
আদালতে চলাকালে বিএনপি নেতার ইন্দনে পুলিশ আনসার সদসদ্যের উপর হামলা
হাবিব সরোয়ার আজাদ, সিলেট ব্যুরো
কলাগাঁও সীমান্ত ছড়া নদীতে খনিজ বালি চুরিকান্ডে ভ্রাম্যমান আদালত চলাকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিএনপি নেতার ইন্দনে চাঁদাবাজ চক্রের সদন্যরা বালি চুরিতে জড়িত থাকারা পুলিশ-আনসার সদস্যদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধা ৬টার দিকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের উওর শ্রীপুর ইউনিয়নের কলাগাঁও সীমান্ত ছড়া নদীর পূর্ব তীর থেকে ওই হামলার ঘটনাটি ঘটেছে।
ভ্রাম্যমান আদালত ওই সময় হামলাকারি এক দুর্বৃত্ত, বালি বোঝাই ষ্টিল বডি ৮টি ট্রলার জব্দ করেন।
শুক্রবার এমন তথ্য নিশ্চিত করে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ই্উএনও) নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবুল হাসেম বলেন, ইজারাবিহীন কলাগাঁও সীমান্ত ছড়া নদীতে খনিজ বালি চুরির সময় সুবিধাভোগীদের চাঁদাবাজ চক্রের ইন্দনে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা, বালি উক্তোলন, বালি কেনা বেচার সাথে জড়িতরা ভ্রাম্যমাণ আদালতে উপস্থিত থাকা আনসার পুলিশ সদস্যদের উপর হাতে হাতে দা লাঠি সোটা, পাথরখন্ড নিয়ে হামলা করে।
এক পর্যায়ে পাথরের ঢিল ছুঁড়ে জব্দকৃত ট্রলারগুলো, আটককৃত দূবৃক্তকে ছিনিয়ে নেয়া, পুলিশ –আসনার সদস্যদের হতাহতের মাধ্যমে ছত্রভঙ্গ করে সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান করে।
বৃহস্পতিবার সন্ধায় উপজেলার কলাগাঁও সীমান্ত ছড়া নদীতে থাকা কলাগাঁও পুর্ব-পশ্চিম তীরের একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গেল বছরের ৫ আগষ্ট আওয়ামী ফ্যাসিণ্ট সরকার পতনের পূর্ব সময় পর্য্যন্ত লন্ডনে পালিয়ে থাকা সুনামগঞ্জ-১(তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-মধ্যনগর) আসনের তৎকালীন এমপি রনজিত চন্দ্র সরকারের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এখলাছুর রহমান তারা ওরফে ’একতারা, কলাগাও পশ্চিম পাড়ের ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মৃত জয়দরের ছেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত( প্রয়াত) অস্ত্র চোরাকারবারি নজরুলের ভাই ওয়ার্ড যুবলীগ কর্মী এমরুল হাসান ওরফে ট্রলি এমরুল সরকারি কাজের কথা বলে কলাগাঁও সীমান্ত ছড়া নদী থেকে অর্ধ শত কোটি টাকার খনিজ বালি চুরি করিয়ে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাল্কহেড বোঝাই করে বিক্রয় করত। তৎকালীন সময়ে থাকা ইউএনও,ওসি,থানা পুিলশের কয়েকজন অসৎ অফিসারের সহযোগিতায় লাগামহীন খনিজ বালি চুরিকান্ডের ঘটনায় পরবর্তীতে জেলার জামালগঞ্জ থানায় ট্রলি এমরুল সহ কয়েকজনের নামে মামলা হয়। ওই থানা পুলিশ বালি বোঝাই বাল্ক হেড, কয়েকটি ছোট ছোট ষ্টিল বডি ট্রলার, বালি চুরিতে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতার করে।
ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর অলিখিত ভাবে উপজেলার ইজারাবিহিন কলাগাঁও সীমান্ত ছড়া নদী দখলের নেন কলাগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে বিএনপি নেতা (বর্তমানে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য) পল্লী চিকিৎসক শামুসুদ্দিন, তার পরিবারে সদস্যরা, চারাগাঁও সংসার পাড়ের নিবক্সের ছেলে ইউনিয়ন যুবদলের সহ সভাপতি ( মামলার পলাতক আসামি) হাবিবুর রহমান হাবি ওরফে কাইল্যা হাবি।
ওই দুজনের নেতৃত্বে ২৪ এর ৫ আগষ্টের পর পল্লী চিকিৎসক শামসুদ্দিনের সহোদর নজরুল ইসলাম, ভাতিজা রাজু সহ আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকারের সুবিধাভোগী অরাজনৈতিক নিয়মিত মামলায় পলাতক ট্রলি এমরুলের পরিবারের কয়েকজনকে নিয়ে গঠিত ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি চক্র প্রতি দিবারাত্রী ৫০ থেকে ৬০ টি ষ্টিল বডি খনিজ বালি প্রকাশ্যে চুরি করে কেনা বেচা চাঁদা আদায় করে আসছে।
অভিযোগ রয়েছে খনিজ বালি চুরির আসনে বসে থাকা বিএনপি নেতা শামসুদ্দিন, যুবদল নেতা হাবিবুর রহমান হবি, শামসুদ্দিনের ভাই নজরুল, ভাতিজা রাজু সহ নির্ধারিত কমিশন ভুক্ত লোকজন দিয়ে প্রতি ট্রলার বালির বিপরীতে ২৫০০ থেকে ৩০০০ করে চাঁদা আদায় করাতেন। আবার ছোট ছোট ষ্টিল বডিতে চুরি করে নিয়ে যাওয়া বালি জনসম্মুখের আড়ালে জামালগঞ্জের নৌ সীমানায়,দূর্গম হাওরের নৌ সীমানায় নিরাপদ দূরত্বে রেখে বড়ষ্টিল বডি বাল্কহেড, জাহাজে করে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বালি ব্যবসায়িদের নিকট আরেকদফা বিক্রয় করে বিএনপির প্রভাবে লুটেছেন অর্ধ শত কোটি টাকা।
সীমান্ত হাওর জনপদেও মানুষজনের অভিযোগ ইজারাবিহিন সীমান্ত নদী কলাগাঁও ছড়া নদী থেকে সরকারি মূল্য, রাজস্ব ভ্যাট আয়কর ছাড়া এভাবে কয়েক শত কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ খনিজ বালি প্রকাশ্যে শামসুদ্দিন-কয়লা চোরাকারবারি, চাঁদাবাজ চক্রের হোতা, মামলার পলাতক আসামি হাবিবুর রহমান হবি দুশ্যমান চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পথে থানার তাহিরপুর থানার ওসি, টেকেরঘাট অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ, টু-আইসি (অফিসার) যখন যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তহশীলদার, উপজেলা প্রশাসন রাষ্ট্রীয় সম্পদ কয়েক কোটি ঘনফুট খনিজ বালি চুরিতে কোন বাধা প্রদান বা প্রতিরোধ করেননি। ইতিপুর্বে অপারেশন ডেভিল হান্ডে কলাগাঁও’র আওয়ামী লীগের এক নেতা স্বর্ণ, মুদ্রাপাচারকারিকে থানা পুলিশ আটকের পর সামুসুদ্দিন ও তার লালিতরা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বিনিময়ে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় ওই ডেভিলের নিকট থেকে।
শুক্রবার উপজেলার কলাগাঁও, চারাগাঁও, জঙ্গলবাড়ি, বাঁশতলা, চারাগাঁও সংসারপাড়,মাইজহাটি এ সাত গ্রামের হাওর সীমান্ত জনপদে থাকা মানুষজন জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আনিসুল হকের প্রভাবে শামসুদ্দিন, শামসুদ্দির পরিবারের লোকজন, হাবিবুর রহমান হবি আওয়ামী সরকার পতনের পর রীতিমত গ্রামগুলোতে শাসন শোষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ দিয়ে নিরীহদের গ্রেফতার, টাকার বিনিময়ে আওয়ামী ঘরানার লোকজনকে পুলিশি গ্রেফতার থেকে রক্ষা, ব্যবসায়িদের নিকট থেকে মামলায় জড়িয়ে দেয়ার ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা, সালিসের নামে, কয়লা, চুনাপাথর, গবাধিপশু, মাদক, কসমেটিকস সহ সব ধরণের সীমান্ত চোরাচালান, চাঁদাবাজি,খনিজ বালি চুরি করে রাতারাতি কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন হাতুরে চিকিৎসক শামসুদ্দিন,তার পরিবারের সদস্যরা, হাবিবুর রহমান হবি চক্র। এক সময় মাছ তরকারি কেনার টাকা না থাকলে ছেলে, ভাতিজা ভাই সহ শামসুদ্দির পরিবাওে কেনা হয়েছে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় নতুন চারটি মোটরসাইকেল, নতুন করে আমদানিকারক হওয়ায় বিভিন্ন ব্যাংকে অস্বভাবিক পরিমাণ টাকার লেনদেন রয়েছে হাতুড়ে চিকিৎসক শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে। মামলা হামলা পুলিশী হয়রানী ভয়ে হঠাৎ আলাদীনের ছেড়াগ পাওয়া শামমুদ্দিন, তার পরিবারের লোকজন হাবিবুর রহমান হবি চক্রের অপরাধ-অপকর্ম লুপাটের ব্যাপারে এলাকার কেউ ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
সম্প্রতি শামসুদ্দিনের ভাই, ভগ্নিপতি তার অনুসারীদের নিকট থেকে ডাকাতির ২০ গবাধিপশু (গরু) উদ্ধারের পর আলোচনায় আসেস শামসুদ্দিন চক্রের নানা অপরাধ কর্মকান্ডের ঘটনাবলি।
তাহিরপুর উপজেলার উওর শ্রীপুর ইউনিয়ন যুবদলের সহ সভাপতি চারাগাঁও সংসার পাড়ের বাসিন্দা (মামলার পলাতক আসামি) হাবিবুর রহমান হাবি ওরফে কাইল্যা হাবি বলেন, সব কিছু ভাল জানেন নেতা শামসুদ্দিন।
শুক্রবার উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সীমান্ত গ্রাম কলাগাঁও’র পল্লী চিকিৎসক শামুসুদ্দিনের নিকট এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, আমরা এসবের কাছেই যাইনা, আমার ভাই -ভাতিজা হামলা বা বালি চুরির সাথে জড়িত না। অন্যান্য অভিযোগ প্রসঙ্হে হানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন কে বলে এসব কথা, এগুলো বিশ্বাস করবেন না।
শুক্রবার সুনামগঞ্জ -১ (তাহিরপুর-ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-মধ্যনগর) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আনিসুল হকের নিকট এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চেয়ে একাধিবার মুঠোফোনে কল করা হয়।