ডার্ক মোড
Tuesday, 17 September 2024
ePaper   
Logo
বৈষম্যহীন মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলামের ১০ দফা প্রস্তাব

বৈষম্যহীন মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলামের ১০ দফা প্রস্তাব

যুক্তরাষ্ট্র ব্যুরো

জাতিসংঘের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা টিমের সাবেক প্রধান এবং জাপানের এশিয়ান গ্রোথ ইন্সটিটিউটের ভিজিটিং প্রফেসর বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের মূল আকাঙ্খা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের অভিপ্রায়ে তাঁর দীর্ঘ গবেষণামূলক ১০ দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেছেন।

গত ২৪ আগস্ট শনিবার নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে একটি মিলনায়তনে প্রগ্রেসিভ ফোরাম আয়োজিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মর্তুজা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা কতখানি কিভাবে বাস্তবায়িত হবে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ছাত্র-জনতার বৈষম্যহীন সমাজের আকাঙ্খাকে পাশ কাটিয়ে ৫ আগস্টের বিজয়কে নেহায়েত ক্ষমতার হাতবদলের উপায় হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিগত সরকারের অপকর্মকে ব্যবহার করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে লঘু এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে অস্বীকার করার সচেতন একটি প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গোলাম মর্তুজা উল্লেখ করেন, প্রতিক্রিয়াশিল সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহ পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রগ্রেসিভ ফোরাম এমন আলোচনার মধ্যদিয়ে তরুণ ছাত্র-সমাজের আত্মত্যাগের সফল একটি পরিসমাপ্তি দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেন আলোচকরা।

সেমিনারের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. নজরুল ইসলাম। এগুলো হচ্ছে : (১) অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস (২) সুশাসন অর্জন (৩) গণতন্ত্রের মানোন্নয়ন ও আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন (৪) পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা (৫) গ্রাম পরিষদ গঠন (৬) ভৌগোলিক বৈষম্যের অবসান (৭) সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি (৮) নারী, শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রদান (৯) সার্বজনীন সামরিক শিক্ষার প্রবর্তন এবং (১০) সার্বভৌমত্ব শক্তিশালীকরণ ও নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতির অনুসরণ।

ড. নজরুল তাঁর ১০ দফা পরিকল্পনা/ কমসূচির ওপর বিস্তারিত আলোচনাকালে উল্লেখ করেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের যে চূড়ান্ত পরিণতি ৫ আগস্ট হলো তার পরিপ্রেক্ষিতে এই ১০ দফা কর্মসূচির প্রাসঙ্গিকতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ হচ্ছে আমরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিয়েই শুরু করতে পারি। সেখানে লেখা আছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছে। সেজন্যেই এখন বৈষম্যবিরোধী বলা হচ্ছে, সেটি কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের শুরুতেই উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তার পরের ৫০/৫২ বছরে বাংলাদেশ যেদিকে এগিয়েছে তাতে কিন্তু সেই সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সামাজিক ন্যায় বিচার কতটা হয়েছে সেটিও বলা কঠিন। সেজন্যেই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে এই সামাজিক আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে। আন্দোলনটি কোটা সংস্কার দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে তা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হিসেবে অভিহিত হয়েছে এবং তার মধ্যদিয়েই অনেক বেশী ছাত্র-জনতার সম্পৃক্ততা ঘটেছে।

গোটাবিশ্বের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণার আলোকে বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ বলতে কী বুঝায়, এর অর্থনীতি কি, এটার সমাজ কি, রাজনীতি কি সে ব্যাপারে কিন্তু স্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। এখন আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন জনে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন। হয়তো আমরা আশা করতে পারি যে এই আলাপ-আলোচনার মধ্যদিয়েই জিনিসটা কিছুটা পরিণতি পেতে পারে। তবে সেটা কতটা পাবে, এবং পরবর্তীতে তা কী ধরনের ঘটনাবলি দ্বারা পরিচালিত হবে, এই সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায় বিচারের লক্ষ্যটা অর্জিত হবে কিনা সেটিও এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত। মোট কথা হচ্ছে এই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে যে করণীয় সেটাও কিন্তু স্পষ্ট নেই।

ড. নজরুল বলেন, আমার কাছে এটা খুশীর বিষয়, যে করণীয়গুলো আমি অনেক আগেই বিকশিত করেছিলাম বা ফম্যুলেট করেছিলাম, সেগুলোও কিন্তু এই বৈষম্যবিরোধী সমাজের যে আকাঙ্খা তা পূরণের জন্যে খুবই উপযোগী। কারণ এখোন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোন করণীয় নির্ধারিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সেই শ্যুনতা পূরণের জন্যে আজকের এই আলোচনাটি এবং বক্তব্যগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আমি মনে করছি।

ড. নজরুল বলেন, আমার ১০ দফা কর্মসূচির প্রথমেই রয়েছে অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস। এটা সকলেই জানেন যে, অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে সমাজ, রাজনীতি। সেজন্যে অর্থনীতির বৈষম্যদিয়েই আলোচনার শুরু। দু’নম্বরে রয়েছে সুশাসন অর্জন। আপনারা জানেন যে, আমাদের দেশের পরিশাসনগত যে পরিস্থিতি তা খুবই ন্যাক্কারজনক অবস্থায় পৌঁছেছিল। সেখান থেকে উঠে আসার খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তিন নম্বরে রয়েছে রাজনৈতিক দিক এবং আপনারা সকলেই জানেন না, গণতন্ত্র নিয়ে দশকের পর দশক ধরেই একটা সংকট চলছে। এবং আমরা স্থায়ী অথবা স্থিতিশীল গণতন্ত্রে আমরা পৌছাতে পারিনি।

সে লক্ষ্যেই এখানে গণতন্ত্রের মানোন্নয়ন ও আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তণের কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এ দাবি আগেও করা হয়েছে। এখানে আমি ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা করেছি। চার নম্বরে রয়েছে পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা। ড. নজরুল বলেন, আজ আমরা এমন এক সময়ে বসেছি যখোন বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বিরাট একটি এলাকা প্লাবিত, মৃত্যুর সংখ্যাও দিনদিনই বাড়ছে। এতে এটাই দৃশ্যমান হচ্ছে যে আমাদের দেশটা পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই বেশী সংকটজনক একটি পরিস্থিতিতে নিপতিত হয়েছে বাংলাদেশ।

জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা যেসব দেশ সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এমন একটি ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে কীভাবে আমরা রেহাই পেতে পারি, পরিবেশটাকে রক্ষা করতে পারি, জলবায়ু পরিবর্তনের মুখ থেকে দেশটিকে সরিয়ে আনতে পারি, সেটিও বিরাট একটি চ্যালেঞ্জ। চলমান বণ্যার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব কথা হচ্ছে সেগুলো খুব একটা কার্যকর বলে মনে করছি না। কেউ কেউ বলছেন, বন্যার পূর্বাভাস ভারত থেকে আরো আগে পেতে হবে। কিন্তু পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে এক নম্বর হচ্ছে যে, আগেই যদি পেতেন তাহলে কি করতেন? পূর্বাভাস ভারত কী দেবে? এখোন তো কোথায় কখন কতটুকৃ বৃষ্টি হবে তা ওয়েবসাইটে গেলেই জানা যায়। সেই পরিমাণ বৃষ্টি হলে কী তার প্রভাব-তার পরিপ্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেবেন সেটি কীভাবে সামলাবেন সে ব্যাপারে আপনার কী করণীয় তা কিন্তু কেউ খুব একটা বলছেন না।

ড. নজরুল বলেন, ১৯৫০ সাল থেকেই বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি ইত্যাদি নিয়ে কথা হচ্ছে কিন্তু তা মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা শুনিনি কিংবা পদ্ধতির ব্যাপারেও জানা নেই। সেজন্যে আমি বলেছি যে, বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন লাগবে।

ড. নজরুল বলেন, ৫ নম্বরে রয়েছে গ্রাম পরিষদ গঠন। এটার পটভূমি হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশে এবং ওই উপমহাদেশে সমাজের একক ছিল-গ্রাম, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রামভিত্তিক একটি প্রশাসনিক কাঠামো বিরাজ করতো। ৬ নম্বরে ভৌগালিক বৈষম্যের অবসান। ৭ নম্বরে সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি। অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে আমরা শিক্ষাক্ষেত্রেও বৈষম্য দেখি। বাংলাদেশের শিক্ষা এখোান তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছে। একটি হচ্ছে অত্যন্ত ধনীদের জন্যে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা। আরেকটি হচ্ছে মাঝারি ধরনের অর্থাৎ বাংলা মিডিয়াম। আরেকটি হচ্ছে অত্যন্ত দরিদ্রদের জন্যে মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা ইত্যাদি যেখানে ছেলে-মেয়ে যায়।

এভাবেই শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রিখন্ডিত হয়ে পড়েছে। এভাবে তা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থায় পরিণত হয়ে নেতিবাচক ফলশ্রুতি ঘটছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাঙালি ছাড়াও অনেক নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠি আছে এবং স্বাধীনতার পরে এই নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠিগুলোকে কিন্তু বাংলাদেশেল সংবিধানে স্বীকার করা হয়নি। এটা খুব একটা সঠিক ছিল না। বিশেষ করে যে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো সেই রাষ্ট্র, সেই সরকার কীভাবে ওই দেশের মধ্যেকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির আত্ম নিয়ন্ত্রণাধিকারকে অস্বীকার করলো?

ড. নজরুল বলেন, অষ্টম পয়েন্টে রয়েছে নারী, শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রদান। নারীদের বিষয়টা হচ্ছে, আমাদের দেশে নারীরা অনেক অগ্রসর হয়েছেন। শ্রমশক্তির মূল অংশটি এখোন নারী। নারীরা এখন অর্থনীতি ও সামাজিক প্রশাসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত। এমন প্রগতি ও অর্জনের মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক দিকও আছে। নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে অনেক কথা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা হয়। অর্থাৎ একটা দ্বৈততাপূর্ণ পরিস্থিতি দেখি আমাদের দেশের নারীদের ওপর গভীর পর্যবেক্ষণে। কাজেই সেখানে অনেক কিছু করার আছে। এখোনও প্রসবকালে নারীর মৃত্যু, অন্যান্য ক্ষেত্রের পরিস্থিতিতেও বৈষম্য আছে।

আমাদের দেশে জেন জি পরিসংখ্যান অত্যন্ত করুণ। বাংলাদেশের ১৫০/১৬০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে যারা বের হচ্ছে তার বিরাট অংশ হচ্ছে বেকার। তারা চাকরি পায় না। অনেকে এমন কিছু পদে তারা আবেদন করছেন যেটার যোগ্যতা লাগে এসএসসি পাশ। অথচ গ্র্যাজুয়েশন অথবা মাস্টার্স ডিগ্রি ধারীরাও সেখাানে আবেদন করছেন। এরফলে উচ্চ শিক্ষিত তরুণ সম্প্রদায়ের মেধাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। উদ্যম, স্পৃহা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কলেজ/ভার্সিটিতে চার বছরের কোর্স সম্পন্নের পর যদি তাদেরকে এসএসসি পাশকারিদের চাকরিতে ঢুকতে হয়, তাহলে লাভটা হলো কি?

ড. নজরুল বলেন, নয় নম্বরে আমি সার্বজনীন সামরিক শিক্ষার প্রবর্তনের কথা বলেছি। এটা হয়তো অনেকের ভালো লাগবে না, অথবা পছন্দ করবেন না। আইডিয়া হচ্ছে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা যখোন এইচএসসি পাশ করবে, ১৮/১৯ বছর বয়সে তারা সবাই ৯ মাসের মিলিটারি ট্রেনিংয়ে যাবে। ট্রেনিং শেষ হলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্যে যাবে। এটা করা দরকার ৬ কারণে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কথা আগে বলেছি, তার অবসানের পথ সুগম করে সামাজিক সংহতি বৃদ্ধিকল্পে এটার খুব প্রয়োজন।

তরুণ বছরের ছেলেরা ধনী-গরিব নির্বিশেষে তথা কোটি পতির ছেলে, কৃষকের ছেলে, রিক্সাওয়ালার ছেলে-সকলে যদি এক ছাউনিতে ৯ মাস বাস করে, প্রশিক্ষণ নেয়, একত্রে খাওয়া দাওয়া করে, তারফলে তাদের মধ্যে যে বন্ধন তৈরী করবে, ট্রেনিং শেষে নিজ নিজ শিক্ষা অথবা কর্মক্ষেত্রে গেলেও সেই নেটওয়ার্ক অটুট থাকবে এবং তা আমাদের সমাজে ধনী আর গরিবের মধ্যেকার বিরাট রকমের ব্যবধান ঘুচে যাবে। দ্বিতীয়ত: আমাদের মিলিটারি প্রশিক্ষণের অনেক দিকই খুব ভালো। তা তরুণ বয়সে তারা পেলে তার প্রভাব বাকিটা জীবনে উজ্জীবিত করবে।

ড. নজরুল বলেন, সর্বশেষ ১০ নম্বরে রয়েছে সার্বভৌমত্ব শক্তিশালীকরণ ও নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতির অনুসরণ। বিশ্বায়নের এই যুগে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহার করতে গেলেও বৈদেশিক প্রভাব এসে পড়ে। আমাদের দেশের গ্যাস নিজেরা উত্তোলন করবো, ব্যবহার করবো-এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তা করা সম্ভব হয় না। বিদেশিরা চাপ দেয়, অঙ্গুলি নির্দেশনা দেয় রপ্তানির ব্যাপারে। কয়লার ক্ষেত্রেও চাই। বিদেশিরা এতে বলছে যে, তারা উত্তোলন ও রফতানী করবে। ৬% রয়েল্টি দেয়ার কথা বলবে।

বিদেশি শক্তির এমন প্রভাব এগিয়ে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। বৈদেশিক নীতি বাদ দিয়ে জাতীয় সার্বভৗমত্ব অটুট রেখে নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করতে পারছেন না। প্রশ্ন আসে যে, তাহলে কীভাবে এটা করবো? সাম্প্রতিককালে আমরা দেখলাম, একদিকে ভারত টানছে, আরেকদিকে রাশিয়া টানছে। একদিকে চীন টানছে, আরেকদিকে যুক্তরাষ্ট্র টানছে। এত টানাটানির মধ্যে আপনি কীভাবে সঠিক কাজটি করবেন? এবং এখানেই আমরা দেখলাম, সদ্য বিদায়ী সরকার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা করেছে। কিছু একে দিলাম, ওকে দিলাম, ব্যালেন্স করলাম ইত্যাদি।

তবে সর্বশেষ আমরা দেখলাম, আখেওে এই কৌশলটা কাজে দেয়নি। আমরা দেখেছি তিস্তার পানি নিয়ে কত কথা। ভারত, চীন ইত্যাদি। শেষে অসন্তুষ্ট হলো চীন-তাও দেখেছি। তাই এখানে একটা নীতি-নিষ্ঠ অবস্থান থাকতে হবে, কৌশলে হবে না। কৌশলে হবে না। এই নীতিটা-দেশটাকে যারা প্রভাবিত করতে চায় সম্পদ ব্যবহার করার জন্য, তাদের কাছে যেমন পরিস্কার করে দিতে হবে, দেশবাসীকে পরিস্কার করে দিতে হবে। এরফলে দেশবাসী জানবে কেন একটি প্রকল্পের দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানীকে দেয়া হয়েছে। এরফলে ওই প্রকল্পে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সমগ্র জনগোষ্ঠি সরকারের পক্ষে অবস্থান নেবে। ।

এসব করণীয় একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। যেমন, অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাসের জন্য সুশাসন প্রয়োজন, আবার সুশাসন অর্জন সহজ হবে যদি অর্থনীতিতে বৈষম্য হ্রাস পায়। এদিকে সুশাসন এবং সামাজিক সংহতির জন্য আনুপাতিক নির্বাচন প্রয়োজন। আবার দেশের সার্বভৌমত্ব শক্তিশালী করার জন্য সামাজিক সংহতি প্রয়োজন। সেজন্য করণীয়র যে মূলধারা উপরের তালিকায় প্রস্তাবিত হয়েছে সেটা অলঙ্ঘনীয় কিছু নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো এগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের সঠিক অনুধাবন। আরও লক্ষণীয়, প্রতিটি করণীয়ের অভ্যন্তরে বহু উপ-করণীয় চিহ্নিত করা যেতে পারে। এই আলোচনার বিভিন্ন অনুচ্ছেদের আলোচনা থেকেই তা বেরিয়ে আসবে। সে দৃষ্টিকোণ থেকে উল্লিখিত করণীয়সমূহকে একটি মোটা দাগের তালিকা বলেই ভাবা যেতে পারে।

আয়োজক সংগঠনের অন্যতম কর্মকর্তা জাকির হোসেন বাচ্চু বাংলাদেশের এই ক্রান্তিকালে ছাত্র-জনতার বৈষম্যহীন মানবিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙ্খাকে বাস্তবে রুপ দেয়ার জন্য কী ধরনের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন তা স্পষ্ট করা অত্যন্ত জরুরী এবং সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হাফিজুল হক এবং আলোচনায় আরো অংশ নেন ফোরামের উপদেষ্টা নাসিমুন্নাহার নিনি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদুল ইসলাম।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন