শান্তিরক্ষা মিশনের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বছরে ৮৫ বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব
নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ ও অবদান আজ বিশ্ব স্বীকৃত। শান্তিরক্ষা মিশনের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৮৫ বিলিয়ন ডলার আয় করতে সক্ষম বলে দাবি করেছেন সিএলএনবি’র চেয়ারম্যান এবং বৈষম্য বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবার কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হারুনূর রশিদ। ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ (বুধবার) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব সম্মুখে বেনিন শহীদ শান্তিসেনা দিবস উপলক্ষে সিএলএনবি ও শহীদ পরিবার কল্যাণ পরিষদের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন। উল্লেখ্য, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়া ও সিয়েরালিয়ন থেকে শান্তি মিশন সমাপ্ত করে ১৫ সেনা কর্মকর্তা দেশে ফেরার পথে ২০০৩ সালে ২৫ ডিসেম্বর বেনিন সাগর উপকূলে বিমান দুর্ঘটনায় শহীদ হন।
হারুনূর রশিদ বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সামরিক ও পুলিশ সদস্য পাঠানো দেশ বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের ১২টি দেশে বাংলাদেশের প্রায় ৭ হাজার শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্বের ৪০টি দেশের ৬৩টি মিশনে প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৬ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ১৯৮৮ সন এ পর্যন্ত প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। উল্লেখ্য, অবসরপ্রাপ্ত শান্তিরক্ষা সেনাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরো প্রায় ২ কোটি লোকের বিদেশে কর্মসংস্থান সহ বৎসরে প্রায় ৮০—৮৫ বিলিয়ন ডলার আয় করার সুযোগ রয়েছে।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তাগণ বলেন, আমাদের গৌরব বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তারা কাজ করছেন। সংঘাতময় দেশে শান্তি স্থাপন, দুর্গতদের উদ্ধার, আর্তের সেবা, অসুস্থ ও আহতদের সেবা ও দূর্গম এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশের ১৬৮ জনকে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। তাদের নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগ দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত। এ অবদানের কারণে জাতিসংঘ সহ বিশ্বের বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বেনিন শহীদ শান্তিসেনাদের নামের তালিকাঃ— লে. কর্নেল শামসুল আরেফিন, মেজর আব্দুর রহিম মিয়া, মেজর মির্জা এম এ বাতেন, মেজর ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, মেজর মোশাররফ হোসাইন, মেজর রওনক আক্তার, মেজর মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, ক্যাপ্টেন আরিফুর রহমান তালুকদার, ক্যাপ্টেন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন আলাউদ্দিন সর্দার, ক্যাপ্টেন রাকিবুল হাসান, ক্যাপ্টেন জাহিদুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মাহবুব ও সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সফিকুল ইসলাম।
আলোচনা শেষে শান্তিরক্ষা মিশনে মৃত্যুবরণকারী দেশের সব শান্তিসেনা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের রুহের মাগফেরাত—শান্তি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
শান্তি সমাবেশে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন কর্নেল (অবঃ) দিদারুল আলম বীর প্রতীক। আরও বক্তব্য রাখেন মহান মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা কমান্ডার তাফাকুননবী জৌলুস, আফ্রিকার সিয়েরা লিওন শান্তিরক্ষা মিশনের সাবেক চিফ কর্নেল (অবঃ) আশরাফ আল দ্বীন, জননেতা নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর, সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বাবলু, প্রবীন বামপন্থী নেতা রফিকুল ইসলাম, শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও ভোলা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইয়ের লেখক কালাম ফয়েজী, সমাজসেবক সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহিন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, ঐক্য পার্টির সভাপতি লেঃ কর্নেল (অবঃ) আবু ইউসুফ যোবায়ের উল্লাহ, নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, সমতা পার্টির আহ্বায়ক হানিফ বাংলাদেশী, শিক্ষক আব্দুর রহিম চৌধুরী প্রমুখ।