তথ্য প্রযুক্তির ইতিবাচক সদ্ব্যবহারের পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন
মোঃ জাহিদুল ইসলাম
বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রযুক্তির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রযুক্তির অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। যেগুলো সত্যিকার অর্থে অত্যন্ত গুরুত্ববহ। ডিজিটাল প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যম গুলোকে যেমন- কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যার, বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও অ্যাপস ইত্যাদি দ্রুত যোগাযোগের অন্যতম বাহন হিসেবে গণ্য করা হয়। এজন্য প্রতিনিয়তই ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তির প্রতি মানুষের মনোযোগ এবং আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বে বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার তাই এই প্রযুক্তির ইতিবাচক সদ্ব্যবহার পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই জরুরী। আধুনিক সভ্যতা কিংবা ডিজিটাল যুগ যাই বলি না কেন তার উদ্ভব হয়েছিল মানুষের কল্যাণে।
যার হাত ধরে মানুষের জীবনযাত্রা অনেকাংশে সহজ থেকে সহজতর হয়ে পড়ে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠ তথ্যপ্রযুক্তি যেন প্রত্যেকের জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। চাইলেই এই অংশকে জীবন থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। প্রযুক্তির ব্যবহারে বেড়াজালে এমন ভাবে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে যেন প্রযুক্তির এই বেড়াজাল থেকে এখন বেরিয়ে আসা অসম্ভব। কিছুকাল আগেও যা মানুষের চিন্তার বাইরে ছিল প্রযুক্তির কল্যাণে তা এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। আমরা কল্পনায় অনেক কিছুই চিন্তা করতাম। বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহারই আমাদের এই কল্পনাগুলোর বাস্তবিক রূপ দান করছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা প্রযুক্তির সহযোগিতা ছাড়া একেবারেই সম্ভব নয়।
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির সদ্ব্যবহার তরুণ প্রজন্মের জন্য যেমন আশীর্বাদ হয়ে অবতীর্ণ হয়েছে ঠিক তেমনি এমনি ইতিবাচক ব্যবহার আরেক দিকে ধ্বংসের জাল বুনছে। প্রযুক্তির জনপ্রিয় সৃষ্টিগুলোর উপযুক্ত সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে দেশ ও জাতির প্রভূত উন্নতি ঘটানো সম্ভব। তাই আমাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করে সদ্ব্যবহারের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে হবে।
প্রযুক্তিকে ভালো কাজে ব্যবহারের মাধ্যমে নিজ ও দেশের কল্যাণে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। অন্যথায় প্রযুক্তির অপব্যবহার একদিকে যেমন নিজেকে নিঃশেষ করে দিবে ঠিক তেমনি দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করে দেবে। আজ একদিকে তরুণ সমাজ এবং শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেমন মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে অংশগ্রহণ, অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষামূলক সেমিনারে অংশ নিতে পারছে অন্যদিকে কিন্তু ক্ষতিকর ওয়েবসাইট ব্রাউজ, অনলাইন আসক্তিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার অসংখ্য সুযোগও রয়েছে। তাই প্রযুক্তির অপব্যবহার হতে নিজেকে দূরে রাখার জন্য স্বচ্ছ মানসিকতা তৈরি করা প্রয়োজন। আমাদেরকে সব সময় প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকগুলোর সদ্ব্যবহারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। প্রযুক্তির ইতিবাচক সদ্ব্যবহারের বিষয়ে আমাদের সব সময় সচেতন থাকতে হবে।
প্রযুক্তির উৎকৃষ্ট ব্যবহার মানব জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে প্রযুক্তির যাবতীয় ইতিবাচক দিক যেমন আমাদের ব্যবহার করতে হবে অপরদিকে ঠিক তেমনি নেতিবাচক দিককে পরিহার করতে হবে। প্রযুক্তির উৎকৃষ্ট ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে বিশ্ব এটাই বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা। তথ্য প্রযুক্তি বর্তমান যুগের এক অনবদ্য আশীর্বাদ। প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে ঘরে থেকে বাইরে প্রতিটি পদে রয়েছে এই তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া। এমনকি জীবন-মান সহজ থেকে সহজতর হয়েছে শুধু এই তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণেই। বিশ্বের প্রতিটি মানুষের আচার-আচরণে, কাজে-কর্মে, রুচি এবং চিন্তাতে জায়গা করে নিয়েছে এই তথ্য প্রযুক্তি।
তাই আমাদের প্রত্যেককেই এই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান দুনিয়ায় তথ্য প্রযুক্তি এমন একটি মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হয়েছে যা ছাড়া দৈনন্দিন জীবনের একটি মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা তথ্যপ্রযুক্তির গন্ডির মধ্যেই আবদ্ধ থাকি। শিক্ষা, চাকরি চিকিৎসাসহ জীবনের প্রতিটি জরুরি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির এই ব্যবহার জীবনকে যেমন করেছে সহজ, পৃথিবীকে যেমন এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। নতুন প্রজন্মের রঙিন শৈশব যেন তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারে কলুষিত না হয় এটাই আমাদের সবার কাম্য। প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারই আমাদের জীবনকে করতে পারে আরও অধিক গতিশীল, কর্মময়। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির সাথে সাথে।
তাই সকলকেই এ বিষয়ে মনে রাখতে হবে যে সৃষ্টি কখনো সৃষ্টিকারীর ঊর্ধ্বে নয়। এটা এক বাস্তবিক চিরন্তন সত্য কথা। বর্তমান বিশ্বের আধুনিক এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক মানুষ। সুতরাং একজন ব্যবহারকারীর মানসিকতার ওপর নির্ভর করে আজ এবং আগামীর প্রজন্মের জন্য এই তথ্য প্রযুক্তি কতটুকু আশীর্বাদ কিংবা অভিশাপ। তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তি ব্যবহারের ভালো দিকের পাশাপাশি যেসব খারাপ দিক রয়েছে তার প্রভাব মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন ইতিবাচক স্বচ্ছ মানসিকতা, পারিবারিক শিক্ষা ও সচেতনতা।
আমরা এমন এক নতুন যুগে বসবাস করছি যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি শুধু আমাদের বুঝতেই পারে না এর পাশাপাশি আমরা কী চাই এবং আমাদের উদ্দেশ্য কী তাও অনুমান করতে পারে। প্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপক প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বব্যাপীই। বিশ্বের উন্নত দেশের পাশাপাশি জনবহুল ও ভয়াবহ বেকারত্বের দেশেও প্রযুক্তি সাধ্যমতো ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে কোথাও বেকারত্বের সৃষ্টি হচ্ছে আবার কোথাও কোথাও প্রয়োজন হচ্ছে প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তির। বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং ব্যবহার বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক কালে প্রযুক্তির আবিষ্কারও হচ্ছে সর্বাধিক। সেক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ভিত্তিক প্রযুক্তি এগিয়ে রয়েছে। প্রযুক্তির কাজের উৎপাদন হার বেশি, নিখুঁত ও খুবই সাশ্রয়ী। তাই তথ্য প্রযুক্তির ইতিবাচক সদ্ব্যবহারে বেশি সফলতা পাওয়া যায়।
আধুনিক বিশ্বে যে হারে নিত্য নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার হচ্ছে সে হারে সেটা ব্যবহার করার দক্ষ লোক তৈরি করতে হবে। তা না হলে নতুন প্রযুক্তির শতভাগ সুফল পাওয়ার সম্ভাব হবে না। এর ফলে ব্যাপক ভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। অপরদিকে প্রযুক্তি যতোই কল্যাণকর হোক না কেন সুষ্ঠুভাবে তা ব্যবহার করতে না পারলে তার সুফল পাওয়া যাবে না। তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করার মতো প্রয়োজনীয় দক্ষ লোক তৈরি করতে হবে।
এতে যারা যতো সফল হবে তারাই ততো লাভবান হবে। প্রযুক্তি ছাড়া বর্তমান বিশ্ব কল্পনা করা অসম্ভব। আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে ঘিরে রয়েছে প্রযুক্তি। বিশ্বে এখন যে দেশ প্রযুক্তিতে যত বেশি উন্নত সে দেশ তত বেশি শক্তিশালী। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার যতটা কল্যাণকর এর অপব্যবহার তেমনই ভয়ংকর। তাই প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার এবং অপব্যবহার দুটো বিষয়েই আমাদেরকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার বা অপব্যবহার আমাদের শারীরিক-মানসিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। যা আমাদের মৌলিক চিন্তা করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই নিয়ন্ত্রণে থেকে প্রতিটি স্তরে প্রযুক্তির কল্যাণকর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক, নেটওয়ার্ক টেকনিশিয়ান (আইসিটি সেল) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।