কুমিল্লায় সেন্ডিকেট কারসাজিতে নিত্যপণ্যের আকাশ ছোঁয়া দাম
লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের অজুহাতে কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, লালমাই, বরুড়া, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন হাটে-বাজার জুড়ে সিন্ডিকেট কারসাজিতে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের পাইকারী ও খুচরা দামে বড় তফাৎ এবং বিভিন্ন পন্যের বাজারে আগুন পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত নানাহ পন্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। নানাহ অজুহাতে ওইসব অসাধূ ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এতে সকল পেশার মানুষ ওইসব ব্যবসায়ীদের হাতে হচ্ছেন প্রতারিত। স্থানীয় প্রশাসনের কোন ভ্রাম্যমান আদালত না থাকায় ওইসব ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ব আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ দিকে ভারতীয় চিনি, মসল্লা, ঔষধ, কাপড়, মাদক সহ বিভিন্ন পন্যের প্রকাশ্যে আমদানীতে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য হিসাবে গড়ে উঠেছে জেলার দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিগত কয়েক মাসের রাজনৈতিক আন্দোলন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আভ্যন্তরিন কোন্দল ও বিভিন্ন সেক্টরে চাঁদাবাজির কারণে ব্যবসায়িক সেন্ডিকেটের দৌরাত্ব কমছে না। বিশেষ করে কিছুদিনের বন্যার তান্ডবে ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে সাধারণ মানুষের আয় নেই বললেই চলে। ফলে এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ। হাটবাজার গুলোতে চাল. ডাল, চিনি, গরম মসল্লা, ভৌজ্যতৈল, সবজি সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে বাজার মনিটরিং এর কোন বিকল্প নেই এবং স্থানীয় প্রশাসনের বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমান আদালত কঠোর ভাবে জোরদার করা উচিৎ ছিলো। সেটা কিন্তু হয়নি। বরং আমাদের অল্প আয়ের টাকার মধ্য থেকে বড় অংশই বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য কিনতে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ী সেন্ডিকেট। স্থানীয় প্রশাসনের দেউলিয়াত্মকে পূজি করে স্থানীয় মজুতদার ব্যবসায়ীরা সু-কৌশলে লাগামহীন ঘোড়ার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়াচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দাম। অথচ এ ব্যাপারে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। বিশেষ করে সরকারের ভ্রান্তনীতি ও বিশেষ বিশেষ ব্যাক্তিদের চাঁদাবাজির কারণে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গরম মসল্লা, ভৌজ্য তৈল ও গ্রীস্মকালীন সবজি পণ্যের বাজার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।
জেলা দক্ষিনাঞ্চলের একাধিক ভোক্তভোগী জানায়, পাইকারী আড়তে বিভিন্ন পন্যের দামের বিপরীতে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পন্যের দাম ১৫/২০ টাকা বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে আরো ৫/১০ টাকা বেশী দাম দিয়ে প্রয়োজনীয় পন্য কিনতে হয় ক্রেতাদের। পাইকারী বাজারে চিনি ১২০/১২৫ টাকা খুচরা বাজারে ১৩০/১৩৫ টাক,া পেয়াজ ৭২/৭৫ টাকার স্থলে ৮০/৯০ টাকাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের প্রত্যেকটির কেজি ১৫/২০ টাকা পার্থক্য রয়েছে। মৌসুমী ফল, কাঁচা সবজি, ও গরম মশল্লার বাজার অনেকটা সাধারন মানষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। নতুন নতুন সবজি ৬০/৭০ টাকার নীচে কোন তরকারী পাওয়া যায় না। অথচ দেশের বিভিন্ন জেলায় কাঁচামালে মোকাম কিংবা উৎপাদনস্থানে দাম তার অর্ধেক। চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ভৌজ্যতৈল, সিম, করলা, বেগুন, পটল, মৌসুমী ফল-ফলাদি, মিষ্টি জাতীয় খাবার, হোটেল রেস্তরা সহ অন্যান্য শীতকালীন শবজির সংকট সৃষ্টি করে আগাম সবজির দাম বাড়ার অশুভ প্রতিযোগিতায় নেমেছে সেন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।
সূত্রগুলো আরো জানায়, গতকাল মঙ্গলবার মুসুর ডালের পাইকারী বাজার ছিল ১১০/১১৫ টাকা খুচরা ১২০/১৩০ টাকা। ভোজ্য তেল বিভিন্ন ব্যান্ডের কেজিতে ৪০/৫০ টাকা বেড়েছে। লাকসাম,নাঙ্গলকোট ও বরুড়া পৌর শহরের বাহিরে বিভিন্ন পন্যের মূল্য পাইকারী দামের চাইতে খুচরা বাজারে কোন কোন পন্যে প্রতি কেজি ২০/২৫ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। চাউল, চিনি ও ভৌজ্য তৈলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের পাইকারী ও খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে আগের মতই ১৫/২০ টাকা পর্যন্ত পার্থক্য রয়েছে। ক্রেতাদের কাছে এটা অস্বাভাবিক হলেও দোকানদাররা রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে।
বিভিন্ন পন্যের বাজারে প্রতি কেজি সর্বচ্চো ২/৫ টাকা পর্যন্ত কম বেশি হতে পারে। কিন্তু হাটে-বাজারে প্রচুর মালামালের সরবরাহ থাকা স্বত্তে¡ও পন্যের বাজারমূল্যে স্থানীয় বিভিন্ন পন্য সেন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের হাত বদল ও কমিশন বানিজ্যের কারনে ক্রেতাদের প্রতারিত করে ফায়দা লুটে নিচ্ছে ওইসব ব্যবসায়ীরা। গরম মসল্লার বাজারেও আগুন, মুদি মালামালে কোন অজুহাত ছাড়াই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মূল্য। মাছ কিছুটা নিয়ন্ত্রনে থাকলেও মুরগী, গরু, খাসির মাংস ক্রয়ে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে। এছাড়া ভেজাল খাদ্যদ্রব্য তো আছেই। উপজেলা ও পৌরসভা স্যানেটারী ইন্সপেক্টার কিংবা স্বাস্থ্য পরিদর্শক কর্মকর্তারা জেনো রহস্যজনক কারণে নিরব দর্শক।
এ ব্যাপারে জেলা দক্ষিনাঞ্চলের স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কর্মকর্তারদের একাধিক মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তারা জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা জানালেও পন্যের বাজার দর নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে মুখ খূলতে নিরব দর্শক। তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগের আংশিক সত্যতা শিকার করলেও সন্দেহের তীরটা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দিকে ইংগিত করে বলছেন ভিন্ন কথা।