ডার্ক মোড
Monday, 13 October 2025
ePaper   
Logo
সিলেটবাসীর দুঃস্বপ্ন ঢাকা যাত্রা: উত্তপ্ত সিলেট, ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে রাজপথ

সিলেটবাসীর দুঃস্বপ্ন ঢাকা যাত্রা: উত্তপ্ত সিলেট, ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে রাজপথ

 
 
লোকমান আহমদ
ঢাকা যাওয়া যেন এখন সিলেটবাসীর কপালে এক দুঃস্বপ্নের নাম। ট্রেনের টিকিট মেলা দুষ্কর, সড়কপথে যানজট—আর আকাশপথে ভাড়ার লাগামহীন উল্লম্ফনে সাধারণ মানুষ আজ চরম ভোগান্তির শিকার। এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা সিলেট। রাজপথে নেমেছে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী, ছাত্র সমাজ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এখন এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগের নাম। ৬ লেনের কাজ চলছে বছরের পর বছর ধরে, কিন্তু অগ্রগতি নেই বললেই চলে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। যে পথ একসময় ৬ ঘণ্টায় পাড়ি দেওয়া যেত, এখন তা ১০-২৪ ঘণ্টা সময় নিচ্ছে। এই দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন সম্প্রতি মহাসড়ক পরিদর্শনে আসা যোগাযোগ উপদেষ্টা ফাওজুল করিমও—যিনি শেষ পর্যন্ত মোটরসাইকেলে গন্তব্যে পৌঁছান।
ঢাকা-সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে, গড়ে আসন সংখ্যা মাত্র ৬৫০। অথচ এই রুটে টিকিট চাহিদা প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি। ফলে ট্রেনের টিকিট পাওয়া এখন সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। সিলেট রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম বলেন, স্পেশাল ট্রেন চালুর জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু ইঞ্জিন সংকটে অনুমোদন মেলেনি। এক্সট্রা বগি লাগিয়ে কোনোভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু তাতেও চাপ সামলানো যাচ্ছে না।
আকাশপথও সিলেটবাসীর নাগালের বাইরে চলে গেছে। সম্প্রতি সিলেট-ঢাকা রুটের বিমানের টিকিট মূল্য ১০-১২ হাজার টাকায় পৌঁছেছে, যা ঢাকা-কলকাতা রুটের চেয়েও বেশি। এতে মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের পক্ষে এই রুটে যাতায়াত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এই অব্যবস্থা ও অবহেলার বিরুদ্ধে এবার রাজপথে নেমেছেন সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। আজ সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে সমন্বিত প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন তিনি।
শনিবার সকাল থেকে তিনি শহরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রচারপত্র বিতরণ করেন। এতে সিলেটের সড়ক, রেল ও আকাশপথে চলমান অব্যবস্থা তুলে ধরা হয়।
আরিফুল হক জানান, আজ সকাল ১১টায় এক ঘণ্টার জন্য নগরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যান চলাচল বন্ধ থাকবে। সরকারকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দেওয়া হবে-এর মধ্যে কোনো পদক্ষেপ না এলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সিলেটের উন্নয়নবঞ্চনার বিরুদ্ধে এক ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ শুরু করেছেন যুবক আব্দুল্লাহ মামুন সুজন। ‘সিলেটের সঙ্গে বৈষম্য কেন?’-এই প্রশ্নকে সামনে রেখে তিনি বৃহস্পতিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।
সুজনের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সামাজিক সংগঠন।
সুজনের ৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে: সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ৬ লেনের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে, রেলপথে নতুন ট্রেন ও ডাবল লাইন নির্মাণ, বিমানের ভাড়া কমানো ও ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, সিলেট বিমানবন্দরের উন্নয়ন, পর্যটন খাতের জন্য বিশেষ বাজেট, সিলেটের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ঘোষণা, ছাত্র-জনতার মিছিলে রাজপথ কাঁপছে, আশ্বাসহীন প্রশাসন।
সুজনের একক প্রতিবাদ এখন আর এককের মধ্যে নেই। সিলেটের প্রতিটি অঞ্চলে চলছে মিছিল, মানববন্ধন, গণসংযোগ।
শনিবার বিকেলে শহীদ মিনারে রেভিটা বাংলাদেশের সমাবেশে নেতারা বলেন, সিলেটবাসীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকবো।
একই সময়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ চৌহাট্টা মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তারা জানায়, সুজনের অনশন আমাদের ঘুম ভেঙেছে। এ লড়াই পুরো সিলেটের।
তবে আন্দোলনের তৃতীয় দিনেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসেনি কোনো আশ্বাস বা কার্যকর পদক্ষেপ। এতে জনমনে ক্ষোভ আরও বাড়ছে। জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সোমবার মহাসড়কে গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকায় অবস্থানরত জামায়াত নেতারা যোগাযোগ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে মহাসড়কের কাজ দ্রুত শেষ ও ট্রেনে বগি বৃদ্ধির দাবি জানান।
সিলেটবাসী এবার আর শুধু কথায় সীমাবদ্ধ নয়। দল-মত নির্বিশেষে তারা রাজপথে। একদিকে নীরব অনশন, অন্যদিকে রাজপথে জনতার মিছিল-এই আন্দোলন এখন সিলেটের স্বার্থে এক বৃহৎ প্রতিবাদের রূপ নিচ্ছে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন