ডার্ক মোড
Sunday, 13 July 2025
ePaper   
Logo
রাজনৈতিক ও পুলিশের ছত্রছায়ায় কবিরের ইয়াবা সাম্রাজ্য! মাদকে সয়লাব তালতলী

রাজনৈতিক ও পুলিশের ছত্রছায়ায় কবিরের ইয়াবা সাম্রাজ্য! মাদকে সয়লাব তালতলী

 
 
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
বরগুনার তালতলী উপজেলায় নীরবে বিস্তার করছে ভয়াবহ মাদকের নেটওয়ার্ক। এর মূল কুশীলব বরগুনার সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের আগা পদ্মা গ্রামের চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী মো.কবির খাঁন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে তার বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর তথ‌্য, মাদক সম্রাট কবির কক্সবাজার থেকে সড়ক ও নৌ পথে ইয়াবার চালান এনে তালতলীসহ বরগুনা জেলার প্রাত‌্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তার মাদকের ছোবলে কিশোর, যুবক ও শিক্ষার্থীরা ধ্বংষ হচ্ছে। কিন্তু নিরব পুলিশ প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক ও পুলিশের ছত্রছায়ায় কবির মাদকের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। ফলে তিনি থাকলেন ধরা ছোয়ার বাইরে। দ্রুত মাদক সম্রাট কবির ও তার বাহিনীকে আইনের আওতায় আনার দাবী ভুক্তভোগীদের। কবিরের বিরুদ্ধে আমতলী, তালতলী ও বরগুনা ডিবিতে একাধিক মামলা রয়েছে বলে গোয়েন্দা সুত্রে জানাগেছে। 
 
জানাগেছে, বরগুনা জেলার সদর উপজেলার নলটোনা  ই্উনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের আগা পদ্মা গ্রামের প্রায়াত হাসেম খাঁনের ছেলে কবির খাঁন। গত ১০ বছর ধরে তিনি ইয়াবা ব‌্যবসার সঙ্গে জড়িত। তালতলীসহ বরগুনার বিভিন্ন উপজেলার শতাধিক ইয়াবা বিক্রির ডিলার রয়েছে তার। তার তালতলী শহর ও আসে-পাশে একাধিক গোপন আস্তানা রয়েছে। কোন আস্তানায় তিনি থাকে বা ইয়াবা রাখে তা জানা মুশকিল। তালতলী উপজেলায় তিনি গত পাঁচ বছর ধরে ইয়াবা বিক্রি করে আসছে। বিগত দিনে তিনি উপজেলার যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় ছিলেন। গত বছর ৫ আগষ্টের পরে তিনি ভোল পাল্টে যুবদলের এক নেতার ছত্রছায়ায় চলে যান। অভিযোগ রয়েছে, তালতলী থানার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিএসবি) এক এসআইর সঙ্গে তার গভীর সখ‌্যতা রয়েছে। পুলিশ অভিযানে গেলে তিনি তাকে খবর দিয়ে সহায়তা করেন। আরো অভিযোগ রয়েছে, মাদক সম্রাট কবির খাঁন উপজেলা বিএনপি নেতা ও পুলিশের ছত্রছায়ায় ইয়াবা বিক্রির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। নিজস্ব নেটওয়ার্ক,প্রশাসনের একাংশের নিরবতা এবং কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির সরাসরি সহযোগিতায় চলছে উপজেলা ব‌্যাপী মাদকের ভয়াবহ বিস্তার।
 
তালতলী উপজেলার মুল শহরের ভেতরে কবির খানের তিনটি গোপন আস্তানা রয়েছে। ওই আস্তানা গুলোতে পর্যায়ক্রমে একটিতে মজুদ,আরেকটিতে লেনদেন, অন্যটিতে থাকা-খাওয়া ও বৈঠক হয়। এলাকার সাধারণ মানুষ দেখেও ভয়ে মুখ খোলেন না।  তারা জানান, সব স্থানে কবিরের লোক রয়েছে। কিছু বললেই বিপদ। তারা আরো বলেন, পুলিশতো সবই জানে।  
 
ইয়ারা সম্রাট কবিরের তালতলী শহরেই দশ জনের বেশী বিক্রেতা রয়েছে। তারা এলাকা ভিত্তিক ইয়াবা বিক্রি করে। ঠংপাড়া এলাকায় শহীদুল, কাঠ বাজার এলাকায় জলিল, বাঁধঘাট এলাকায় নারী বিক্রেতা হনুফা, নকরি এলাকায় সরোয়ার, উপজেলা সড়কে রাজু, ছোট ভাইজোড়া এলাকায় বনি আমিন ও লঞ্চঘাট এলাকায় পারভেজ ও রাজিব। এ ছাড়া উপজেলায় অর্ধ শতাধিক মাদক বিক্রেতা রয়েছে। তারা রাতের আধারে ইয়াবা সম্রাট কবিরের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে এবং উপজেলার সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়। ইয়াবা সেবী ও বিক্রেতাদের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও ব‌্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ মাহবুবুল আলম মামুন সম্প্রতি উপজেলা শহরে মাইকিং করেছেন কিন্তু পুলিশ প্রশাসন কোন ব‌্যবস্থা নেয়নি। গত মঙ্গলবার রাতে তালতলী ক‌্যাম্পের নৌ‌-বাহিনীর সদস‌্যরা থানা থেকে আধা কিলোমিটার দুরে অভিযান চালিয়ে ১০ কেজি গাঁজাসহ পারভেজ ও রাজিব নামের দুইজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন কিন্তু  পুলিশ তাদের হদিস পাইনি। অভিযোগ রয়েছে ইয়াবা সম্রাট কবির খাঁন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক ব‌্যাক্তিকে মাসোয়ার দেন। তাদের যোগ সাজসে চলে ইয়াবার রমরমা ব‌্যবসা।  
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে,কবির কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে মাছ ভর্তি ট্রাক, পরিবহনগাড়ী ও মিশ্র মালামাল পরিবহনের ভেতরে ইয়াবা নিয়ে আসে। ওই ইয়াবা তার গোপন আস্তানায় মজুদ রাখে। পরে চিহ্নিত এজেন্টদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় উপজেলার সর্বত্র। আশ্চর্যের বিষয় কবির একই রংয়ের পাঞ্জাবি এবং একই গামছা পরিধান করে চলাফেরা করে। এতে করে সাধারণ মানুষ তাকে শনাক্ত করতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও বিভ্রান্তিতে থাকেন। আরো জানাগেছে, কবির তার মাদকের চালান পায়রা নদীর নকরির খেয়া দিয়ে তালতলী ও বরগুনা সদরসহ অন‌্যান‌্য উপজেলার বহন করে। 
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালতলী থানার একজন কর্মকর্তা বলেন,আমরা নজর রাখছি, সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এলাকাবাসীর ভাষ্য, বছরের পর বছর একই কথা শুনে আসছি। অভিযান শুরুর আগেই কবির ও তার লোকজন খবর পেয়ে যায়। তারা আরো বলেন, ইয়াবা সম্রাট কবিরই বড় নেতা। আওয়ামীলীগ আমলে আওয়ামীলীগ নিয়ন্ত্রণ করছে এখন বিএনপি নিয়ন্ত্রণ করে। 
 
স্থানীয়রা বলেন,আমরা প্রতিবাদ করতে চাই,কিন্তু কবিরের লোকজন আমাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। প্রশাসনের দৃষ্টি না ফিরলে আমরা কিছুই করতে পারব না। এগুলো রাজনৈতিক ও পুলিশের হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্ভব না।
 
ইয়াবা বিক্রেতা শহীদুল ইসলাম বলেন, কবির খাঁন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা সরবরাহ করে। তবে আমার কাছে ইয়াবা নেই।  কিছু দিন আগে ছিল। 
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা বলেন, ক্ষমতা যার মাদক নিয়ন্ত্রণও তার। রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ না থাকলে ইয়াবা সম্রাট কবির খাঁন অবাধে মাদক বিক্রি করতে পারতো না।   
 
তালতলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ব‌্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ মাহবুবুল আলম মামুন বলেন, উপজেলার ঘরে ঘরে মাদক পৌছে গেছে। মাদকের ভয়াবহতা বিস্তার রোধে উপজেলা শহরে মাইকিং করেছি। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন কোন ব‌্যবস্থা নেয়নি।  তিনি আরো বলেন, নৌবাহিনী অভিযান চালালোও পুলিশের কোন তৎপরতা নেই। পুলিশ নিরব ভুমিকা পালন করছে। 
 
তালতলী থানার (ওসি) মো.শাহাজালাল বলেন, কবিরের নাম শুনেছি কিন্তু তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানিনা।  থানার পুরোনো স্টাফ যারা ছিল তারা তার সম্পর্কে জানতে পারে। মাদকের বিস্তার রোধে কঠোর ব‌্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন,  শহীদুল ইসলাম নামের একজন ইয়াবা ব‌্যবসায়ীর নাম জানি। তাকে গ্রেপ্তার চেষ্টা অব‌্যহত আছে।  
 
সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী) সার্কেল মোঃ তারিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, তালতলীতে মাদকের ভয়াবহতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে। কবির খাঁন নামের কাউকে চিনি না। তার বিরুদ্ধে সত‌্যতা পেয়ে আইনী ব‌্যবস্থা নেয়া হবে।  
 

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন