ডার্ক মোড
Saturday, 19 April 2025
ePaper   
Logo
তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ভয়েস ওভার ওয়াইফাই (VoWiFi) প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ভয়েস ওভার ওয়াইফাই (VoWiFi) প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা

 

 
মোঃ জাহিদুল ইসলাম 
 
 
 
ভয়েস ওভার ওয়াইফাই (VoWiFi) হল এমন একটি প্রযুক্তি যা মোবাইল নেটওয়ার্কের অ্যাক্সেস নেটওয়ার্কের পরিবর্তে WiFi নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভয়েস কল করার সুযোগ করে দেয়। অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক হল মোবাইল নেটওয়ার্কের একটি বিশেষ অংশ। এই বিশেষ অংশটি ব্যবহারকারীর ডিভাইসকে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে। এরফলে ব্যবহারকারীরা ফোন করা, ইন্টারনেট ব্যবহার ও অন্যান্য সেবা গ্রহণ করতে পারে। এটি ভয়েস ওভার এলটিই (VoLTE - Voice over Long-Term Evolution) - এর একটি এক্সটেনশন এবং বিদ্যমান টেলিকম অবকাঠামোর সাথে নির্বিঘ্নে সংযুক্ত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। বিশেষ এই ভয়েস ওভার ওয়াইফাই প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিষ্কার ভয়েস কোয়ালিটি, কম কল ড্রপ এবং দুর্বল সিগনালযুক্ত এলাকায় উন্নত সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়। ভয়েস ওভার ওয়াইফাই প্রযুক্তি হলো উন্নত মানের ভয়েস সেবা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এই প্রযুক্তি চালু হলে অবসান ঘটবে নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনার। এর ফলে ওয়াইফাই থাকলেই কথা চলবে ফোনে। ফলশ্রুতিতে নানা সমস্যার সমাধানে ভয়েস ওভার ওয়াইফাই কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। গ্রাহকদের জন্য ভয়েস ওভার ওয়াইফাই বা ভিও-ওয়াইফাই প্রযুক্তি চালু করলে এর মাধ্যমে মূলত প্রথাগত নেটওয়ার্কের পরিবর্তে ওয়াইফাই ব্যবহার করে আইপি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভয়েস কল করা যাবে। বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটিরও বেশি গ্রাহককে মোবাইলে সেবা দিচ্ছে চারটি টেলিকমিউনিকেশন অপারেটর। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে প্রায় তিন হাজার আইএসপি অপারেটর। বর্তমানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দাতাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে চালু করা হবে ভয়েস ওভার ওয়াইফাই সেবা। এর ফলে সিম কার্ডের পরিবর্তে ওয়াইফাই ব্যবহার করে মোবাইল নম্বরে সরাসরি ভয়েস কল করার সুবিধা চালু করা হবে। এই সুবিধা চালু হলে গ্রাহকেদের দুর্বল নেটওয়ার্ক নিয়ে ভোগান্তির বিবেচনায় দ্রুত গতির ভয়েস ওভার ওয়াইফাই সেবা প্রদান করা যাবে। গ্রাহকেদের এই দুর্বল নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানে দ্রুত ভয়েস ওভার ওয়াইফাই সেবা অতি উত্তম একটি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা। এই প্রযুক্তিগত সেবা চালু হলে সিমে নেটওয়ার্ক না থাকলেও সংশ্লিষ্ট হ্যান্ডসেটে ওয়াইফাই সংযোগ দিয়ে অন্য মোবাইল নম্বরে কল করা যাবে। এই প্রযুক্তিতে কথা বলতে গ্রাহকের ব্যান্ডউইথ খরচ হবে। এতে গ্রাহকদের সরাসরি অর্থ ব্যয় হবে না। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কমবে কলড্রপের হার। উঁচু ভবন এবং ঘরের মধ্যে দুর্বল সিগনালের কারণে প্রায়ই ব্যবহারকারীরা সমস্যায় পড়েন। ভয়েস ওভার ওয়াইফাই প্রযুক্তি বাড়ি বা অফিসের WiFi নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এই সমস্যা সমাধান করতে পারে। বড় বড় শহরগুলোতেও নেটওয়ার্ক কনজেশন একটি সাধারণ সমস্যা। ভয়েস ওভার ওয়াইফাই প্রযুক্তি ভয়েস ট্র্যাফিককে WiFi নেটওয়ার্কে সরিয়ে নেটওয়ার্কের উপর চাপ কমাতে পারে। এতে অতি মূল্যবান রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (RF) সাশ্রয় সম্ভব হবে। এর ফলে মোবাইল অপারেটররা তাদের গ্রাহকদের স্বল্প মূল্যে উন্নতমানের ভয়েস সেবা প্রদানে সক্ষম হবে। এদিকে মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্যাপক বিস্তার সত্ত্বেও অনেক গ্রামীণ ও দূরবর্তী অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক  কাভারেজের অভাব রয়েছে। সাশ্রয়ী ব্রডব্যান্ড পরিষেবা চালিত WiFi নেটওয়ার্ক ভয়েস কলের বিকল্প চ্যানেল সরবরাহ করতে পারে। ফলে মোবাইল নেটওয়ার্ক  কাভারেজ না থাকলেও গ্রাহকগণ আইএসপি কর্তৃক সরবরাহকৃত ব্রডব্যান্ড চালিত WiFi নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তাদের মোবাইল ভয়েস কল করতে সক্ষম হবে। ভয়েস ওভার ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে কলগুলো মোবাইল অপারেটর ও ব্যবহারকারীদের জন্য সাশ্রয়ী। ভয়েস ওভার ওয়াইফাই প্রযুক্তির অন্যতম বড় সুবিধা হল ভয়েস কলের মান উন্নত করা। মোবাইল অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ককে বাইপাস করে এটি হাই কোয়ালিটির ভয়েস কল নিশ্চিত করে। WiFi এর মাধ্যমে কল করলে ভয়েস কোয়ালিটি স্পষ্ট ও উচ্চমানের হয়। এছাড়া স্থিতিশীল WiFi নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার কারণে কল ড্রপের হার অনেক কমে যায়। এটি সিমলেস হ্যান্ডওভার হওয়ার উন্নত VoWiFi সিস্টেমের মাধ্যমে WiFi এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের মধ্যে কল ড্রপ ছাড়াই ফোন করা সম্ভব। এদিকে হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারের মতো এই প্রযুক্তিতে কথা বলতে গ্রাহকের শুধু ওয়াইফাই ডাটা খরচ হবে। কলের জন্য আলাদা কোনো চার্জ কাটা হবে না। ভয়েস ওভার ওয়াইফাই প্রযুক্তির অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এর গ্রহণযোগ্যতায় কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে  WiFi নেটওয়ার্কের অভাব। শহুরে এলাকায় ব্রডব্যান্ড অ্যাক্সেস ব্যাপক হলেও গ্রামীণ এলাকায় WiFi নেটওয়ার্ক এখনো তেমন স্থিতিশীল নয়। তাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য গ্রামীণ ব্রডব্যান্ড পরিষেবা সম্প্রসারণের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। অপরদিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডিভাইসের সামঞ্জস্যতা দূরীকরণ। অনেক পুরোনো স্মার্টফোন ভয়েস ওভার ওয়াইফাই প্রযুক্তি সাপোর্ট করে না। তাই সাশ্রয়ী দামে ভয়েস ওভার ওয়াইফাই প্রযুক্তি সাপোর্টেড ডিভাইস সরবরাহের ব্যবস্থা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে হবে। এই ভয়েস ওভার ওয়াইফাই প্রযুক্তির সফল বাস্তবায়নের জন্য টেলিকম অপারেটরদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নত করার পাশাপাশি তাদের সাথে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন রয়েছে। ভয়েস ওভার ওয়াইফাইয়ের সুবিধাগুলো সম্পর্কে অনেক ব্যবহারকারী এখনো অজ্ঞ। তাই ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অপরদিকে ভয়েস ওভার ওয়াইফাই প্রযুক্তির সুবিধাগুলো ভোগ করতে হলে অপারেটর এবং ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচারণা চালাতে হবে।
 
 
নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল)
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
 
 
 

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন