
কোম্পানীগঞ্জে দেড় বছর আগের অমীমাংসিত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
নোয়াখালী প্রতিনিধি
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে প্রায় দেড় বছর আগে সংঘটিত একটি অমীমাংসিত (ক্লুলেস) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। দীর্ঘ তদন্ত শেষে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল্লাহ আল-ফারুকের নির্দেশনায় এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দীনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিমের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে আরও অংশ নেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বিমল কর্মকার এবং এসআই মো. মহসিন মিয়া ও তাদের দল।
এ বিষয়ে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বিমল কর্মকার জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে রামপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জাফর আহম্মদের ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. শরীফের সঙ্গে মুছাপুর ইউনিয়নের নুরুল আলম রনির (২৭) সিগারেট খাওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। প্রথমে রনি শরীফের কাছে একটি সিগারেট চাইলে শরীফ দিতে অস্বীকার করেন। এতে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।
এর কিছুক্ষণ পর রনি নিজের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে রংমালা বাজারের একটি দোকান থেকে সিগারেট কিনে আনেন এবং ঘাটে বসে তা খেতে থাকেন। এসময় শরীফ আবার সেখানে এলে তাদের মধ্যে পুনরায় ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে রনি কৌশলে শরীফকে রাত আনুমানিক ১টার দিকে রংমালা দারুল উলুম মাদ্রাসার পেছনে নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানে তিনি শরীফকে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড মারধর করলে শরীফ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর রনি তার মৃতদেহ লতাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখেন।
পরে রনি সারারাত পুকুরঘাটে বসে থাকেন এবং ভোরে শরীফের মোবাইল ফোনটি নিয়ে প্রথমে নিজের বাড়ি যান। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জামাকাপড় নিয়ে বসুরহাট থেকে চট্টগ্রাম পালিয়ে যান এবং শরীফের মোবাইল ফোনটি স্টেশন রোডে বিক্রি করে দেন।
ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর ঘটনাস্থল থেকে লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে একটি অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে, পুলিশ পরিদর্শক বিমল কর্মকার ও এসআই মহসিনের নেতৃত্বে একটি দল গতকাল (১২ জুন) এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রধান আসামি মুছাপুর ইউনিয়নের সফিকুল আলম বাহারের ছেলে নুরুল আলম রনিকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বেচ্ছায় হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
এই মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।