ডার্ক মোড
Saturday, 26 July 2025
ePaper   
Logo
আল জাজিরার প্রতিবেদন প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ ছিল হাসিনার

আল জাজিরার প্রতিবেদন প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশ ছিল হাসিনার

 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

linkedin sharing button

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের সরাসরি আদেশ’ দিয়েছিলেন এবং ‘যেখানেই পাওয়া যায়, সেখানে গুলি চালাতে’ বলেছিলেন—এমন গোপন ফোনালাপ ফাঁস করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রকাশিত রেকর্ডিং অনুযায়ী, ১৫ বছর দেশ শাসন করা হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান, এর আগে কয়েক সপ্তাহের রক্তাক্ত আন্দোলনে প্রায় এক হাজার ৪০০ জন নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।

 

এই ফোনালাপগুলো জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি) থেকে ১৮ জুলাই রেকর্ড করা হয়। এক ফোনে হাসিনা তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে শিক্ষার্থীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র (লিথ্যাল ওয়েপন) ব্যবহারের নির্দেশ দেন।

 
শিক্ষার্থীদের যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই গুলি করারও নির্দেশ দেন তিনি।

পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আত্মীয় শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে এক কথোপকথনে হাসিনা বলছিলেন, জমায়েত দেখে উপর থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে—হেলিকপ্টার থেকে।

 
কয়েক জায়গায় এরইমধ্যে শুরু হয়েছে।

আন্দোলনের সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করলেও পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শাবির শরীফ আল জাজিরাকে বলেন, হেলিকপ্টার থেকে আমাদের হাসপাতালের প্রবেশপথ লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল।

 
ছাত্রদের শরীরে অস্বাভাবিক বড় গুলির ক্ষত দেখা যায়।  

তিনি বলেন, এক্স-রেতে দেখা গেছে, গুলিগুলো খুব বড় আকারের এবং শরীরের ভেতরেই রয়ে গেছে।  

আল জাজিরা জানিয়েছে, রেকর্ডিংগুলো ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করানো হয়েছে এআই প্রযুক্তি বা ভুয়া সম্পাদনার কোনো প্রমাণ মেলে কি না, তা জানতে।  

আইসিটির প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, হাসিনা জানতেন যে তার ফোনালাপ রেকর্ড হচ্ছে। তিনি নিজেই বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, জানি, রেকর্ড হচ্ছে। কোনো সমস্যা নেই। ’ তিনি অন্যের জন্য যে গভীর গর্ত খুঁড়েছিলেন, আজ নিজেই তাতে পড়েছেন।

১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, তার কয়েকজন মন্ত্রী এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেন। আগস্টে মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা।  

গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্র আন্দোলনকারী আবু সাঈদ। তার মৃত্যু আন্দোলনকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।

শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের একটি গোপন ফোনালাপে তাকে পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে প্রশ্ন করতে শোনা যায়, মেডিকেল রিপোর্টি নিয়ে দেরি হচ্ছে কেন।  

রংপুর মেডিকেলের চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আমাদের রিপোর্ট পাঁচবার বদলাতে বলে। আবু সাঈদ পাথরের আঘাতে মারা গেছেন, তারা এমনটি লিখতে চেয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

আবু সাঈদের মৃত্যুর ১২ দিন পর তার পরিবারসহ প্রায় ৪০ শহীদ পরিবারের সদস্যকে ঢাকায় এনে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করানো হয়। সেখানে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয় এবং বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়।

সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, আমাদের জোর করে নেওয়া হয়। না গেলে হয়তো আরও খারাপ কিছু করত। সায়েদের বোন সুমি খাতুন বলেন, ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশই গুলি করেছে। সেখানে গিয়ে আমাদের ভুল হয়েছে।

আওয়ামী লীগের এক বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা কখনো ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ কথা বলেননি। ফোনালাপ হয় কাটাছেঁড়া করা, নয়তো সম্পূর্ণ ভুয়া।  

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন