দিল্লিতে ভোট আজ, হ্যাটট্রিক জয়ে নজর কেজরিওয়ালের দলের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের দিল্লির রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। এবারের ভোটে লড়াই হতে চলেছে ত্রিমুখী। একদিকে যেমন ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া আম আদমি পার্টি, সেখানে ক্ষমতা দখল করতে চেষ্টার কোনও কমতি রাখছে না বিজেপি ও কংগ্রেস।
বহু বছর পর ফের দিল্লির শাসনভার পাবে বলে বিজেপি আশা করছে। তবে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় বলা হচ্ছে, পাঁচ বছর আগের তুলনায় আসন কমলেও দিল্লিতে টানা তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসতে চলেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ)।
কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপি নেতাদের পাল্টা দাবি, ২৮ বছর পরে আবার দেশের রাজধানীর দখল নিতে চলেছেন তারা। এই দাবি ও পাল্টা দাবির মধ্যেই বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজ্যটির ৭০টি বিধানসভা আসনে তাদের রায় দিচ্ছেন দিল্লিবাসী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। এদিন দিল্লির ৫৮টি অসংরক্ষিত এবং ১২টি সংরক্ষিত (তফসিলি জাতি) বিধানসভা আসনে ৬৯৯ জন প্রার্থীর ‘ভাগ্য’ নির্ধারণ করবেন ১ কোটি ৫৬ লাখ ভোটার।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মোট ১৩ হাজার ৭৬৬টি বুথে হচ্ছে ভোটগ্রহণ। দিল্লিতে আপ, কংগ্রেস এবং মায়াবতীর বিএসপি (বহুজন সমাজ পার্টি) ৭০টি আসনেই লড়ছে। অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে ৬৮টি আসনে।
একটি করে আসন ছেড়েছে এনডিএ’র দুই সহযোগী, জেডিইউ এবং এলজেপি (রামবিলাস)-কে। এছাড়া তিনটি বাম দল পৃথক ভাবে আটটি আসনে লড়ছে। সিপিআই ছয়, সিপিএম দুই এবং সিপিআইএমএল লিবারেশন দু’টিতে।
সংখ্যালঘুপ্রধান দু’টি আসন, ওখলা এবং মুস্তাফাবাদে লড়ছে তেলঙ্গানার হায়দরাবাদের সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’। আলাদা ভাবে ৩০টি আসনে লড়ছে বিজেপির সহযোগী অজিত পওয়ারের এনসিপি।
দিল্লির দু’টি বিধানসভা আসনে এ বার চমকপ্রদ লড়াই হতে চলেছে। নয়াদিল্লি কেন্দ্রে আপ প্রধান কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে প্রয়াত সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সাহিব সিং বর্মার ছেলে সাবেক সাংসদ প্রবেশকে। ওই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী করেছে আরেক প্রয়াত সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের ছেলে তথা সাবেক সাংসদ সন্দীপকে।
অন্যদিকে, কালকাজি আসনে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনার বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে লড়বেন আরেক সাবেক সাংসদ রমেশ বিধুরি। সেখানে কংগ্রেসের প্রার্থী সাবেক আপ বিধায়ক তথা বর্তমানে মহিলা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী অলকা লাম্বা।
সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকে তার পুরোনো আসন পটপরগঞ্জের বদলে এ বার জঙ্গপুরায় দাঁড় করিয়েছে কেজরিওয়ালের দল। সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী দিল্লির সাবেক মেয়র কংগ্রেসের ফারহাদ সুরি এবং সাবেক বিধায়ক বিজেপির তারবিন্দর সিং মারওয়াহা।
৭০ আসনের দিল্লিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য পেতে হবে ৩৬টি আসন। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়ালের দল প্রায় সাড়ে ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ৬২টি আসন জিতেছিল। বিজেপি জিতেছিল ৮টিতে। কিন্তু ভোট পেয়েছিল সাড়ে ৩৮ শতাংশ। আর কংগ্রেস সেসময় শূন্য হাতে ফিরেছিল মাত্র ৪.২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে।
তারও আগে ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে ৫৪ শতংশের বেশি ভোট পেয়ে ৬৭টি আসনে জিতেছিল কেজরিওয়ালের দল। বিজেপি সেসময় ৩২ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট পেয়ে জয় পেয়েছিল তিনটিতে। আর কংগ্রেস সেবারও শূন্যে নেমে গেলেও সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি ভোট গিয়েছিল তাদের ঝুলিতে।
এবারের নির্বাচন কেজরিওয়ালের জন্য কার্যত অস্তিত্বের লড়াই। স্বচ্ছতার প্রতিমূর্তি হিসেবে ভারতীয় রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
কিন্তু আবগারি নীতি দুর্নীতি শুধু আপের দলগত ইমেজ নয়, ব্যক্তি কেজরিওয়ালের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। জেলেও যেতে হয়েছে তাকে। বিজেপির দুর্নীতির অভিযোগ, নাকি কেজরিওয়ালের পুরোনো ইমেজের প্রতি আস্থা রাখে দিল্লিবাসী, সেটাই এখন দেখার বিষয়।