ডার্ক মোড
Monday, 17 March 2025
ePaper   
Logo
লাকসামে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ভুয়া মিডিয়াকর্মীরা

লাকসামে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ভুয়া মিডিয়াকর্মীরা

কুমিল্লা দক্ষিণ প্রতিনিধি

কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের বৃহত্তর লাকসাম উপজেলার সর্বত্র তথাকথিত ভুয়া মিডিয়াকর্মীদের দৌরাত্ম্য ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। টাকার বিনিময়ে কুখ্যাত-অখ্যাত পত্রিকার পরিচয়পত্র ও কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন মহলে ধান্দাবাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানী করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়া বিশেষ বিশেষ দিনে সাংবাদিকদের তালিকা নিয়ে অবাধ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ওইসব ভুয়া মিডিয়াকর্মীদের স্থানীয় প্রশাসনসহ রাজনৈতিক পরিমন্ডলে কদর অনেকটা বেশি।

জেলা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলাগুলোর মিডিয়াপাড়ার একাধিক সূত্র জানায়, এ অঞ্চলের সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেই পত্রিকার হকার হওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও বড় বড় সাংবাদিক বনে গেছেন! নিজেরা সংবাদ লেখা বা তৈরি করতে না পারলেও অন্যের লেখা কিংবা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ চুরি করে নিজের নামের লেখা বলে চালিয়ে বিভিন্ন মহলের সাথে প্রতারণা করছেন। স্থানীয়ভাবে বেশ ক’টি পত্রিকা প্রকাশিত হলেও অনেক পত্রিকার পরিচয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ৫/৬ জনের উপস্থিতি সিনিয়র ও প্রকৃত সাংবাদিকদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। জেলা দক্ষিনাঞ্চলের সবকটি উপজেলায় ভুয়া সাংবাদিকদের একটি চক্র উপজেলা, পৌরসভা ও থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে তদ্বির বাণিজ্যের সাথে জড়িত কিংবা কোন রাজনৈতিক নেতার তোষামোদকারী ও চাটুকার হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত রয়েছেন।

সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেশিরভাগ সভা-সমাবেশেই অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এদের বেশিরভাগই ভুয়া। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দানকারী এসব ব্যক্তিদের কোন সংবাদ কোন্ পত্রিকায় ছাপা হবে বা হচ্ছে কি-না? তার কোন জবাব কেউ দিতে পারছে না। এছাড়া এ অঞ্চলে ইউটিউব ফেইস, অনলাইন পোটাল, ফেইসবুক ফেইস খুলে নিজেদেরকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রতারনা করছেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষদের। অপরদিকে অনেক মিডিয়াকর্মী পরিচয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামে গিয়ে লাইভ শো করে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারনার মাধমে অনেক অর্থ এবং কোন কোন অনুষ্ঠানে জেলা সদরের তথাকথিত মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়।

স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের একাধিক সূত্র জানায়, দলীয় অনেক লোক নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এ সাংবাদিকতা পেশায় নাম লিখিয়েছেন। বিভিন্ন প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে গিয়ে প্রকৃত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে নিজেদেরকে অখ্যাত থেকে বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপিত করে ধান্ধাবাজির টিকেট নিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে অন্যের প্রেরিত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন পত্রিকা সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্টদের টেবিলে টেবিলে পৌঁছে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন নগদ অর্থ। কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের সবকটি উপজেলায় প্রেসক্লাব, সাংবাদিক সমিতি, সাংবাদিক ইউনিয়ন ও রিপোর্টার ক্লাব নামে সিনিয়র সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন থাকলেও এর বাইরেও রয়েছে আরো অর্ধশতাধিক সাংবাদিক।

উপজেলাগুলোতে অবৈধ ও ভুয়া সাংবাদিকদের অপতৎপরতার ফলে অনেক সিনিয়র সাংবাদিক এ মহৎ পেশা ছেড়ে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। অনেকেই আবার এ পেশা থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। এলাকার জনমনে নানা প্রশ্ন- সাংবাদিকদের অনেকেই ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী। কিন্তু যাদের একেবারেই কোনো ব্যবসা কিংবা চাকরি নেই, পত্রিকা কর্তৃপক্ষ থেকেও কোন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না, ওই সকল তথাকথিত সাংবাদিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে কিভাবে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে শান-শওকতে থাকেন!

এ ব্যাপারে প্রশাসনিক খোঁজ-খবর নেয়া অত্যাবশ্যক বলে অনেকের অভিমত। জেলা দক্ষিনাঞ্চলের মিডিয়া পাড়ার একাধিক সূত্র আরও জানায়, এ অঞ্চলে অনেক প্রকৃত ও সিনিয়র সাংবাদিক রয়েছেন। কিন্তু তথাকথিত সাংবাদিকদের ব্যাপারে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতারা অনেকটা নিশ্চুপ। সাংবাদিকদের দেশ-জাতির বিবেক হিসেবে গণ্য করা হলেও বর্তমানে তথাকথিত মিডিয়াকর্মীদের অপকর্মের কারনে এ অঞ্চলের সৎ সাংবাদিকতা পেশার নিজস্ব ঐতিহ্য হারানোর উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয়ভাবে নীতিমালা থাকলেও প্রয়োগ নেই। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর এ ব্যাপারে দেশব্যাপী ওইসব তথাকথিত মিডিয়াকর্মীদের ব্যাপারে কার্যকরী প্রদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অপরদিকে মানবাধিকার কর্মীসহ একাধিক সংগঠনের পরিচয়ে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে কেউ কেউ।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন