
তথ্য প্রযুক্তির যুগে কৃত্রিম সুপার বুদ্ধিমত্তার প্রভাব
মোঃ জাহিদুল ইসলাম
চিন্তাশক্তি, বুদ্ধি কিংবা বিশ্লেষণ ক্ষমতা মানুষের সহজাত। কিন্তু একটি যন্ত্রকে মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, সেটিকে চিন্তা করানো কিংবা বিশ্লেষণ করানোর ক্ষমতা দেওয়ার ধারণাটিকে সাধারণভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়। এআই প্রযুক্তির নিত্য উৎকর্ষতায় অনেক অসাধারণ কাজ আজ হয়ে উঠেছে সাধারণ। অনেক অসম্ভব হয়ে উঠেছে সম্ভব। প্রযুক্তি ছাড়া আজকের বিশ্ব কল্পনা করা যায় না। ঠিক তেমনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি ছাড়া কল্পনা করা যায় না আজকের প্রযুক্তি বিশ্বের কথা। কিছুদিন আগেও বর্তমান বিশ্বের কাছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ছিল দূর ভবিষ্যতের একটি কাল্পনিক বিষয়। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যে সম্প্রতি এই দূরবর্তী ভবিষ্যতের বিষয়টি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মূল অংশ হতে শুরু করেছে। এর প্রধান কারণ হলো পৃথিবীর মানুষ ডিজিটাল বিশ্বে সম্পূর্ণভাবে সম্পৃক্ত হয়ে গিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে অচিন্তনীয় পরিমাণ ডেটার সৃষ্টি হয়েছে। আর এখন সেই ডেটাকে প্রক্রিয়া করার মত ক্ষমতাশালী কম্পিউটারও আমাদের হাতে চলে এসেছে। এই ডেটা বা তথ্যকে প্রক্রিয়া করার জন্য বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদরা এমন একটি পদ্ধতি বেছে নিয়েছে যেটি মানুষের মস্তিষ্কের মতো অথবা তার চেয়ে অধিক পরিমাণ কাজ দ্রুতগতিতে এবং সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম। কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (Artificial General Intelligence বা AGI) বলতে সাধারণত মানব স্তরের বুদ্ধিমত্তাকে বোঝায়। আপরদিকে কৃত্রিম সুপার বুদ্ধিমত্তা (Artificial Super Intelligence বা ASI) হলো সুপার হিউম্যান লেভেলের বুদ্ধিমত্তা। সুপার ইন্টেলিজেন্স (SI) হলো একটি সুপার পাওয়ার বা সহজাত ক্ষমতা। এই এসআই (ASI) এর এসাআইকে (SI) সুপারহিরো ফিকশনের অনেক চরিত্র, নায়ক এবং খলনায়ক উভয়ের মধ্যেই ভাগ করা যায়। সুপার ইন্টেলিজেন্স সুপার পাওয়ার হলো বেশিরভাগ ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন এবং প্রয়োগ করার ক্ষমতা ধারন করা। তবে একটি মূল উদ্বেগের বিষয় হলো এই কৃত্রিম সুপার বুদ্ধিমত্তা মানুষের নিয়ন্ত্রণকে অতিক্রম করে আত্ম-সচেতন হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে বিশ্ব এবং মানব জাতির জন্য অপ্রত্যাশিত পরিণতি এবং এমনকি অস্তিত্বগত ঝুঁকিও হতে পারে । এআইয়ের উচ্চতর জ্ঞানীয় ক্ষমতা এটিকে সিস্টেমগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে বা এমনকি উন্নত অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করতে সহায়তা করার ক্ষমতাও রাখে। এআই জটিল সমস্যা বিশ্লেষণ করতে পারে এবং মানুষের চেয়ে দ্রুত সমাধান খুঁজে পেতে পারে। এভাবের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই মানব জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে আধুনিক যুগের কৃত্রিম সুপার বুদ্ধিমত্তা মানুষের ভাষা বুঝতে এবং তৈরি করতে পারার পাশাপাশি ছবি এবং ভিডিওতে বস্তু, মুখ এবং এমনকি আবেগ চিনতেও সক্ষম । এআই রোগ নির্ণয়, ওষুধ আবিষ্কার এবং এমনকি রোবটিক সার্জারিতে সহায়তা করে, শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচায় এবং স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান উন্নত করতে সক্ষম। স্মার্ট হোম ডিভাইসগুলো নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলছে । এআই স্বায়ত্তশাসিত যানবাহনে নিযুক্ত করা হয়, রাস্তার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে এবং সম্ভাব্য নিরাপত্তা হুমকির নিরীক্ষণ ও প্রতিক্রিয়া জানাতে নজরদারি ব্যবস্থার জন্যও ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে কৃত্রিম সুপার বুদ্ধিমত্তার আবিষ্কার খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেলেও এর অনেক নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথকে যেমন সহজলভ্য করে তুলেছে ঠিক তার বিপরীত প্রভাবটাও আমাদের জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা আমরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তও হয়ে থাকি। এই কৃত্রিম সুপার বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় এখনই রাশ টেনে না ধরলে সমাজ ও মানবজাতি বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়বে। বর্তমান আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি যুগে এআই প্রযুক্তির আশীর্বাদের তালিকা যত দীর্ঘই হোক না কেন এআই প্রযুক্তির ঝুঁকির বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে এই প্রযুক্তির বর্ধিত চাহিদা ও জনপ্রিয়তার প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন এআই-এর ঝুঁকি সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া এবং এআই প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ব্যবহার সুনিশ্চিত করা।
নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন
আপনি ও পছন্দ করতে পারেন
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
আর্কাইভ!
অনুগ্রহ করে একটি তারিখ নির্বাচন করুন!
দাখিল করুন