু আর সনাতন পদ্ধতিতে সন্ধানের প্রয়োজন হয় না। এখন হাতের মুঠোয় গুগল, মজিলার মত অসংখ্য সার্চিং সাইট। এসকল সার্চিং সাইটে একটি শব্দ লিখে সার্চ করলে মুহূর্তেই চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয় তথ্যভান্ডার।
স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম এখন অনলাইনের আওতায় চলে এসেছে। সরকারি-বেসরকারি কর্মকান্ড, নিবন্ধন, পরীক্ষার ফল প্রকাশ, নোটিশ, চাকরি নিবন্ধন থেকে শুরু করে যেকোন বার্তা এখন অনলাই ভিত্তিক করে উঠেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার প্রতিনিয়তই বদলে দিচ্ছে পৃথিবীকে। জীবন যাপনকে অতীতের থেকে সহজ ও আরামদায়ক করছে প্রযুক্তির পরশ পাথরের ছোঁয়া। বিশেষ করে চিকিৎসায় প্রযুক্তির ব্যবহার অতীতের যে কোনো সময়ের থেকে স্বাস্থ্যসেবাকে করেছে জটিলতা ও ঝামেলামুক্ত। স্বাস্থ্যসেবায় প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক ধরনের রোগ ও উপসর্গের ব্যাপারে পাওয়া যাচ্ছে আগাম আভাস। স্বাস্থ্যসেবায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রসারের ফলে এখন রোগীরা সহজেই বিশ্বের সর্বশেষ চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিতে পারছেন।বর্তমান বিশ্বে গণমানুষের স্বাস্থ্যসেবায় প্রযুক্তি বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি কতটা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো কোভিড কালীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান।
সে সময় লকডাউনের কারণে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মানুষকে বাধ্য হয়েই ঘরেবন্দি থাকতে হয় দীর্ঘদিন। তবে প্রযুক্তির বদৌলতে ঘরে বন্দি থাকার সময় সহজেই স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ গ্রহণ সম্ভব হয় তাদের জন্য। বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ এর সহায়তায় রোগীরা ঘরে বসেই বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসা পরামর্শ লাভ করতে পেরেছেন। শুধু দেশেই নয় দেশের বাইরে থাকা চিকিৎসকদের থেকেও পরামর্শ গ্রহণ করতে পারছেন রোগীরা । এর মাধ্যমে রোগ ও আরোগ্যের উপায় সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে ও বুঝতে পারছেন রোগীরা। এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এক দেশের চিকিৎসকরা আরেক দেশে অবস্থানরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের থেকে অস্ত্রোপচারের সময় প্রয়োজনীয় পরামর্শও গ্রহণ করতে পারছেন।
আধুনিক যান্ত্রিক প্রযুক্তির ছোঁয়া বদলে দিয়েছে কৃষিকে। জমি কর্ষণ থেকে ফসল লাগানো, ফলানো, কাটা, বাজারে আনা পর্যন্ত সব কিছু করছে এখন প্রযুক্তি দ্বারা আবিষ্কৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র। ড্রোন প্রযুক্তি সেবা দুর্গম স্থানে যোগাযোগের জন্য এনেছে বিপ্লব। দুর্গম এলাকায় যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিচ্ছে ড্রোন প্রযুক্তি। বর্তমানে জেলেরা সাগরে মাছ ধরছে আধুনিক প্রযুক্তিতে। অনলাইনে ইন্টারনেট লাইব্রেরীতে রয়েছে গোটা পৃথিবীর আদ্যপান্ত। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির জোয়ারে ভাসছে আজকের প্রজন্ম। প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে হাতে হাতে অপার প্রযুক্তির সৃষ্টির সম্ভার। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানী জীবনের সবকিছু চলছে প্রযুক্তির হাত ধরে। স্কুলশিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক পর্যন্ত সবার জীবন বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও দিন দিন বাড়ছে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। আগে অজপাড়া গাঁ বলতে যা বুঝানো হতো তা এখন আর দেখা যায় না গ্রামাঞ্চলে। ঘরে ঘরে আজ প্রযুক্তির ছোঁয়া। আগামী বছরগুলোতে এই গতি আরও বাড়বে। তখন পৃথিবীর চেহারা বদলে যাবে। আরও আধুনিকতম প্রযুক্তির ব্যবহার জীবনাচারে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে। অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে প্রযুক্তির সম্প্রসারণ হচ্ছে ব্যাপক হারে।
লেখক, নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।