ডার্ক মোড
Tuesday, 23 September 2025
ePaper   
Logo
অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ নির্বাচন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সময় সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত বিশেষ দূত সার্জিও গোরের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বলেন প্রধান উপদেষ্টা।

সার্জিও গোর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন ও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এ প্রচেষ্টায় সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে আশ্বাস দেন।

বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা, সার্কের পুনরুজ্জীবন, রোহিঙ্গা সংকট এবং ঢাকাকে লক্ষ্য করে বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিস্তার-সহ বিস্তৃত দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাসরত দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। এর জবাবে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের জীবনরক্ষাকারী সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

ড. ইউনূস বলেন, সার্ক পুনরুজ্জীবনে তৎপরতা জোরদার করেছে অন্তর্বর্তী সরকার, যা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ আসিয়ানে যোগদানে আগ্রহী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা।

এ ছাড়া নেপাল, ভুটান ও ভারতের সাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে পারলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও দ্রুত হবে।

বৈঠক শেষে সার্জিও গোরকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান তিনি।

এর আগে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে সোমবার দুপুরে (নিউইয়র্ক সময়) এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম.

সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা থেকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেন। এ ছাড়া জামায়াত নেতা নকিবুর রহমান তারেক যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলে যুক্ত হন।

এ ছাড়া প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জ্বালানি উপদেষ্টা এম ফাওজুল কবির খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার প্রধান সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম ও প্রেসসচিব শফিকুল আলম।

 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা।

সোমবার সন্ধ্যায় তিনি 'সামাজিক ব্যবসা, যুব ও প্রযুক্তি' শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বৈশ্বিক সামাজিক ব্যবসা কমিটি আয়োজন করবে। এ ছাড়া তিনি এসডিজি ডিনার ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানেও অংশ নেবেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক (ইউএনজিএ) (২৩-২৭ ও ২৯ সেপ্টেম্বর) চলাকালে বিশ্বনেতারা তাদের অবস্থান ও অগ্রাধিকার তুলে ধরবেন। প্রধান উপদেষ্টা ২৬ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করবে।

রাজনৈতিক নেতাদের অন্তর্ভুক্তি

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধি দলে রাজনৈতিক নেতাদের অন্তর্ভুক্তি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি বিশ্বের সামনে জাতীয় ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক মতপার্থক্য অতিক্রম করে সম্পর্ক জোরদারের সুযোগ তৈরি করবে।

তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার কথা। এমন সময়ে এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বহুমাত্রিক বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে এ মঞ্চ বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধির সুযোগ করে দিতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

ইউএনজিএ-পরবর্তী রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক প্লেনারি অধিবেশনে নেতাদের সরাসরি উপস্থিতি নীতিগত ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশি ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক দেশের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থার জন্য মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিতে পারে বলে উল্লেখ করেন আবুল কালাম আজাদ।

প্রধান উপদেষ্টা আগামী ২ অক্টোবর দেশে ফিরবেন।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন