
স্ত্রীর ‘চড় থাপ্পড়’ খেলেন, না মজা করলেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ!
বিশ্ব ডেস্ক
বিদেশের মাটিতে ফরাসি ফার্স্ট লেডি ব্রিজিটের আক্রমণের শিকার হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পরে সোমবার অবশ্য ঘটনাটির ব্যাখ্যা দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। বলেছেন, তারা মজা করছিলেন।
চলতি সপ্তাহে তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সফর শুরু করে ভিয়েতনামে বিমান থেকে নামার সময় ঘটনাটি ঘটে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্ত্রী ব্রিজিট দুই হাত দিয়ে ম্যাক্রোঁর মুখ ধরে ধাক্কা দিচ্ছেন, ম্যাক্রোঁ মুখ সরিয়ে নিচ্ছেন। আর মুহূর্তেই ফ্রান্সের খবরের শিরোনাম হয়ে যায় এটি। বিমানের খোলা দরজায় ধারণা করা ওই ভিডিওতে গণমাধ্যম প্রযু্ক্তি ব্যবহার করে বোঝার চেষ্টা করছিল যে, তারা আসলে কথোপকথন করছিলেন।
ঘটনাটি নিয়ে দৈনিক লে প্যারিসিয়েন সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ছিল ‘থাপ্পড় না ঝগড়া’? ভিয়েতনামে ম্যাক্রোঁ ও তার স্ত্রী ব্রিজিটের বিমান থেকে নামার ওই ঘটনার ছবিটি ব্যাপক মন্তব্য কুড়ায়।
ম্যাক্রোঁ পরে সাংবাদিকদের বলেন, তারা ২০০৭ সালে বিয়ে করেছেন। যে স্কুলে তারা পরিচিত হয়েছিলেন তারা সেখানে শিক্ষিকা ও ছাত্র ছিলেন। তারা কেবল মজার ছলে ঠাট্টা-মশকরা করছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ঝগড়া করিনি, মজা করেছি।’ ঘটনাটিকে এক ধরনের অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
রবিবার (২৫ মে) ভিয়েতনামের হ্যানয়ে ম্যাক্রোঁ দম্পতি অবতরণের সময় ভিডিও করে মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। এতে দেখা যায়, ইউনিফর্ম পড়া এক ব্যক্তি বিমানের দরজা খুলছেন। এসময় প্রেসিডেন্ট ভিতরে দাঁড়িয়ে আছেন এবং একজনের সঙ্গে কথা বলছেন, যাকে বিমানের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না।
একসময় লাল রঙের পোশাক পড়া দুটি হাত ম্যাক্রোঁকে ধাক্কা দিচ্ছেন। একটি হাত তার চোয়ালের উপর এবং আরেকটি হাত তার মুখ ও নাকের কিছু অংশ চেপে ধরল। এসময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার মাথা ঘুড়িয়ে পেছনে সরে যান। তিনি ক্যামেরার সামনে আছেন এমনটি বুঝতে পেরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি হেসে একটু হাত নাড়ান।
এরপর লাল জ্যাকেট পড়া স্ত্রীকে নিয়ে বিমানের সিঁড়িতে আসেন ম্যাক্রোঁ। তিনি স্ত্রীর দিকে একটি হাত বাড়িয়ে দিলেও সাড়া পাননি। তারা সিঁড়ি দিয়ে পাশাপাশি হেঁটে নেমে আসেন।
ফরাসি নেতা যুক্তি দেন যে, সামাজিক মাধ্যমের এই যুগে ছড়িয়ে পড়া তাদের ছবি ও মন্তব্যগুলো বিভ্রান্তিকর তথ্য সম্পর্কে একটি সতর্কতামূলক গল্পকে তুলে ধরে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি ভিডিও ছড়ানো হয়েছে, যেখানে জার্মানির নেতাদের সঙ্গে তিনি কোকেন গ্রহণ করছেন—এমন একটি গল্প সাজানো হয়েছে, যা আসলে ভুয়া। সেসময় কেবল একটি টিস্যু নিচ্ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের সঙ্গে করমর্দন করছিলেন এবং ঝাঁকুনি দিচ্ছিলেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সকলকে শান্ত’ হওয়া উচিৎ। তার কার্যালয়ও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়াগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি।
ম্যাক্রোঁর অফিস জানিয়েছে, ‘এটি ছিল একটি মুহূর্ত, যখন প্রেসিডেন্ট এবং তার স্ত্রী যাত্রা শুরুর আগে শেষবারের মতো নির্ভার হচ্ছিলেন মজার ছলে সময় কাটিয়ে। এটি ছিল এক ধরনের সহমর্মিতার মুহূর্ত। ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে এটাই ছিল কেবল অস্ত্র।’
স্কুলে শিক্ষিকা ব্রিজিট অজিয়ে নামে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলেন। সেসময় তিনি বিবাহিত ও তিন সন্তানের মা ছিলেন। এই শিক্ষিকা একটি নাট্যক্লাবের তত্ত্বাবধান করতেন। আর সাহিত্যপ্রেমী ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই ক্লাবেরই একজন সদস্য ছিলেন।
তবে ম্যাক্রোঁ স্কুল জীবনের শেষ বর্ষে ব্রিজিটকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্যারিসে চলে যান। পরে ব্রিজিট তার স্বামীকে তালাক দিয়ে ম্যাক্রোঁর সঙ্গী হতে প্যারিসে পাড়ি জমান এবং বিয়ে করেন।