কুলাউড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১২ সদস্যের অনাস্থা
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য খোরশেদ আহমদ খান সুইটের বিরুদ্ধে সরকারী সম্পদ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি, ইউনিয়নের নির্বাচিত সদস্যদের সাথে খারাপ আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে পরিষদের সকল সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন। এই বিষয়ে তাঁর পদত্যাগ ও অপসারণ চেয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবারদুপুরে জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালামের কাছে ১২ ইউপি সদস্যরা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগ পত্রটি দাখিল করেন। যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুলাউড়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহীনির ক্যাপ্টেন বরাবরে।
অভিযোগকারীরা হলেন, বরমচাল ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান (১) ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আশরাফুল ইসলাম রাজীব, প্যানেল চেয়ারম্যান (২) ও ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কালাম মিয়া, প্যানেল চেয়ারম্যান (৩) ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য রানু বেগম, ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য তৈমুছ খান, ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জলিল আহমদ, ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সাহানুর আহমদ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সাজাদ আলী, ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ময়নুল হক সোনা মিয়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য চন্দন কুর্মী, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য শেফালী বেগম ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য মনি কানু। তারা অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, খোরশেদ আহমদ খান সুইট ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তিনি অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেন। ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরমচাল ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন কর আদায় বাবদ প্রায় ১২ লক্ষ টাকা এককভাবে আত্মসাৎ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের ভিজিটি চালের সরকারকৃত কেরিংয়ের ৮৩ হাজার আটশত টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার সকল অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়গুলো নিয়ে পরিষদের মাসিক সভায় সকল ওয়ার্ডের সদস্য প্রতিবাদ করলে তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এড়িয়ে যেতেন। এছাড়াও এই দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যান সরকারের পক্ষ থেকে গভীর নলকূপ বরাদ্দে অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন। অর্থ আদায়ের বিষয়টি তাকে জিজ্ঞেস ও প্রতিবাদ করায় তিনি উল্টো ইউপি সদস্যদের হুমকি প্রদান করেন। চেয়ারম্যানের পিতা কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তার ছোটভাই সদরুল আহমেদ খান পলিট আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় অর্থ উপকমিটির সদস্য থেকে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বর্তমানে গা ঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
ইউপি সদস্যরা আরও অভিযোগ করে বলেন, আমরা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্যবৃন্দের সাথে তিনি কোনরূপ স্বমন্বয়, পরামর্শ ব্যতিরেকে টিআর/কাবিখা/কাবিটা প্রকল্প গ্রহণ করে সম্পূর্ণ ইচ্ছামাফিক প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ করে প্রকল্পের কাজ না করেই সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেন। ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন সনদ প্রদানে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা আদায়, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করিয়ে অর্থ উত্তোলন করা আত্মসাৎ, ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব একাউন্টে টাকা জমা না রেখে বেশিরভাগ অংশের সমুদয় টাকা তিনি ভোগ করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বরমচাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার জানামতে কোন অনিয়ম করিনি। পরিষদে যা প্রকল্প ও বরাদ্দ এসেছে তা পরিষদের সকল সদস্যদের মাধ্যমে করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ১২ ইউপি সদস্য কর্তৃক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তক্রমে বিধি অনুযায়ী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।