
করোনা পরীক্ষার কিট সংকটে ভুগছে বাগেরহাটের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো
নিজস্ব প্রতিনিধি
বাগেরহাটের উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে মহামারি করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার কিট নেই। এর ফলে উপজেলা পর্যায়ে করোনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে, যে কারণে করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের মধ্যে কেউ পজিটিভ আছেন কি না, তা শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপসর্গ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল এবং খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। কখনো আবার সন্দেহ হলে রোগীদের সরাসরি ওইসব হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে নিয়মিত কিটের চাহিদাপত্র দেওয়া হলেও বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) পর্যন্ত তা আসেনি। কেবল বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে এসেছে মাত্র ১৫০টি অ্যান্টিজেন র্যাপিড টেস্ট কিট, যা রোগীদের সংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত কম। এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে, গত কয়েক দিন ধরে দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন এবং করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর খবর বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় উপজেলা পর্যায়ে করোনা পরীক্ষার কিট না থাকায় জনসাধারণের মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বারান্দা, চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে, ওয়ার্ডে, প্যাথলজির সামনে এবং লিফটের ভেতর ও বাইরে নানা বয়সের নারী-পুরুষ রোগীতে ঠাসা। রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় এত বেশি যে একে অপরের শরীরের সঙ্গে রীতিমতো ধাক্কা লাগছে। তাদের অধিকাংশের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানার অভাব স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়।জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, তারা কয়েক দিন ধরে জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি ও গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভব করছেন। তাই চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন। চিকিৎসকরা দেখার পর তাদের ব্যবস্থাপত্রও দিয়েছেন।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা হলে তারাও জানান প্রায় একই কথা।
তারা বলেন, শরীরে কয়েক দিন ধরে জ্বর ও কাশির মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে এসেছিলাম, কিন্তু কিট না থাকায় পরীক্ষা করাতে পারিনি। চিকিৎসকরা উপসর্গের ওপর ভিত্তি করেই চিকিৎসা দিয়েছেন।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মনি শংকর পাইক বলেন, জ্বর নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী হাসপাতালে আসছেন, কিন্তু কিট না থাকায় কারও করোনা পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। যাদের নিয়ে বেশি সন্দেহ হচ্ছে, তাদের পরীক্ষার জন্য বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষার জন্য এক হাজার পিস অ্যান্টিজেন র্যাপিড টেস্টের কিট চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কিট আসেনি।মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. শাহীন বলেন, জ্বরসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবার একজন রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। তিনি করোনা সংক্রমিত হয়েছেন বলেই সন্দেহ করা হচ্ছিল, কিন্তু কিট না থাকায় পরীক্ষা করা যায়নি। পরে উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা দিয়ে তাকে খুমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তার দুদিন আগে আরও এক রোগী করোনার উপসর্গ নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে কিটের অভাবে তারও পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
ডা. মো. শাহীন আরও বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমাদের এখানে করোনা পরীক্ষার কিট নেই। এখানে অন্তত এক হাজার পিস র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কিটের চাহিদা রয়েছে। গত ১০ জুন কিট চেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে, কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত তা আসেনি।’
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, ‘হাসপাতালে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিট ছিল না। পরে গত ১৬ জুন মাত্র ১৫০টি অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট এসেছে। তবে এখনও ওই কিট দিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হয়নি।’
তিনি জানান, কিটের স্বল্পতা থাকায় যাচাই-বাছাই করে যাদের করোনা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, শুধু তাদের পরীক্ষা করানো হবে। আর করোনার আরটি-পিসিআর টেস্টের জন্য রোগীদের খুমেক হাসপাতাল, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অথবা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। তবে কিট বেশি পেলে প্রয়োজন অনুযায়ী সবার করোনা পরীক্ষা সম্ভব হবে বলেও জানান এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।তিনি আরও বলেন, আগের চেয়ে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এতে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুহারও অনেক বেশি। বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এজন্য সবাইকে সচেতন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. আ স ম মাহবুবুল আলম জানান, বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল ছাড়া জেলার ৯টি উপজেলার একটিতেও করোনা ভাইরাস পরীক্ষার অ্যান্টিজেন র্যাপিড টেস্ট কিট নেই। প্রতিটি উপজেলা থেকে কিট চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। কিটের স্বল্পতা থাকায় কেউ করোনা পরীক্ষা করতে চাইলে যাচাই-বাছাই করে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাগেরহাট জেলায় ৩২ হাজার ৭১৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে আট হাজার ২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাগেরহাট জেলায় এ পর্যন্ত ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৮৭৮ জন।