
ভারতীয়দের ‘বাংলাদেশি’ বলে পুশ-ইন: দিল্লির ব্যাখ্যা চাইলেন হাইকোর্ট
নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর নামে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি নিধনে নেমেছে দিল্লি সরকার-মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের পর, ভারতীয় বাঙালিদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হচ্ছে-এমন অভিযোগ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম।
তার দাবি, ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও দিল্লিতে কর্মরত পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার ৬ জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের (অমিত শাহর দপ্তর) কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ, ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থান কী, তাও বিস্তারিত জানাতে হবে।
আগামী ১৬ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। শুনানি হবে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে।
গত ৯ জুলাই, পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামের অভিযোগ ছিল-বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের বাংলাদেশে পাঠিয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্যের পুলিশ। তিনি জানিয়েছিলেন, সম্প্রতি বীরভূম জেলার মুরারই ও পাইকর থেকে দুটি পরিবারকে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশ-ইন করা হয়েছে বলে তাদের কাছে পরিবারের তরফে অভিযোগ এসেছে।
তার অভিমত, যদি সত্যিই অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি ধরা পড়ে, তাদেরও কি এভাবে পুশ-ইন করা যায়? নিয়ম মেনে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোকে আমি সমর্থন করি। কিন্তু ভারতীয় প্রমাণ থাকার পরেও পশ্চিমবঙ্গের বহু পরিযায়ী শ্রমিককে বিজেপি শাসিত রাজ্যে আটক করে রাখা হচ্ছে। আমরা আইনের পথে লড়ছি। পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক ভাইবোনদের জন্য আমাদের লড়াই জারি থাকবে। কিন্তু যারা (বিজেপি) সারাক্ষণ দেশপ্রেমের কথা বলেন, তারা কেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সহানুভূতি দেখাচ্ছেন না? এর নেপথ্যে আরও বড় কোনো চক্রান্ত নেই তো?
এ বিষয়ে বীরভূম জেলার মুরারই গ্রাম প্রশাসন (পঞ্চায়েত) প্রধান নিতু রবিদাস জানিয়েছেন, আমাদের এলাকার বাসিন্দাদের আটক করে নাগরিকত্ব প্রমাণের চিঠি চেয়েছিল দিল্লি প্রশাসন। সেসব নথি পাঠালেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
দুই পরিবার হলো-পাইকর থানার অন্তর্গত সুইটি বিবি (৩৩), কুরবান শেখ (১৫), ইমাম শেখ (৫); এবং মুরারই থানার ধীতোরা গ্রামের দানিস শেখ (২৯), সোনালী বিবি (২৬) ও সাবির শেখ (৫)। এই দুই পরিবার দিল্লিতে বহু বছর ধরে ইট ভাঙার কাজে যুক্ত।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের ১৮ জুন দিল্লির কেএন কাটজু থানা এলাকায় ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। এরপর আটক ব্যক্তিরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়, বাংলাদেশি সন্দেহে তাদের আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। দ্রুত তাদের মুক্ত করতে যেন পরিবারের সদস্যরা দিল্লি চলে আসেন।
খবর পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন। দিল্লিতে পৌঁছনোর পর থানা থেকে জানানো হয়-যাদের আটক করা হয়েছিল, তাদের বিএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং তারা বাংলাদেশে পুশ-ইন হয়ে গেছে। তবে, পশ্চিমবঙ্গের কোন সীমান্ত এলাকা দিয়ে তাদের পাঠানো হয়েছে, সে বিষয়ে থানার পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের।
প্রসঙ্গত, দিল্লিতে আম আদমি পার্টিকে পরাজিত করে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী মমতার অভিযোগ, বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তার নেতৃত্বে প্রশাসন বাঙালি নিধনে নেমেছে। বেছে বেছে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।