
মাটির তৈজসপত্রের আঁতুড় ঘর কুমোর পাড়া
সাইফুর নিশাদ, মনোহরদী (নরসিংদী)
কাপাসিয়ার কড়িহাতা গ্রামের কুমোরপাড়ার নর-নারীদের কোন না কোনভাবে মাটির তৈজসপত্র তৈরির কাজে লিপ্ত থাকতে দেখা গেলো সেদিন।তাদের কেউ বানাচ্ছেন মাটির গড়া,কেউ সরা,কেউবা কলস, হাঁড়ি,পাতিল,পিঠের পাতিল ইত্যাদি।আবার কেউ বানাচ্ছেন মাটির ব্যাংক, জলকান্দা।এক কম বয়সী গৃহবঁধূ বানাচ্ছিলেন মেটে লোহা বা মাছ ধরার জালে ব্যবহারের মাইট্যা লোহা।আরেক গৃহবঁধূ ছাঁচে ফেলে বানাচ্ছিলেন খেলনা হাতি,ঘোড়া,বাঘ,হাঁস ইত্যাদি।
আবার কেউ বানানো তৈজসপত্র পইন ঘরে নিচ্ছেন,পুড়ছেন,পোড়ার ব্যবস্থা করছেন,পোড়া তৈজসপত্র বের করে আনছেন। কেউ বা পইন ঘরের গর্তে বসে চুল্লিতে লাকড়ির জ্বাল দিচ্ছেন।কাপাসিয়ার কড়িহাতা গ্রামের এ কুমোর পাড়ার প্রত্যেকটি ঘরে এখন সীমাহীন কর্মচান্চল্য ও ব্যস্ততা।সামনে চোত সংক্রান্তির মেলার জন্যই হয়তো, বেলা ১১ টার মধ্যেই দিনের কাজ অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেলো তাদের।স্থানীয় যুবক আসাদের প্রত্যক্ষ সহযেগীতায় কুমোর পাড়া ঘুরে দেখা হলো।এর প্রত্যেকটি বাড়ীর উঠোন,আঙ্গিনা,ঘরের বারান্দা,খালি জায়গা ভরে আছে বিভিন্ন মৃৎপাত্রে।এর কোনটি সদ্য তৈরি করা,কোনটি আধা শুকনো,কোন কোনটি পুরোপুরি শুকনো।কতক আছে এখনই রঙ করে পোড়াবার উপযোগী।এখানকার কুমোরদের অধিকাংশই বসবাস করেন মাটির ঘরে।বংশ পরম্পরায় তারা মাটির তৈজসপত্রসহ এটা ওটা বানান। মাটির গড়া,মাটির সরা,।জলকান্দা, কলস,হাঁড়ি,পিঠের পাতিল,মাছ ধরার জালে ব্যবহারের মেটে লোহা বা মাইট্যা লোহা ইত্যাদি কতো কিছু ছড়ানো ছিটানো কুমোরপাড়ার সর্বত্র।কর্মচন্চল তারা যে যার মতো।পুরুষেরা মাটি আনছেন,সে মাটি ছেনে দিচ্ছেন।বাড়ীর গৃহীনিরা সেসব ছাঁচে ফেলে নরোম হাতের কোমল ছোঁয়ায় শৈল্পিক মনোযোগে তৈজসপত্র বানাচ্ছেন।খেলনা হাতি,ঘোড়া,হাঁস মাটির ব্যাংক ইত্যাদি বানাচ্ছিলেন এক কমবয়সী গৃহবঁধূ।কেউ বা পইন ঘরে জ্বাল দিচ্ছেন,পইন সাজাচ্ছেন,পইন থেকে পোড়া মাটির তৈজসপত্র নামাচ্ছেন।কুমোররা মৃৎসামগ্রী যে ঘরে বা যেখানে চুল্লির আগুন পোড়ান সেটিকে তারা পইন বা পইন ঘর বলে থাকেন।
এখানকার কুমোরদের সকল কর্মকান্ড মৃৎশিল্প কেন্দ্রীক।এরই ফাঁকে ঘর সংসার তাদের।এক দিদি জানালেন, রান্নাবান্না সকাল সকালই শেষ হয় তাদের। তারপর নাস্তা সেরে একনাগাড়ে বিকেল চারটে পর্যন্ত মাটির তৈজসপত্র তৈরিতে লিপ্ত থাকেন তারা। কড়িহাতা গ্রামের এ কুমোর পাড়ায় মৃৎশিল্পীদের প্রায় সবাই বয়োজ্যেষ্ঠ নর-নারী।কম বয়সীদের মধ্যে একটি যুবক ও দু' গৃহবৃধূকে সেখানে কর্মরত পাওয়া গেলো। যুবকটি সেখানে পইন সাজাচ্ছিলেন।এখানকার মৃৎশিল্পীদের একটি অনুযোগ সার্বজনীন।বংশ পরম্পরায় তারা এ পেশা বা কর্মে লিপ্ত থাকলেও তাদের দেখার তেমন কেউ নেই।সরকার থেকে এককালীন কিছু আর্থিক অনুদান কিংবা সহযোগীতা পেলে বড়োই উপকার হতো তাদের এ আকালের বাজারে।আবহমান বাংলার একটি ঐতিহ্যের ধারক বাহকদের বিষয়টি কোন মহল কি বিবেচনা করে দেখবেন? মাত্র ৬০/৭০ ঘর কুমোরদের জন্য মাত্র ৪০/৪৫ লাখ টাকার মতো এককালীন অনুদানের ব্যবস্থা হলেও প্রান পেতো এ শিল্পটি। উপকৃত হতো এ শিল্পকর্মে নিবেদিত প্রান শ্রমজীবী বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষগুলো।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?