ডার্ক মোড
Wednesday, 30 July 2025
ePaper   
Logo
মুখোশ বদলালেই কি সিস্টেম বদলায়

মুখোশ বদলালেই কি সিস্টেম বদলায়


ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিক

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘সংস্কার’ শব্দটি আজ যেন এক রহস্যময় আড়াল। সরকার কিংবা ক্ষমতাসীনদের মুখ থেকে ‘সংস্কার’ শোনার সঙ্গে সঙ্গে জনগণের প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। কিন্তু কি সত্যিই সংস্কার হচ্ছে? নাকি এটি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কৌশল?

২০২৫ সালের বাস্তবতা আমাদের দেখায়—সংস্কারের নামে আজ শুধু ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস চলছে। পরিবর্তনের ছদ্মবেশে লুকিয়ে আছে পুরনো মনোভাব, পুরনো স্বার্থ ও একই ধরনের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। উন্নয়নের মুখোশ পরে আমরা দেখে যাচ্ছি এক রাজনীতির নাটক, যেখানে আসল ‘সিস্টেম’ থেকে কিছুই বদলায়নি।

সংস্কারের নামে গড়ে উঠছে নতুন নতুন পদ, নতুন কমিটি; যার কাজ মূলত বিরোধীশক্তিকে চেপে ধরা আর জনগণের মৌলিক অধিকার সীমাবদ্ধ করা। যেখানে প্রশ্ন তোলা মানেই ‘দেশদ্রোহী’ বা ‘শত্রু’ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বদলে আমরা পেয়েছি একটি ‘রাজনৈতিক মনোরঞ্জন’, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও, বাস্তবে দেখা যায় আইন প্রয়োগে পক্ষপাতিত্ব, ক্ষমতাধরদের জন্য সুবিধা আর সাধারণ মানুষের জন্য অন্যায়। যখন বিরোধী মত প্রকাশ করার অধিকার সীমিত, তখন ‘সংস্কার’ হয়ে ওঠে ক্ষমতার একমাত্র হাতিয়ার।

এখন ‘সংস্কার ’ শব্দটিও যে শুধু ভোটের জন্য সাজানো একটি প্রপাগান্ডা তা জনসাধারণের চোখে স্পষ্ট। সংস্কারের নামে নতুন নতুন কমিটি , নতুন নতুন বন্দোবস্তো ,নতুন নতুন কাহিনীর খবর মিডিয়ায় ভেসে ওঠে, কিন্তু স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা এখনো চোখে দেখা যায়নি। সরকার সংস্কার করবে বললেও নাগরিক জীবনের বাস্তবতা অনেক দুরবস্থার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকৃত সংস্কার তখনই সম্ভব যখন ক্ষমতার প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হয়। যেখানে রাষ্ট্রক্ষমতা জনগণের হাতে থাকবে, আর জনগণ হবে ক্ষমতার আসল ধারক। আজকের বাস্তবতা থেকে এটা খুব দূরের কথা মনে হয়।

‘সংস্কার’ বললে আমরা বুঝি—নতুন আইনি কাঠামো, অধিক স্বচ্ছতা, ক্ষমতার নিরপেক্ষ ব্যবহার। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থায় এটি যেন একটি বেনামী ছদ্মবেশ, যা শুধু বিদ্যমান ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে ব্যবহৃত হয়।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের খেলা আজ খুবই সূক্ষ্ম। এটি অজান্তেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গণতন্ত্রের আসল অর্থ ‘বিচারযোগ্যতা’ ও ‘স্বাধীন মতপ্রকাশ’ নয় কি? কিন্তু আজকে যা দেখা যায় তা হচ্ছে স্বৈরাচারী প্রবণতা ও একক ক্ষমতার ঘাটতি।

আমাদের সামনে প্রশ্ন থেকে যায়—সংস্কার কি সত্যিই সম্ভব, নাকি এটি কেবল ক্ষমতার খেলা? মুখোশ বদলালেই কি সিস্টেম বদলায়? অবশ্যই না।

সত্যিকারের পরিবর্তন হলে সে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করবে। উন্নয়ন হবে সমান অধিকার এবং স্বচ্ছ প্রশাসনের ভিত্তিতে। তখনই আমরা বলতে পারব—সংস্কার এসেছে।

অতএব, জনজীবনের উন্নতি চাইলে মুখোশ পরিয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পরিবর্তে সৎ ও স্বচ্ছ প্রশাসন নিশ্চিত করতে হবে। শুধু ‘সংস্কার’ বলে নয়, সিস্টেমের গভীর পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন মুখোশের বদলে আসল পরিবর্তন চাই—যা নিশ্চিত করবে জনগণের সমৃদ্ধি, ন্যায্যতা ও স্বাধীনতা।


রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজচিন্তক
ইমেইল - fokoruddincse@gmail.com

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন