ডার্ক মোড
Saturday, 20 September 2025
ePaper   
Logo
আমে ভরা সাতক্ষীরার বাজার

আমে ভরা সাতক্ষীরার বাজার

এসএম শহীদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে গ্রাম থেকে আসছে শতশত ভ্যানভর্তি পরিপক্ব আম। বাগানের গাছ থেকে পেড়ে এসব আম এনে রাখা হচ্ছে আড়তে। সেখান থেকে কিনছেন ক্রেতারা। জেলার বাইরে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে এসব আম। গত ৯ মে থেকে শুরু হয়েছে আম পাড়া। জাত ভেদে আম পাড়া চলবে জুন মাস পর্যন্ত। ইতোমধ্যে বাজারে উঠেছে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাস, সরিষাখাস জাতের আম। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় এসব আম কিনতে আসছেন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা। এসব ক্রেতারা আবার অনলাইনের অর্ডার নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন সাধারণ খুচরা ক্রেতার কাছে।

কাকডাকা ভোর থেকেই জমে উঠছে আমের হাট। শুক্রবার (১৭ মে) সকালে দেখা গেছে গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে আসছে সারি সারি আমভর্তি ভ্যান। যতদূত দৃষ্টি যায় ততদূর শুধু আমের ভ্যান। আমের বাজারে তিল ধারণের জায়গা নেই। ক্রেতার ভিড়ও লক্ষ্যণীয়। আমে সয়লাব সুলতানপুর বড়বাজার। যেদিকে তাকানো যাবে, সেদিকেই আম আর আম!

নাগরিক নেতা অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন, আবহাওয়া, জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আগেভাগে বাজারে আসে সাতক্ষীরার আম।

সাতক্ষীরা বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাতক্ষীরা ডেনাইট কলেজ মোড় থেকে শুরু করে বড় বাজার পর্যন্ত বড় লম্বা লাইন। সারি সারি আমভর্তি ভ্যান ঢুকছে আর বের হচ্ছে।

এদিকে, আমের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলছে দর কষাকষি। আম ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির জানান, সাইজ ও রকম ভেদে গোবিন্দভোগ আম ২ হাজার ৭শ' থেকে ২ হাজার ৮শ' টাকা মণ, গোপালভোগ ২ হাজার ৫শ' থেকে ২ হাজার ৬শ' টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

তবে অনেকেই বলছেন, আমের সাইজ এবং রঙ অনুযায়ী দামের হেরফের হচ্ছে। যে আমের সাইজ অনেক ভালো, তার দর বেশি।

এদিকে, সাতক্ষীরার সুমিষ্ট আম ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ভোক্তার হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন অনেক যুব উদ্যোক্তা। তাদের মধ্যে একজন অপূর্ব রায়। তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা এই সময় আমের ব্যবসা করি। আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে আমের দামদর নিয়ে পোস্ট করি এবং মার্কেটিং করি। তারপর ক্রেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের ঘরে আম পৌঁছে দিই। আমরা শুধু মাধ্যম হয়ে কাজ করি, যার ফলে আমাদের কিছু লাভ থাকে। এই সময়টা সাতক্ষীরাসহ বাইরের অনেক উদ্যোক্তা এখানে অবস্থান করে অনলাইনে আমের ব্যবসা করেন।

আম কিনতে আসা হাফিজুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরার আম মানে ব্র্যান্ড। দেশের অন্য জেলার আমের থেকে সাতক্ষীরার আম সুমিষ্ট এবং স্বাদে অতুলনীয়। আম খেলে যাচাই করা যায়, এটা সাতক্ষীরার আম। সাতক্ষীরার আম দেশের সীমানা ছাড়িয়ে প্রতিবছর বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তাছাড়া এই আমের কদরও অনেক বেশি রাজধানী ঢাকায়।

বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়ী সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের এমএ মাজেদ বলেন, তিনি অনলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমের অর্ডার নিয়ে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কুরিয়ারের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে পৌছে দেন। তিনি বলেন, একেকদিন আমের দাম একেক রকম। কোনদিন দাম বেশি হবে, কোনদিন কমবে-এটা আগে বলা যায় না। তবে এবছর আমের দাম অনেকটা বেশি।

রাজশাহী থেকে আসা আম ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, সাতক্ষীরার আম আগে পাকে, তাই এ জেলার আমের চাহিদা দেশজুড়ে। আমি মূলত অনলাইনে আমের অর্ডার নিয়ে দেশজুড়ে সরবরাহ করি। আগের বছরের তুলনায় এবছর আম একটু দেরিতে বাজারে এসেছে। তবে চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। অনলাইনে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৮ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৮০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।

জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ২৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১শত জন আম চাষি রয়েছেন। সবমিলিয়ে এ বছর ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কয়েকটি জাতের আম দিয়ে মে মাসের ৯ তারিখ থেকে সাতক্ষীরায় আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ন্যাংড়া ও ১০ জুন আম্রপালি জাতের আম সংগ্রহ করা হবে। মনে রাখতে হবে, গাছের সব আম একসঙ্গে পাকে না। সুতরাং আমের রং আসার আগে তা না পাড়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন