ডার্ক মোড
Friday, 10 January 2025
ePaper   
Logo
বান্দরবানে সড়ক সংস্কারের নামে চলছে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন

বান্দরবানে সড়ক সংস্কারের নামে চলছে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন

সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান

বান্দরবানে গ্রামীন সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নের নামে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে রাস্তার দু'পাশে থাকা শত-শত গাছ। এমন অভিযোগ উঠেছে আমানউল্লাহ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে বান্দরবান জেলার সদর উপজেলার বান্দরবান-কেরানীহাট প্রধান সড়ক হতে রেইচা- গোয়ালিয়াখোলা পর্যন্ত ৭.১৫০ কিঃমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তায়।

সরেজমিনে জানা যায়, এই এলাকাটি একাধারে পাহাড়-টিলা, সমতল ভ‚মি, কৃষি জমি এবং সাঙ্গু নদীর সাথেও সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে। তাই এখানে সব ঋতুতেই ফসল ফলে। তাই সড়কের আশেপাশের এলাকাটি জেলার সর্বোচ্চ সমতল তথা কৃষিভূমির জন্য বিখ্যাত বলেই স্থায়ীদের মুখে এলাকাটি বান্দরবানে "হৃদপিন্ড"বা বান্দরবানের সবজী উৎপাদনের রাজধানী নামেও পরিচিত। এই রাস্তার দু'পাশে বেষ্টিত আছে হাজারের অধিক বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ। রাস্তার দু' পাশে গাছগুলো দাঁড়িয়ে বহু বছর ধরে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে তেমনি সমতল মাঠ জুড়ে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজির ক্ষেত। রাস্তার দু'পাশে থাকা গাছের মধ্যে থেকে ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে, অনেকটা গাছে ডালপালা ছেটে রাখা হয়েছে। অনেক গাছের গুড়ি স্ক্যাভেটর দিয়ে উপড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তা সংস্কার কিংবা স¤প্রসারনের কাজ শুরু হওয়ার আগেই ৫শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছেন আমানউল্লাহ নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি চক্র। গাছগুলো গোড়ালি থেকে কেটেছে এই চক্রটি। কাটার পর স্কেভেটর দিয়ে গাছের গুড়ি উপড়িয়ে ফেলে, সেখানে মাটি ভরাট করে দিয়েছে। যেন গাছ কাটার পর গাছের চিহ্ন-নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

এদিকে স্থানীয়দের দাবী দুই বছর আগেও এই রাস্তার দু'পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমারোহে সবুজ বেষ্টনিতে মোড়ানো ছিল। কিন্তু রাস্তা স¤প্রসারণের নামে ২৫ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সী বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলো নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে। যার ফলে বৃক্ষ নিধনের পাশাপাশি এলাকার সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও এমন গাছ হতে আরো ৫০ বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান স্থানীয়রা।

বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ''এলজিইডির অর্থায়নে ৩০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বান্দরবান-কেরানীহাট প্রধান সড়ক হতে রেইচা- গোয়ালিয়াখোলা পর্যন্ত ৭.১৫০ কিঃমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তাটি স¤প্রসারণ পূর্বক দৃঢ় ও উন্নয়ন করন পরিকল্পনায় একটি প্রকল্প হাতে নেয় এবং কাজটি চলমান রয়েছে।

গাছ কর্তন কাজে নিয়োজিত শ্রমিক নজরুল ও মোহাম্মদ রফিক জানান, আমাদেরকে আমানউল্লাহ আমান নামে এক ব্যবসায়ী গাছগুলো কাটার জন্য বলেছেন। আমরা ৪দিন ধরে গাছ কাটতেছি। ৪ দিনে ৫৫-৬০টার মত গাছ কাটতে পেরেছি। রাস্তার দু'পাশের সবকটি গাছ কাট হবে বলে জানান শ্রমিকরা। তারা আরো বলেন, আমরা দিনের বেলায় গাছের ডালপালাগুলো কেটে রাখি। রাতে এসে গাছের গোড়ালি থেকে কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যায়। আর একদল, পরের দিন স্ক্যাভেটর দিয়ে গোঁড়ালি গুলো উপরিয়ে ফেলে মাটি দিয়ে ভরাট করে রেখে দেয়। যেন সহজে গাছকাটার চিহ্ন বুঝতে না পারে।

এই গাছগুলোকে কাটার জন্য নিলামের মাধ্যমে অনুমতি পেয়েছেন দাবি করে গাছ কর্তনকারী আমানউল্লাহ আমান বলেন, এই রাস্তাটি সম্প্রসারণের জন্য যখন বাজেট প্রণয়ন করা হয়, তখন বান্দরবান সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবুখয় মারমা নেতৃত্বে ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে "গাছগুলো কাটার জন্য নিলামে তোলা হয়। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নিলামে ১০ লক্ষ টাকায় রাস্তার দু'পাশে মোট ১ হাজারটি গাছ কাটার জন্য অনুমতি পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বান্দরবান জেলার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাবু খয় মারমা বলেন, জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে রেইচা-গোয়ালাখোলার রাস্তাটি উন্নয়ন ও স¤প্রসারনের জন্য বাজেট আসার কথা জানিয়ে উপজেলা প্রশাসন, এলজিইডি থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর গত ১৮ নভেম্বর ২০১৮ইং তারিখে রেইচা- গোয়ালিয়া খোলার রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলো কাটার জন্য নিলামে ডাক দেওয়া হয়। নিলামে- আমানউল্লাহ আমান নামে রেইচার স্থানীয় গাছ ব্যবসায়ী ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিলামে বিজয়ী হয়। কাছ কাটার পূর্বে সে আমার হাতে- ৫ লক্ষ টাকা নগদে দেয় এবং বাকি টাকা পরে দিবে বলেই কাছ কাটা শুরু করেন আমানউল্লাহ। গাছকাটার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন, বনবিভাগ বাধা দিলে, উপজেলা প্রশাসন, এলজিইডি, ইউনিয়ন পরিষদ ও বনবিভাগকে বিবাদী করে কোর্টে মামলা করেন এই আমানউল্লাহ।

বান্দরবান সদর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিপু বলেন, রেইচা-গোয়াখোলা রাস্তাটি স্থানীয় প্রশাসনের অধীন। সেখানে বনবিভাগ অংশীজন নয়। রাস্তার দু'পাশে গাছকাটাকে কেন্দ্র করে আদালতে মামলা চলমান আছে। তাছাড়া ১৯৭০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে রোড পারমিট আইন অনুযায়ী "পাহাড়ে যে কোন ধরনের গাছ-বাঁশ পরিবহনের জন্য বনবিভাগ কর্তৃক পরিবহনের অনুমতিপত্র ছাড়া কোন রূপ পরিবহন করা যাবে না।" তাই কেউ যদি বন বিভাগের অনুমতি ব্যতীত গাছ পরিবহন করে তাহলে, পরিবহন আইনানুসারে বন বিভাগ ব্যবস্থা নেবে।

বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সিনিয়র প্রকৌশলী পারভেজ সারোয়ার হোসেন বলেন, এলজিইডি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। যেহেতু রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্যই কাজ করে, সেহেতু রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের জনগণ এবং পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ "এলজিইডি" করবে না এবং আমরা কাউকে গাছ কাটা কিংবা পরিবেশ ধ্বংসের জন্য সুপারিশ বা অনুমতি দিতে পারিনা বলে জানান তিনি।

 

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন