
মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: চলে গেল ৯ বছরের নাফিস
নিজস্ব প্রতিনিধি
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হাসপাতালে আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ জনে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গতরাত পৌনে ২টার দিকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৪৪ জনের মধ্যে নাফিস নামের ৯ বছর বয়সী একটি শিশু মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টার দিকে মারা যায়। শরীরের ৯৫ শতাংশ পোড়ার ক্ষত নিয়ে ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল শিশুটি।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে বিধ্বস্ত হয়। পরে জানা যায়, স্কুল চত্বরের একটি দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হওয়া ওই বিমানটি ছিল বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান। প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উত্তরার ওই স্কুল ভবনে আছড়ে পড়েছিল।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই স্কুল ভবনে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় দেড় শতাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটে যার বেশিরভাগই শিশু। যারা এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছে, তাদের অধিকাংশের শরীরও মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান গতকাল দুপুরে বার্ন ইনস্টিটিউটে এক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, যারা চিকিৎসাধীন, তাদের মধ্যে ১০ জনকে ‘শঙ্কামুক্ত’ বলে মনে করা হচ্ছে।
তার কথায়, ‘৩০ জন একটা অস্পষ্ট জায়গায় আছে, যার মধ্যে ১০ জনকে মনে করছি এখনও শঙ্কার মধ্যে আছে। বাকিদের অবস্থা মাঝামাঝি জায়গায়।’
নাফিসের মৃত্যুর পর ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের সংখ্যা কমে ৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৩ জন, ঢাকা সিএমএইচে ২১ জন, কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ১ জন, শহিদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন ভর্তি আছে।
এর আগে, গতকাল দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিহতের সংখ্যা ৩১ ও আহতের সংখ্যা বলা হয়েছিল ১৬৫ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আইএসপিআরের পক্ষ থেকে দুই ধরনের তথ্য দেওয়ায় জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৮, আর বিভিন্ন হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি আছেন ৬৮ জন।
তিনি আরও জানান, আইএসপিআর পরিচালকের সঙ্গে মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যই সঠিক।
এদিকে, নিহতদের মধ্যে ২২ জনের পরিচয় শনাক্তের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা ছয়টি অজ্ঞাত লাশের পরিচয় শনাক্তে স্বজনদের খুঁজছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত মর্গে রাখা ছয়টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ডিএনএ বিশ্লেষণের (প্রোফাইলিং) জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধায়নে লাশগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুতই সিআইডির ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হবে।
সায়েদুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেসব নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের নাম আহত ও নিহতদের প্রকাশিত তালিকায় নেই, তাদের মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে গিয়ে ডিএনএ নমুনা প্রদান করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত মাত্র একটি পরিবারের পক্ষ থেকে নমুনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যত দ্রুত সম্ভব নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের নমুনা পাওয়া গেলে ডিএনএ ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কাম্য।