অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই : জোনায়েদ সাকি
খুলনা ব্যুরো
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন তাদের সকলের সমর্থন নিয়ে তাদের প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব নিয়ে এসেছে এই অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। এই সরকারের ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা সরকারের মনে রাখা দরকার, আমাদের সকলেরও মনে রাখা দরকার। কারণ এই সরকারের সাফল্য মানে আমাদের সম্মিলিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন। সেই কারণে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবের আলহাজ লিয়াকত আলী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘কেমন বাংলাদেশ চাই?’ শীর্ষক গণসংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের লাখো ছাত্র, তরুণ, শ্রমিক, শিশু, কিশোর, অভিভাবক সকল স্তরের মানুষের একটি সংগ্রামের ফল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা দেখতে পাচ্ছি পতিত ফ্যাসিস্টরা ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে ষড়যন্ত্র করছে। আর ভারতের গণমাধ্যমের একটি অংশ এবং বিজেপি তাদের নিজেদের স্বার্থে এই পতিত ফ্যাসিস্টদের সাহায্য করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে চিত্রিত করছে এখানে নাকি হিন্দুদের নিরাপত্তা নেই, বৌদ্ধদের নিরাপত্তা নেই কিংবা চাকমা, বার্মা, ত্রিপুরাসহ অন্য জাতির সদস্যদের নিরাপত্তা নেই। এখানে নাকি নারীরা নিরাপদে নেই। হ্যাঁ, তবে ৫ আগস্টের পর কিছু হামলার ঘটনা ঘটেছে, তদন্ত করেন। কারণ এরা যেভাবে এটাকে প্রচার করছে, তাতে বলা যায় এটাতে তাদেরও সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, পতিত ফ্যাসিস্টরাই হামলা করতে পারে। তদন্ত করেন, প্রত্যেকটি ঘটনারই বিচার করতে হবে। আমরা পরিষ্কার করে বলি কোনো ঘটনা আমরা ধামাচাপা দিতে চাই না। এ দেশের সকল জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ নিরাপত্তার সঙ্গে থাকবে, এটা আমাদের অঙ্গীকার, সরকারের অঙ্গীকার। এর ব্যত্যয় যারা ঘটাবে, তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। এটাই আমাদের সামনের শপথ।
জোনায়েদ সাকি বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে পাঠিয়েছে। আবার সেখানে যুদ্ধ চলছে। নানা দিক থেকে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। কাজেই সেই দিক থেকে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের যেমন রাষ্ট্র পরিচালনা ও রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছে জনগণ, আবার এই জনগণের সমস্যা সমাধানের দায়িত্বও আপনাদের। সরকার যত বেশি জনগণের সমস্যার সমাধান করবে, জনগণ তত ঐক্যবদ্ধ হবে।
তিনি আরও বলেন, আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ঠিকাদাররা রীতিমতো দাসত্বের জীবনে ঠেলে দিয়েছে। জনগণের ন্যায্য দাবি মানুন। হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রক্ষা করবে, পাশে এসে দাঁড়াবে। কোনো ষড়যন্ত্র এই বাংলাদেশকে আর ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না। কিন্তু জনগণের দাবি না মেনে দীর্ঘসূত্রিতা করে কেবল ষড়যন্ত্রের কথা বললে এটা কার্যকর হবে না।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে সংবিধান, একটি স্বৈরাচারী ক্ষমতার সংবিধান। এই সংবিধানকে নানা সময় কাটাছেঁড়া করা হয়েছে এবং সবশেষ শেখ হাসিনা একটি ফ্যাসিস্ট সংবিধানে পরিণত করেছে। পুরো শাসনকে একটি ফ্যাসিস্ট শাসনে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রকে পকেটে ঢুকিয়ে জনগণের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই ব্যবস্থা বদলাতে হবে।
সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল ও গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য দেওয়ান আবদুর রশীদ নীলু।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল এবং সঞ্চালনা করেন জেলা কমিটির সদস্য আল আমিন শেখ। সংলাপে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন ও বক্তৃতা করেন। সংলাপে বন্ধ থাকা সকল সরকারি পাটকল রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করার দাবি জানানো হয়।