ঘন কুয়াশায় মাঝ নদীতে যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ
বরিশাল ব্যুরো
ঘন কুয়াশায় মেঘনা নদীতে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যাত্রীবাহী দুইটি লঞ্চের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুটি লঞ্চগুলোর অগ্রভাগসহ বিভিন্ন কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
শনিবার রাত সোয়া ২টা থেকে আড়াইটার দিকে এমভি কীর্তনখোলা-১০ ও এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয় বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের উপ-পরিচালক ও নদী বন্দর কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক।
রোববার সকাল ১০টায় তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চের মধ্যে এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে সক্ষম হলেও এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ নামের অপর লঞ্চটি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি নিরাপদ স্থানে রাতভর নোঙর করে রাখা হয়।
পরে রোববার সকালে এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের ৫৮০ জন যাত্রীকে এমভি শুভরাজ-৯ লঞ্চের মাধ্যমে বরিশালে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, সকাল ১০টায় ঢাকা সদরঘাট দপ্তরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি সকালে যাত্রীদের নিয়ে নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছেছে। দুর্ঘটনার কারণে স্বাভাবিক সময়ের থেকে কিছুটা বিলম্বে লঞ্চটি ঢাকায় পৌঁছে।
বরিশাল থেকে ছেড়ে যাওয়া এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে কতজন যাত্রী ছিল সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের যাত্রী মনির হোসেন বলেন, তাদের বহনকারী লঞ্চটি মেঘনা নদী দিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আর গভীর রাতে নদীতে এত ঘন কুয়াশা ছিল, যে একহাত সামনেও দেখা যাচ্ছিলো না।
তিনি বলেন, “এর মাঝেই হঠাৎ করে বরিশালগামী এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের অগ্রভাগের সাথে আমাদের বহনকারী এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের অগ্রভাগের বিকট শব্দে সংঘর্ষ হয়।
“এতে উভয় লঞ্চের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে চালক কীর্তনখোলা ১০ লঞ্চকে তাৎক্ষণিক নদী তীরে নিয়ে ভাসিয়ে রাখে। পরে সবকিছু চেক করে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।”
তিনি আরও বলেন, “সংঘর্ষে এমভি কীর্তনখোলা ১০ লঞ্চের শুধু সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন নয়, লঞ্চটির সামনে রাখা যাত্রীদের ২০টির বেশি মোটরসাইকেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো যাত্রী হতাহতের খবর পাইনি।”
এদিকে প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের যাত্রী মেহেদী হাসান বলেন, “মাঝরাতে বিকট শব্দ আর লঞ্চ দুলে ওঠার আতঙ্কে ঘুম ভেঙে যায়। কেবিন থেকে বের হয়ে দেখি ঘন কুয়াশা, একহাত সামনেও কিছু দেখা যাচ্ছে না।
“পরে লঞ্চের সামনের অংশে গিয়ে দেখি কীর্তনখোলা-১০ নামের অন্য একটি লঞ্চের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে “তিনি আরও বলেন, “ফ্যান্টারের নীচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আওলাদ-১০ লঞ্চের চালক সেটিকে চরে তুলে দেয়। শুনেছি নীচের একটি অংশ থেকে পানিও লঞ্চের ভেতরে প্রবেশ করছিল, তাই ঝুঁকি এড়াতে লঞ্চটি আর চালনা করা হয়নি।”
“সকাল ৯টার দিকে এমভি শুভরাজ-৯ লঞ্চ ঘটনাস্থল থেকে আমাকেসহ যাত্রীদের উদ্ধার করে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। এর আগ পর্যন্ত সব যাত্রীই নিরাপদে লঞ্চে অবস্থান করছিল। তবে সবার মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছিল।”
লঞ্চের যাত্রীরা বলছেন, বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোয় ফগ লাইট, রাডার, ইকো সাউন্ডার, ভিএইচএফসহ আধুনিক নৌ-সরঞ্জাম থাকার পরও এমন সংঘর্ষ ঘটায় তারা অনেকটাই হতবাক।
ঘটনার সময় যন্ত্রপাতিগুলো সচল ছিল কিনা, কিংবা এগুলো চালানো হচ্ছিল কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন তারা। সেইসাথে হাজার যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় দায়িত্ব অবহেলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।