প্রযুক্তির দাপটে, কদর কমেছে ঐতিহ্যবাহী ডাক বাক্সের
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
বর্তমানে আধুনিকতার যুগে ডাক বাক্স যেন এক সোনালী অতীত, এক সময়ের সেই ডাক বাক্সের কদর আর আগের মত নেই, ডাক বাক্সে চিঠি ফেলে দিয়ে কবে তার প্রিয়জন সেই চিঠি পাবেন এই অপেক্ষার প্রহর আর কেউ পোহায় না।
স্বামী স্ত্রীর কাছে, স্ত্রী -স্বামীর কাছে আবেগ প্রবণ হয়ে আর কোন চিঠি যেমন লেখেন না, অনুরুপ ভাবে মা-বাবা তার সন্তানদের আবার সন্তান তার বাবা- মায়ের কাছে কিংবা কোন প্রেমিক- প্রেমিকা তার প্রিয় জনের কাছে চিঠি লিখে ডাক বাক্সে আর দিয়ে আসেন না। বর্তমান সময়ের মানুষরা তার প্রিয় জনের কাছে মোবাইল বা টেলিফোনের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কার্যাবলী সেরে ফেলেন।
মোবাইল ফোন কিংবা ইন্টারনেটে ফেসবুক, ম্যাসেনজার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম ও টেলিগ্রাম এ্যাপসের মাধ্যমে প্রিয়জনের কাছে দ্রুত ভাব বিনিময় করা যায় এটা সত্য,কিন্তু প্রকৃত অর্থে লেখনীর মাধ্যমে যে আবেগ প্রবণ ভালবাসার কথা সুন্দররূপে ফুটে ওঠে কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তেমনভাবে ফুটে উঠে না। প্রিয়জনের কাছ হাতে পাওয়ার যে আনন্দ এবং সেই চিঠির জন্য অপেক্ষা কি যে মধুর তখনকার প্রিয়জনরাই তা অনুভব করতেন।
সময়/কাল পাল্টে গেছে আধুনিকতার ছোঁয়ায়, এমনকি আমাদের মন -মানসিকতাও পাল্টে গেছে সেই ছোঁয়াতেই। সময় নষ্ট করে আর কেউ যেমন চিঠি -পত্র লেখেন না,তেমনি চিঠি অনেক দেরি করে প্রিয়জনের হাতে পৌঁছে যাক এটাও কেউ আর তেমনটা চায় না।
কথা হয় ডাকঘরে চিঠি রিসিভ করতে আসা মজিদুল ইসলাম নামের এক যুবকের সাথে, তিনি জানান আমি দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের অফিসিয়াল সেক্টরের কার্য সম্পাদনকারী পদে আমি সিলেক্ট হয়েছি , চাকরিতে যোগদানের জন্য আমার নিয়োগপত্র সরকারি ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠিয়েছে বলে আমাকে অবগত করছে অধিদফতর থেকে , আমি এখানে আমার নিয়োগপত্র রিসিভ করতে এসেছি, আমার জীবনের প্রথম কর্মনজীবন শুরু হতে যাচ্ছে, এজন্য আমি খুবই আনন্দিত। ডাকঘরের কার্যক্রম বিষয়ে তিনি প্রতিবেদককে জানান, আমি যতটুকু জানি আমরা বর্তমানে প্রযুক্তি নির্ভর হওয়ার কারণে তুলনামূলক ভাবে আগের চেয়ে ডাকঘরের ব্যবহার অনেকটাই কম। এখন ডাকঘরের মাধ্যমে সব ধরনের নথিপত্র আদান-প্রদান হয় না, এখন সরকারি অফিসিয়ালি কিছু কার্যক্রম গুলো ডাকঘরের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়ে থাকে।
প্রসঙ্গক্রমে সিনিয়র সাংবাদিক এসএম রাজু আহমেদ বলেন, ২০০২ সালে আমি যখন সাংবাদিকতায় নতুন তখন দেখেছি, সংবাদ কর্মীরা রাতে সংবাদ লিখে খোলা চিঠির খামে ভরে ডাক বাক্সে ফেলে দিয়ে আসতো, কয়েক দিন পর সেই সংবাদ ছাপা হতো। এরপর পত্রিকা অফিস ডাকযোগে সেই পত্রিকা পাঠাতো, সেই ছাপানো খবর পড়ার জন্য কখন ডাক পিয়ন ডাকবাক্স খুলবে তার জন্য আগে থেকে পোস্ট অফিসে এসে অপেক্ষা করতো সংবাদকর্মীরা। আধুনিকতার যুগে সবই যেন এখন কালের সাক্ষী।
সিংড়া উপজেলা পোষ্ট মাষ্টার রজব আলী মোল্লা জানান, জানান,আগের দিনের মত এখন আর চিঠি পত্র লেনদেন হয় না। বর্তমানে পোষ্ট অফিসে ইলেকট্রনিক মানি অর্ডার, ই-কমার্স, রেজিষ্ট্রি সেবা, বীমা, পরীক্ষার খাতা পাঠানো ইত্যাদি কাজগুলো হচ্ছে। তবে অনেক গ্রাহকেরই দাবী পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পরিবার সঞ্চয় পত্র চালু করার।