ডার্ক মোড
Sunday, 03 November 2024
ePaper   
Logo
ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা সোহাগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ

ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা সোহাগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকবর আলী সোহাগের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি রাউৎগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা কমিটির সদস্য হওয়ায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ইউনিয়ন পরিষদকে রীতিমত অনিয়মে পরিণত করেছেন। বিভিন্ন সময়ে সরকারি প্রকল্প থেকে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বাড়ি ওই ইউনিয়নে হওয়ায় চেয়ারম্যান সোহাগ ছিলেন অনেকটা বেপরোয়া। ঠান্ডা মাথায় তিনি এক আধিপত্য খাটিয়ে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নামমাত্র কাজ করিয়ে হাতিয়ে নেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আকবর আলী সোহাগ ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর নৌকা প্রতীক নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হয়েই ২০২১-২২ ও ২২-২৩ অর্থ বছরে পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উপকরণ ক্রয়ের ২ লক্ষ টাকা কাজ না করেই আত্মসাৎ করেন। একই অর্থ বছরে ইউনিয়ন পরিষদের আসবাবপত্র ক্রয়ের ১ লক্ষ টাকা দিয়ে ৪ পিছ পর্দা কিনে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন।

ইউনিয়ন উন্নয়ন তহবিলের দুই অর্থ বছরে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার কোন কাজ না করিয়ে আত্মসাৎ করেন। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে কাবিখা প্রকল্পের আওতায় মনরাজ হাফিজা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট কাজের দেড় লক্ষ টাকা পূর্বের কাজের ওপর কয়েক গাড়ি মাটি ফেলে দিয়ে বিল উত্তোলন করে নেন প্রকল্প চেয়ারম্যান স্থানীয় ইউপি সদস্য চেরাগ আলী গোলাপ। স্কুলের কাজের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কোন স্বমন্বয় হয়নি বলে প্রধান শিক্ষক খালেদা আক্তার জানান। মন্নানের বাড়ির সম্মুখ থেকে ক্বারী মজর মুন্সীর বাড়ি পর্যন্ত ইটসোলিং কাজের ২ লক্ষ টাকা, কৌলা প্রাইমারি স্কুলের সম্মূখ থেকে পূর্বমূখী দক্ষিণ কৌলা গোরস্থান পর্যন্ত মাটি ভরাটের ২ লক্ষ টাকা, অরুণ মালাকারের বাড়ি থেকে অবণী মালাকারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি না দিয়েই পুরো ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান সোহাগ।

আব্দুলপুর খালিক মিয়ার বাড়ির সম্মুখ হকে আইয়ুব আলীর বাড়ি পর্যন্ত মাটির কাজ না করে ৪ টন গম আত্মসাৎ করেন। ২০২১- ২২ অর্থ বছরে নর্তন ভবানীপুর পাকা রাস্তা থেকে নর্তন তিলাশীজুরা সংযোগ রাস্তায় মাটির কাজে ৪ মেট্রিক টনের চালের অর্থ, ভীমবসু অনু দেবনাথের বাড়ির সম্মুখ থেকে হাকিম মিয়ার বাড়ির রাস্তায় মাটির কাজে ৪ মেট্রিক টন চালের অর্থ কাজ না করেই হাতিয়ে নেন চেয়ারম্যান। মহিলা মেম্বার ফয়জুন নেছার বাড়ির ব্যক্তিগত রাস্তা ইট সোলিংয়ের জন্য দেড় লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দিয়ে বেশিরভাগ টাকা আত্মসাৎ করেন। ভাটুৎগ্রাম আনু মিয়ার বাড়ির পশ্চিম পাশ হতে শেলি বেগমের বাড়ির সামনের পাকা রাস্তা পর্যন্ত সংযোগ রাস্তা নির্মাণের ২ লক্ষ টাকা কোন কাজ না করিয়ে পুরোটাই পকেটস্থ করেন চেয়ারম্যান।

রাউৎগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা তৌফিকুর রহমান তাহের জানান, দীর্ঘদিন থেকে ইউনিয়নে অনিয়ম দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। তিনি দুর্নীতিবাজ চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করেন। চতুর এই চেয়ারম্যান বিভিন্ন প্রকল্পে নিজে প্রকল্প চেয়ারম্যান না হয়ে নারী সদস্যদের প্রকল্প চেয়ারম্যান মনোনীত করতেন। তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ও তৎকালীন সংসদ সদস্য শফিউল আলম নাদেলের ঘনিষ্ঠভাজন হওয়ায় ইউপি সদস্যরা ভয়ে মুখ খুলতেন না। তবে নারী ৩ সদস্যসহ দু'একজন ইউপি সদস্যও চেয়ারম্যানের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় এইসব কাজে ভাগ পান।

মনরাজ হাফিজা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদা আক্তার জানান, প্রজেক্ট কমিটিতে কে আছেন তাও জানিনা। পূর্বে স্কুল থেকে করা মাটি ভরাটের সাথে ট্রলি দিয়ে কয়েকবার মাটি দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় মেম্বার আমাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য বাড়িতে এসে শাসিয়ে যান। ইউপি সদস্য আবু সুফিয়ান জানান, দুটি প্রকল্পে আমি নামমাত্র সভাপতি ছিলাম। আড়াই লক্ষ টাকার প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা চেয়ারম্যান নেন।

ইউপি সদস্য হালিমা আক্তার পর্দা ক্রয়ের বিষয়ে বলেন, ১ লক্ষ টাকার মধ্যে আমাকে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এই টাকায় ৪টি পর্দা ক্রয় করা হয়।

এ ব্যাপারে রাউৎগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকবর আলী সোহাগ তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন এবং একটি মহল তাঁর বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন