
নজরুলের পথের কাটা হতে পারে জব্বার-শিমুল
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার অংশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৪ আসনে পরপর দুবার নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তৃতীয় দফায় সংসদ সদস্য হতে তিনি এরই মধ্যে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তবে এই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আরও ১৬ নেতা। তাদের মধ্যে অন্তত দুজন নজরুলের জয়ের পথে বাধা হতে পারেন বলে জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে হ্যাটট্রিক করার সুযোগ রয়েছে নজরুল ইসলামের সামনে। সেই পথে বড় বাধা হওয়ার কথা ছিল এলডিপির কর্নেল অলি আহমদের। একসময়ের ডাকসাইটে বিএনপি নেতা এখন এলডিপির চেয়ারম্যান পদে থেকে রাজনীতি করছেন। এই আসন থেকে ছয়বারের নির্বাচিত ৮৫ বছর বয়স্ক এই রাজনীতিবিদ এখনও সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়। ফলে এখনও নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নেয়নি তার দল। তাই কার্যত ফাঁকা মাঠে নজরুল ইসলামের জয়ের সুযোগ তৈরি হলেও সেই পথে বাধা তৈরি করতে নিজ দল আওয়ামী লীগ থেকেই মনোনয়ন চেয়েছেন ১৬ জন।
১৬ জন মনোনয়ন চাওয়ার কারণেই নজরুল ইসলাম যে বাধার মুখে পড়েছেন, বিষয়টি তেমন নয়। কার্যত নজরুল ইসলামকে এবার নৌকার মাঝি করা হলে মনোনয়ন ফরম নেওয়া অন্তত দুজন হতে চান বিদ্রোহী প্রার্থী। মূলত ওই দুজনই হতে পারেন নজরুল ইসলামের হ্যাটট্রিক জয়ে পথের কাঁটা। এই দুজনের একজন জাতীয় শ্রমিক লীগের চন্দনাইশ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আফতাব মাহমুদ শিমুল। প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি নৌকার প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছি। কোনো কারণে দল যদি আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে বর্তমান এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী পদে নির্বাচন করব। আর যদি নজরুল ইসলাম ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করব।’
নজরুল ইসলামের সঙ্গে বিরোধের কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ নেই। এলাকার উন্নয়ন ঠিকমতো করছেন না বলেই আমি ক্ষিপ্ত।’ তিনি বলেন, ‘চন্দনাইশ এলাকায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ভবন স্থানান্তর হওয়ার কথা ছিল। আবার বরকল এলাকায় একটি চীনা ইপিজেড স্থাপনের প্রস্তাব ও শঙ্খ নদকে চট্টগ্রাম বন্দরের আওতায় নেওয়ার প্রস্তাব ছিল। এসব উন্নয়ন এমপির বাধার কারণে হয়নি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দল যদি পুনরায় নজরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হব।’
অবশ্য আফতাব মাহমুদ শিমুল একা নন। তার মতোই ক্ষিপ্ত আরও একাধিক নেতা আছেন দলে। তাদের আরেকজন হলেন চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী। তিনি অবশ্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেননি। তিনি বলেছেন, ‘আমি তিন দফা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছি। এর মধ্যে একবার নির্বাচন করব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন জনগণের চাপে পড়ে আমাকে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে হয়েছিল। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পরও ভোটাররা আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছিলেন। আগামীতেও এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না, তা এখনই বলতে পারছি না। পরে চিন্তাভাবনা করে বলতে হবে।’ জব্বার ও শিমুলের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, তারা দুজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দুজনই ক্ষিপ্ত বর্তমান সংসদ সদস্যের ওপর।
এলাকার উন্নয়নে কম ভূমিকা রাখার অভিযোগের বিষয়ে নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি দুই দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছি। যারা বলছেন, উন্নয়ন কম হয়েছে, তারা ভুল বলছেন। জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, তারাই এসব বলছে। যার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নেত্রীর ওপর সম্পূর্ণ আস্থাশীল। তিনি আমাকে মনোনয়ন দিলে অতীতের মতোই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাব। আমি শুধু ভোটারদের দোয়া ও ভোট চাই।’
এর বাইরে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে নেত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি শৈশব থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করছি। টানা ১৫ বছর দল ক্ষমতায়। দলের পরীক্ষিত নেতা হিসেবে কখনোই দলকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করিনি। তাই আশা করছি, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।’ তবে তিনি বলেন, ‘দল আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে অন্য কাউকে দিলে আমি নৌকার পক্ষেই কাজ করব।’
এই আসন থেকে আরও মনোনয়ন চেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রিহ্যাব চট্টগ্রামের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগ নেতা মীর মো. মহিউদ্দিন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহিদা আকতার জাহান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য মামুন উল হক চৌধুরী, ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমদ আসিফ, নাছির উদ্দিন, এম মাসুদ আলম চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, কায়কোবাদ ওসমানী, জাহিদুল ইসলাম, আবুল বশর ভুঁইয়া ও মাহবুবুর রহমান।