ডার্ক মোড
Friday, 22 November 2024
ePaper   
Logo
২০২৩ : অভিবাসীদের জন্য দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বছর

২০২৩ : অভিবাসীদের জন্য দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বছর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এক দশকের হিসাবে ২০২৩ সালকে অভিবাসীদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ বছর হিসাবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। ওই বছর সারা বিশ্বের অভিবাসন রুটে মারা গেছেন অন্তত আট হাজার ৫৬৫ জন অভিবাসী। বুধবার এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে ২০২৩ সালকে অভিবাসন ইস্যুতে ভয়াবহ বছর হিসাবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম এক বিবৃতিতে বলেছে, ‌‌‘‘২০২৩ সালে অভিবাসন রুটে অভিবাসীদের মৃত্যুর হার তার আগের বছরের তুলনায় অন্তত ২০ ভাগ বেড়েছে।’’ অভিবাসন রুটে প্রাণহানি ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

২০২৩ সালে অভিবাসন রুটে অভিবাসী মৃত্যুর সংখ্যার ২০১৬ সালের রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গেছে। আইওএম জানিয়েছে, ২০১৬ সালে অভিবাসন রুটে মারা গেছেন আট হাজার ৮৪ জন মানুষ। আর ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাস শেষ না হতেই অভিবাসন রুটে ৫১২ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।

আইওএম বলেছে, নিরাপদ এবং নিয়মিত অভিবাসনের পথ সীমিত থাকার কারণে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে অনিয়মিত পথে অভিবাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অভিবাসন রুটের মধ্যে সবচেয়ে মারত্মক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে ভূমধ্যসাগরকে। উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া ও তিউনিশিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ইউরোপের দক্ষিণে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।

২০২৩ সালে এই পথে অন্তত তিন হাজার ১২৯ মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানিয়েছে আইওএম। আর ২০১৭ সাল থেকে হিসাবে নিলে এই অভিবাসন রুটে ২০২৩ সালেই সর্বোচ্চসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন।

গত বছরের জুনে গ্রিস উপকূলে ভূমধ্যসাগরের সবচেয়ে গভীর অংশে ‘আদ্রিয়ানা’ নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবেই মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন ছয়শ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী।

আইওএম বলেছে, ২০২৩ সালে আফ্রিকা অঞ্চলের এক হাজার ৮৬৬ জন এবং এশিয়া অঞ্চলে দুই হাজার ১৩৮ জন অভিবাসীর মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। আফ্রিকান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশিরভাগ মারা গেছেন সাহারা মরুভূমিতে এবং স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্রপথে। সংস্থাটি বলেছে, ২০২৩ সালে অভিবাসন রুটে মারা যাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অর্ধেকেরও বেশি মারা গেছেন পানিতে ডুবে। ৯ শতাংশ মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায় এবং সাত শতাংশ মারা গেছেন সহিংসতার শিকার হয়ে।

সংস্থাটির উপ মহাপরিচালক উগোচি ড্যানিয়েলস বলেছেন, ‘‘প্রতিটি মৃত্যু একেকটি ভয়ানক মানবিক ট্র্যাজেডি, যা আগামী দিনগুলোতেও পরিবার এবং সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করবে।’’

২০১৪ সালে অভিবাসীদের মৃত্যু ও নিখোঁজ সম্পর্কিত একটি ওপেন-অ্যাক্সেস ডেটাবেস হিসাবে ‘মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্ট’ তৈরি করে আইওএম। প্রকল্পটি বিশ্বজুড়ে ৬৩ হাজার ৮৭২টি ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।

তথ্য সংগ্রহের চ্যালেঞ্জের কারণে প্রকৃত ঘটনা আরো অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়। বিশেষ করে পানামার ডারিয়েন গ্যাপ বনের মতো দূরবর্তী অবস্থান এবং সমুদ্রপথ, যেখানে নৌকাগুলো কোনো চিহ্ন ছাড়াই অদৃশ্য হয়ে যায়— সেখানকার প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা বেশ কঠিন।

মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্ট অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে অভিবাসনের সময় প্রাণ হারিয়েছেন এমন ২৬ হাজার ৫৩৩ জনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়নি। ড্যানিয়েলস বলেন, ‘‘মিসিং মাইগ্রেন্টস প্রজেক্ট থেকে পাওয়া এই ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান আমাদের দেখিয়েছে যে, বৃহত্তর পদক্ষেপের জন্য আমাদের আবারো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে; যাতে সবার জন্য নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত হয়। তাহলে এখন থেকে ১০ বছর পর মানুষ উন্নত জীবনের সন্ধানে আর জীবনের ঝুঁকি নিতে অনিয়মিত অভিবাসনের পথে পা বাড়াবে না।’’

অভিবাসন রুটে প্রাণহানি ঠেকাতে এবং সব ব্যক্তির মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করতে দেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে আইওএম। ইনফোমাইগ্রেন্টস।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন