কর্তৃপক্ষের ঢিলেঢালা তদারকিতে নিয়ন্ত্রণ হীন পটুয়াখালীর পরিবেশ দূষণের মাত্রা
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
উন্নয়নশীল দখিনের জনপদ পটুয়াখালীতে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে শিল্প উন্নয়ন। বাড়ছে কলকারখানা, ক্ষুদ্র মাঝারিসহ বড় শিল্প, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আবাসিক হোটেল সহ পরিবেশ দূষণের জন্য অসংখ্য ক্ষেত্র। যথাসময়ে যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে পরিবেশ দূষণের মাত্রা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী পটুয়াখালীতে তালিকাভুক্ত ইটভাটার সংখ্যা ৭৯টি। এরমধ্যে বৈধ ৫৮ টি অবৈধ ২১ টি। এছাড়াও তালিকা বিহীন অন্তত ১০ ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে হাতেগোনা ২০টি ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা হয়। বাকি সব জ্বালানিতে কাঠ ব্যবহার করা হয়। জেলার ভাটাগুলোতে জ্বালানি হিসাবে বছরে অন্তত ২ লক্ষ ৫০ হাজার টন কাঠের ব্যবহার হয়। ২০২৩ সালে অভিযান চালিয়ে মাত্র ৫টি ইটভাটা উচ্ছেদ ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। ২০২৪ সালে মাত্র ৭ টি ইটভাটায় উচ্ছেদ বিহীন ৫ টি ভাটায় ৫ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং ২টি ভাটায় উচ্ছেদ অভিযান চালায়।
জানা যায়, অভিযান পরবর্তী কিছুদিন উৎপাদন শিথিল থাকলেও পুনরায় আবারো আগের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইটভাটা চালায়। তবে এ বছর এখনো কোন ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট অভিযান চালানো হয়নি। তথ্য মতে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে মাত্র ২৬ দিন মোবাইল কোড দিয়ে অভিযান চালায়। এর মধ্যে ৮ দিন শব্দ দূষণ অভিযানে ৬৪ হাজার টাকা, নিষিদ্ধ পলিথিনের জন্য ৮ দিন অভিযানে ১,২৬,০০০ টাকা, ১০ দিন ইট ভাটায় ৫,৮০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
পরিবেশ দূষণের যেসব ক্ষেত্র রয়েছে এর মধ্যে বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, মাটি দূষণ, বিষাক্ত ও বিপদজনক বর্জ্য, ধোয়া, পাম্প, গন্ধ, কম্পন, আগুন, বিস্ফোরণ অন্যতম। সকল ক্ষেত্রে পরিবেশ ছাড়পত্রের পর ব্যবসা পরিচালনার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ কল কারখানার মালিকরা মানছে না কোন নিয়ম। তবে জেলা শহর এবং উপজেলা শহরের নিকটবর্তী কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ম মানলেও গ্রামগঞ্জের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের চিত্র ভিন্ন।
পটুয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত চলমান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাইস মিল, ডগ ইয়ার্ড, ওয়ার্কশপ, প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি, মেটাল ইন্ডাস্ট্রি, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, স্ব-মিল, ফ্লাওয়ার বিল, আবাসিক হোটেল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সহ বেশ কিছু কারখানা রয়েছে যাহারা পরিবেশগত ছাড়পত্রের কোন রূপ তোয়াক্কা না করে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের নিয়মিত কাজকর্ম। এছাড়াও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলো কোনমতে পরিবেশগত ছাড়পত্র নিয়ে নিজেদের সুবিধা মত যেভাবে পারছে কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যথাযথ নিয়ম নিয়ে রয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ফেলায় দূষিত হচ্ছে নদীর তীর ও পানি। জেলার অবৈধ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে পরিবেশগত ছাড়পত্র না নেয়ায় তাদের কর্মকাণ্ডে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং সরকার প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এছাড়াও অবৈধ শিল্প কারখানার উপর নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হলে মানুষের সচেতনতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সচেতন সমাজের মানুষ।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তরের সরকারি পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, অবৈধ কলকারখানা গুলোকে নিয়মিত চিঠিপত্র দিয়ে সতর্ক করে থাকি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় কোন রুটিন থাকে না তবে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সহযোগিতা নিয়ে আমরা করে থাকি।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরিফিন বলেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় পরিবেশ অধিদপ্তরকে জেলা প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। আগামীতে মোবাইল কোর্ট বৃদ্ধি করতে পারলে পরিবেশের সকল ধরনের ভারসাম্য রক্ষা পাবে।