
সরকারি কোন বিভাগ ভূমিকম্প নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ নাঃগঞ্জ মহানগরীতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, নারায়ণগঞ্জ
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে রাজউকের নকশা পাশ কাটিয়ে অনেক উঁচুভবন নির্মিত হয়েছে। ফলে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরো বেড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ নারায়ণগঞ্জে সরকারি কোন বিভাগ ভূমিকম্প নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। কয়েক বছর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরী করেছিল। সে সাথে একই কাজ করেছিল ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে নতুন কোন আপডেট নেই। কেবল ফায়ার সার্ভিস একটি বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু করেছে। প্রশিক্ষণে দেশের বিভিন্ন স্টেশন থেকে ৫০ জন অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকর্মী অংশ নিচ্ছেন। কোর্সটি চলবে আগামী ১ মে পর্যন্ত। এতে অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকম্পসহ অন্যান্য বড় দুর্যোগে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে।ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সকল ধরনের দুর্যোগে দক্ষতা ও প্রস্তুতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলে শুরু হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কোর্স। জানাগেছে, জানুয়ারির প্রথম সাত দিনে দেশে দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হলো। এর মধ্যে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্প ছিল তীব্র ধরনের। আর ৩ জানুয়ারি হওয়া ভূমিকম্পটি ছিল মাঝারি মাত্রার।এটি দেশকে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। দুই ভূমিকম্পের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো, দুটোরই উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের বাইরে। আর ৩ জানুয়ারির ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের হোমালিন নামের একটি স্থান। বাংলাদেশে কোনো হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও এটি ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিপর্যয়কর ভূমিকম্প মোকাবিলায় দেশের প্রস্তুতির দিকে নতুন করে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সাম্প্রতিক নিদর্শনগুলো কেবল ২০২৪ সাল থেকে ৬০টিরও বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। এসব ঘটনা ব্যাপক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতির জরুরি প্রয়োজনের প্রতিই ইঙ্গিত দেয়। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলে ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকা ও পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় ভয়াবহ ক্ষতি হবে।জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে ৪২টি ভবন। ভূমিকম্প হলে এসব ভবন ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি শহরের দেওভোগ এলাকার একটি ৪ তলা ভবন পাশের ৫তলা ভবনের ওপর হেলে পড়ায় নগরীর অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোও উঠে এসেছে আলোচনায়। এই তালিকার পর কয়েকটি ভবন ভাঙ্গা পড়েছে।সূত্র মতে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হচ্ছে নাসিকের ১৫নং ওয়ার্ডের ৪৭নং মহিম গাঙ্গুলী রোড এলাকার উইলসন মার্কেট, টানবাজার এলাকার সাইদুর রহমান ইদুর মালিকানাধীন ৫তলা ভবন। একই ওয়ার্ডের ২১নং এস এম মালেহ রোড টানবাজার এলাকার এমদাদুল হক ভূঁইয়ার ২তলা ভবন, টানবাজার মথুয়া রায় রোড এলাকার দস্তগীর আহমেদ এর ২তলা ভবন, ৩৪নং মহিম গাঙ্গুলী রোডের সাধনা ঔষধালয়ের ২তলা ভবন, এস এম মালেহ রোডের সানাউল্লাহ মিয়ার ২তলা ভবন, ২১নং এস এম মালেহ রোড এলাকার এমদাদুল হক ভূঁইয়ার ২তলা ভবন, ১৬নং এম এম রায় রোড এলাকার আবুল কাশেম মিয়ার একতলা ছাদবিহীন পরিত্যক্ত ভবন, ৩৭নং এস এম মালেহ রোড টানবাজার এলাকার ফাতেমা বেগমের মালিকানাধীন ৩তলা ভবন।এছাড়া ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে, ৩৩ মহিম গাঙ্গুলী আলী সুপার মার্কেট এলাকার মোহাম্মদ আলীর মালিকানাধীন ৩তলা পুরতান ভবন, ৩৫নং মহিম গাঙ্গুলী রোড টানবাজার এলাকার এইচ এম ইউসূফের ৪তলা ভবন, এসএম মালেহ রোড এলাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের (রাজস্ব) ২তলা ভবন, এস এম মালেহ রোড এলাকার শাহীন ভূঁইয়ার মালিকানাধীন ২তলা ভবন, ২১ এস এম মালেহ রোড এলাকার মোমেনা খাতুনের মালিকানাধীন ৩তলা ভবন, ২০নং এস এম মালেহ রোড এলাকার হাজী ছাত্তার ভূঁইয়ার মালিকানাধীন ২তলা ভবন, নিতাইগঞ্জের ২৫ আর কে দাস রোড এলাকার ইলিয়াছ দেওয়ানের ২তলা ভবন, নিতাইগঞ্জ বিকে দাস রোড এলাকার আবদুর রহিম ভূইয়ার ৩তলা ভবন, ৩০ বি কে রোড এলাকার আবদুল কাইউম গংয়ের ২তলা আবাসিক ভবন, শাহ সুজা রোড নিতাইগঞ্জ এলাকার এ কে এম লুৎফরের মালিকানাধীন ২তলা ভবন, ৮ ওল্ড ব্যাংক রোড নিতাইগঞ্জ এলাকার মাইনুদ্দিন গংয়ের ২তলা বিশিষ্ট ভবন, ৮ ওল্ড ট্যাংক রোড নিতাইগঞ্জের আবুল কাইউমের মালিকানাধীন ২তলা বিশিষ্ট ভবন, ৩৬৭/২ ডিপি রোডে ফরিদ আহাম্মেদ ও সামুসজ্জোহার মালিকানাধীন হাকিম প্লাজা, ২৫৮ ডিপি রোড এলাকার তাহমিনা খাতুনের মালিকানাধীন চারতলা ভবন, একই রোডের কামরুন্নেছা বেগমের মালিকানাধীন ৩তলা ভবন, রহিমা খাতুনের ২তলা ভবন, সাহেরা খাতুনের ৩তলা ভবন, নাসির মিয়ার ৪তলা ভবন।ঝুঁকির তালিকায় থাকা অন্য ভবনগুলো হচ্ছে, ১৪নং ওয়ার্ডের ১০৪ বিবি রোডের খাজা নাজমুল হুদা খন্দকারের মালিকানাধীন ২তলা ভবন, ১০৮নং বিবি রোডের জিয়াউল হকের মালিকানাধীন ১তলা ভবন, নিউ চাষাঢ়া জামতলায় হীরা কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন আলী ইমামের মালিকানাধীন ২তলা ভবন, শহরের গলাচিপা এলাকায় ২তলা বিশিষ্ট বাংলাদেশ স্কাউটস ভবন, ৬৪নং (পুরাতন ৯০ নং) কলেজ রোড গলাচিপা এলাকার ছালেনুর রহমানের ভবন, সনাতন পাল লেন ফকিরটোলা মসজিদ এলাকায় আবদুস সোবহানের মালিকানাধীন ৩তলা ভবন, শহীদ সোহরাওর্দী সড়কের আলতাফউদ্দিন আহমেদ খন্দকারের মালিকানাধীন ২তলা ভবন, তামাকপট্টি এলাকায় মহিউদ্দিন বেপরীর মালিকানাধীন ২তলা ভবন, দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার উম্মে কুলসুমের মালিকানাধীন চারতলা ভবন, দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার জাহানারা বেগমের মালিকানাধীন ৩তলা ভবন।এছাড়া নিতাইগঞ্জ ৩/১ ওল্ড ব্যাংক রোডের দুলাল রায়ের (বর্তমান মালিক পাইকপাড়ার সেলিম) ২তলা ভবন, টানবাজারের ৩০নং মহিম গাঙ্গুলী রোডের সালাম, আসলাম ও মাসুম গংয়ের মালিকানাধীন ৪তলা ভবন, ২৭নং মীনাবাজারের লোকমান গাজীর ৩তলা ভবন, ৪২নং নয়ামাটির হিমাংশু কুমার সাহার ২তলা ভবন, ১৩২ সুলতান গিয়াসউদ্দিন রোড তামাকপট্টির অজিত রায়ের ২তলা ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় রয়েছে।নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল হোসেন জানান, তালিকা অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অচিরেই এসব ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।জানাগেছে, জানুয়ারির প্রথম সাত দিনে দেশে দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হলো। এর মধ্যে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্প ছিল তীব্র ধরনের। আর ৩ জানুয়ারি হওয়া ভূমিকম্পটি ছিল মাঝারি মাত্রার। এটি দেশকে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। দুই ভূমিকম্পের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো, দুটোরই উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের বাইরে। আর ৩ জানুয়ারির ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের হোমালিন নামের একটি স্থান। বাংলাদেশে কোনো হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও এটি ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বিপর্যয়কর ভূমিকম্প মোকাবিলায় দেশের প্রস্তুতির দিকে নতুন করে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।