ফেনীতে এসপির রোষানলের শিকার সাংবাদিক এখনও ডজন মামলার ঘানি টানছে
ফেনী প্রতিনিধি
বহুল আলোচিত ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভুমিকা ও অপরাধ মূলক সিন্ডিকেট নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তৎকালীন ফ্যাসিবাদী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকারের রোষানলের শিকার সাংবাদিক মাঈন উদ্দিন পাটোয়ারী এখনও ডজন মামলার ঘানি টানছেন।উচ্চ আদালত থেকে সবকটি মামলায় জামিন লাভের পর নিম্ন আদালত থেকে ফের জামিন পেয়ে ২০১৯ সাল থেকে এ যাবত পর্যন্ত সপ্তাহে অন্তত ৪/৫ দিন এসব মামলায় আদালতে হাজির হতে হচ্ছে।এতে করে সাংবাদিকের আর্থিক, মানসিক তথা স্বাভাবিক জীবন বিপন্নের পথে।
সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হন সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। ওইদিনই স্থানীয় জনতা অধ্যক্ষকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় রাফির মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা প্রত্যাহার করতে হুমকি-ধমকি দেন অধ্যক্ষের সহযোগিরা। একপর্যায়ে ৬ এপ্রিল পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে মাদরাসার ছাদে নুসরাত জাহান রাফির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে। ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজসহ কয়েকজনকে আসামী করতে এসপি-ওসি তালবাহানা করেন বলে রাফীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠে।পুলিশ কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের পর ঘটনায় জড়িতরা একে একে গ্রেফতার হতে থাকে।এরপর ১৯ এপ্রিল দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকায় "ঢেলে সাজানো হবে ফেনীর পুলিশকে" শিরোনামে এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার, সোনাগাজী থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন,জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি রাশেদ খান চৌধুরী, ফেনী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ ও ডিএসবির ডিআইওয়ান মো: শাহীনুজ্জানসহ জেলার পুলিশ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানি সংবাদ প্রকাশিত হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদর দপ্তরের আদেশে এসপি ও ওসিসহ সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার-বদলির আদেশ দেওয়া হয়।
জানা যায়, এসপি জাহাঙ্গীর ফেনী ছাড়ার আগেই কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।এ সময় তাকেসহ পুলিশ সিন্ডিকেট নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিককে হেনস্থা করার পরিকল্পনা নেন।এসময় মাঈন উদ্দিন পাটোয়ারীর নাম সংবলিত একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের ধরিয়ে দেন। বিভিন্ন তদন্তাধীন রাজনৈতিক ও গায়েবী মামলায় সাংবাদিকের নাম চার্জশীটে অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশ দেন।পরে জরুরি ভিত্তিতে ওসিদের ডেকে চাপ প্রয়োগ করে ৪ থানার মামলার চার্জশীট তৈরি করান এবং পরদিন তা আদালতে দাখিলে বাধ্য করেন। এমনকি বিষয়টি গোপন রাখতেও কোর্ট পরিদর্শকসহ অন্যদের নির্দেশ দেন এসপি জাহাঙ্গীর সরকার। পরে বিষয়টি ফাঁস হলে ফেনীতে কর্মরত সাংবাদিক ও সচেতন মহলে ক্ষোভ-অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সাংবাদিকদের মানববন্ধন, নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে।
তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার ফেনী জেলা প্রতিনিধি ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ফেনীর কথা ডটকমের সম্পাদক মাঈন উদ্দিন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় ৩, সোনাগাজী মডেল থানায় ৪, দাগনভূঞা থানায় ৪ ও ছাগলনাইয়া থানায় ২টিসহ মোট ১৩ টি মামলার চার্জশীটে আসামি করে আদালতে জমা দেয় পুলিশ।জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৮ সালে দায়েরকৃত এসব গায়েবী মামলার অধিকাংশই বাদী পুলিশ।এরমধ্যে ২৬ মে একটি মামলায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: সিরাজ উদ্দিনের আদালত থেকে খালাস পান ওই সাংবাদিক।বাকি ১২টি মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু তাহের ভূঁইয়া বলেন, তৎকালীন পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর সরকার ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে সাংবাদিক মাঈন উদ্দিন পাটোয়ারীকে এসব মামলায় জড়িয়েছেন।প্রায় ৫ বছর ধরে এসব ভুতুড়ে মামলায় আদালতে রীতিমত হাজিরা দিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তিনি। সাংবাদিক নিপীড়নের এ জঘন্য ঘটনার জন্য বিতর্কিত এসপি জাহাঙ্গীরসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।