ডার্ক মোড
Tuesday, 07 October 2025
ePaper   
Logo
শিক্ষার্থীদের কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে: অধ‌্যাপক ইউনূস

শিক্ষার্থীদের কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে: অধ‌্যাপক ইউনূস

আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেনপ্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে এশিয়া সোসাইটি ও এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘এ ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক অর্থনীতিতে সবাই উপকৃত হয়। তাই আমি বলেছি, আমাদের আঞ্চলিক অর্থনীতির কথা ভাবা উচিত। এটাই আমাদের করা উচিত। কিন্তু বর্তমানে আমাদের ভারতীয়দের সঙ্গে সমস্যা হচ্ছে, কারণ তারা শিক্ষার্থীদের কার্যকলাপ পছন্দ করছে না।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও তরুণদের মৃত্যুর জন্য দায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। এটি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে উত্তেজনাপূর্ণ করেছে। পাশাপাশি ভারত থেকে অনেক মিথ্যা খবরও ছড়ানো হয়েছে যা খুবই খারাপ বিষয়।

ভারতের সংবাদমাধ্যমে ইসলামি আন্দোলনের ভুয়া খবরের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে অধ‌্যাপক ইউনূস বলেন, এসবের সঙ্গে তালেবানের প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত খবর যুক্ত করা হয়েছে। ‘এমনকি তারা বলেছে, আমি নিজেও নাকি তালেবান। আমার দাড়ি নেই, বাড়িতে রেখে এসেছি,’ মজার ছ‌লে ব‌লেন তিনি।

এ সময় সার্কসহ আঞ্চলিক সংস্থার গুরুত্বও তুলে ধরেন তি‌নি। আঞ্চলিক অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এই অর্থনী‌তি‌বিদ বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেশও আপনার অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে। এটাই সার্কের ধারণা।’

সার্ক সম্পর্কে প্রধান উপ‌দেষ্টা বলেন, ‘সার্কের পুরো ধারণা বাংলাদেশে জন্মেছে এবং বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের রাজধানীতে এই ধারণা প্রচার করেছে। সার্ক একটি পরিবারের মতো, যার মূল ভাবনা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একত্রিত করা। তরুণরা যেন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, শিক্ষা ও ব্যবসায় অংশগ্রহণ করতে পারে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একে অপরের দেশে সফর করা, বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়াশোনা করা এবং দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তি‌নি বলেন, ‘এটাই মূল ধারণা। তবে কিছুকাল আগে এটি কোনো এক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খায়নি। তাই আমরা এটিকে স্থগিত করতে বাধ্য হই। আমরা দুঃখিত, এবং সবাইকে আবারও একত্রিত করতে চাই। এটাই আমাদের সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ।’

'আমি বলেছিলাম, প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন নেপাল, ভুটান, এবং ভারতের সাতটি রাজ্যের কথাও ভাবুন। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সাতটি রাজ্য রয়েছে, যাদের সমুদ্র সংযোগ নেই। এগুলো ল্যান্ডলকড অঞ্চল।’

আসিয়ানের বর্তমান চেয়ার মালয়েশিয়া। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সমঝোতায় আসা সহজ নয়, বিশেষ করে মায়ানমার, যাদের রোহিঙ্গা বিষয়ক সমস্যা রয়েছে, উল্লেখ করেন অধ‌্যাপক ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘তারা হয়তো এগিয়ে আসবে না, তবে আমরা কাজ চা‌লি‌য়ে যাব। আমরা মনে করি না, এটি মিয়াননমার ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থায়ী দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে। আমাদের তা করার দরকার নেই। তাই সব সমস্যা সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গারা চাইলে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে, তাদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও পেশায় ফিরে যেতে পারবে।’

তি‌নি আরও বলেন, ‘আমাদের মিয়ানমারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকবে। একে অপরের সঙ্গে বিরোধ করা কারো জন্যই উপকারী নয়। তাই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিকভাবে আসিয়ানের সদস্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

অধ‌্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এটা করতে পারি। আসিয়ান একটি ভালো প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আঞ্চলিক সমন্বয় ও আন্তঃসংযোগ গড়ে তোলা সম্ভব।’

একটি পৃথক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জানান, দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার।

এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন