ডার্ক মোড
Friday, 19 September 2025
ePaper   
Logo
কিশোরগঞ্জে লিচুর ফলনে ধস, একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়

কিশোরগঞ্জে লিচুর ফলনে ধস, একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

আকারে বড়, রসালো, সুমিষ্ট ও গাঢ় লাল রঙের বৈশিষ্ট্যের কারণে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর খ্যাতি দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে বিদেশেও সুনাম রয়েছে। তবে এবার লিচুর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও ফলন বিপর্যয়ে অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে এই লিচু। তাপপ্রবাহ দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার কারণে বেশিরভাগ বাগানের লিচুর গুটি রোদে পুড়ে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে ধারণ করেছে কালো রঙ।

গত কয়েক দিনের অতি তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে লিচু বাগানের অধিকাংশ গাছের লিচু ঝরে পড়েছে। যার ফলে এখন লিচুশূন্য হয়ে পড়েছে বাগানগুলো। গত বছরের এই সময়ে গাছগুলোতে থোকায় থোকায় ঝুলে ছিল লিচু। কিন্তু এবারের চিত্র পুরো উল্টো। গাছগুলোতে লিচুর দেখা পাওয়া কঠিন। ফলে এবার আশানুরূপ লাভের দেখা মিলবে না বলে শঙ্কা বাগানমালিকদের। এ বছর মঙ্গলবাড়িয়া জাতের লিচুর ফলন যেমন কম হয়েছে, তেমনি গাছে থাকা লিচুগুলোও খরা আর শিলাবৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে লিচু ব্যবসায়ীদের কাছে।

এই লিচু গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, অল্প কিছু গাছে সামান্য পরিমাণ লিচু টিকে আছে। গাছের নিচে অনেকেই লিচু বিক্রি করছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে মানুষ। ১০০ লিচু এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেউ দাম শুনে কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। গত বছরও যেখানে ৫০০-৬০০ টাকা ছিল, সেখানে দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

এলাকার লিচুচাষি ও ব্যবসায়ী রাজীব মিয়া বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে লিচুগুলো নষ্ট হয়েছে আর মাঝে একটি শিলা বৃষ্টি হয়েছিল যার জন্য লিচুর চামড়াগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। আমার এখানে প্রায় ৪৫টি গাছ দুই লাখ টাকা খরিদ করা।

গাজীপুর থেকে লিচু কিনতে এসেছেন মাসুদ মিয়া, তিনি বলেন লিচু অন্যবারের তুলনায় অনেক কম। আমি বাগান ঘুরে ঘুরে দেখেছি। অন্য সময়ের তুলনায় লিচুর দাম ও বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও মঙ্গলবার লিচু সুনাম রয়েছে খেতে অনেক সুস্বাদু। দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন এবার অন্য সময় তুলনায় গাছে লিচু নাই তাই হয়তো দাম বৃদ্ধি করেছে।

কিশোরগঞ্জ থেকে লিচু কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী মামুন হাসান, এই গ্রামের লিচুর অনেক সুনাম রয়েছে তবে নামটা একটু বৃদ্ধি মনে হয়েছে আমার কাছে।

হবিগঞ্জ থেকে লিচু কিনতে এসেছেন সাইদুজ্জামান। তিনি বলেন, এই গ্রামের লিচুর নাম শুনে আমি এখানে এসেছি। এই লিচুর অনেক সুনাম রয়েছে। দেখতে সুন্দর লাল রংয়ের টসে টসে। তবে বেশি দামে বিক্রি করছে। পার পিস ১০ টাকা করে ১০০ লিচু ১০০০ টাকা করে বিক্রি করছেন তারা।

স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ী তৌহিদ হাসান বলেন, আমি কতবছর যাবৎ এই ব্যবসা করি। অনেক আগে লিচু গরু গাড়ি দিয়ে কিশোরগঞ্জ নিতাম তখন থেকেই লিচু ব্যবসার সাথে জড়িত। এই বছর যে দুর্যোগ আসছে এটা আমার জীবনে প্রথম। শুরুতে যখন লিচু বাগানে মুকুল আসছে তখন এসেছে বৃষ্টি এরপর খরায় আরও লিচু নষ্ট হল। লিচু যখন গুটি হচ্ছে ঠিক তখনই প্রচন্ড রৌদ্রে নষ্ট হয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রায় দুইশ বছর ধরে লিচু চাষ হচ্ছে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর এলাকার পূর্ব-দক্ষিণে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম মঙ্গলবাড়িয়া। এই গ্রামে প্রতিটি বাড়িতেই লিচুর আবাদ হওয়ায় এর নামকরণ হয় ‘মঙ্গলবাড়িয়া লিচু’। গ্রামের প্রায় সবার বাড়িতেই রয়েছে ১০/১২টি বা তার চেয়েও বেশি লিচু গাছ। স্থানীয় লিচু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এবার এ লিচুর ফলন বিপর্যয় হয়েছে।

সাধারণত মঙ্গলবাড়িয়া লিচু ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। পাশাপাশি সিংগাপুর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশেও মঙ্গলবাড়িয়া লিচু রপ্তানি করা হয়।

পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-ই আলম বলেন, পাকুন্দিয়ার ঐতিহ্য হচ্ছে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার লিচু গাছ আছে। মঙ্গলবাড়িয়া, নারান্দী, হোসেন্দী সামগ্রিকভাবে এলাকাগুলো মঙ্গলবাড়িয়া লিচু হিসেবে পরিচিত। শুধুমাত্র কিশোরগঞ্জ নয় কিশোরগঞ্জের বাইরে সারা বাংলাদেশে এই লিচুর খ্যাতি রয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে অতি খরার কারণে লিচুর ফলনে বিপর্যয় হয়েছে। প্রতি বছর এ গ্রাম থেকে ৫-৭ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। তবে এবার তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে লিচুর ফলন একেবারেই কম। গতবারের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ ফলন হয়েছে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন