সংবাদ প্রকাশের পরেও জেল খেটে এখনো বহাল তবিয়তে সহঃ শিক্ষক শামসুল হক
হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
বাহুবলে হত্যা ও চাঁদাবাজি সহ একাধিক মামলার আসামি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সামসুল হক !!প্রায় ১০ বছর ধরে তথ্য গোপন ' শিরোনামে গত ৯ জুন ২০২৪ ইং বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অদৃশ্য কারনে এখনো বহালতবিয়তে অভিযুক্ত অলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামসুল হক ,এই নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, বাহুবল উপজেলায় হত্যা, সন্ত্রাসী, হামলা, চাঁদাবাজিসহ একাধিক ফৌজদারি মামলা জড়িত অলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামসুল হক বিরুদ্ধে, তার পরেও বহাল তবিয়তে বসে রয়েছেন নিজ চেয়ারে। নেই কোনো বিভাগীয় তদারকি, জন্ম দিতেছেন একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন মামলার আসামি সহকারী শিক্ষক শামসুল হক প্রকাশ্য বলে বেড়ান আমি আগেও বলেছি এই দেশে টাকা থাকলে আইন থাকে পকেটে,আমার কাছে টাকা আছে ঠিক তেমনি আমি অতীতের ন্যায় টাকা দিয়ে উপর মহলকে ম্যানেজ করে ফেলেছি কেউ আমার কিছুই করতে পারবে না। এই দেশে ঘুষ খায় না কে? একাধিক মামলার আসামি সহকারী শিক্ষক শামসুল হক উপর মহল বলতে কি বুঝাতে চেয়েছেন তা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
এই দিকে বিভিন্ন মামলার আসামি সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর সহকারী শিক্ষক শামসুল হক তার নজিরবিহীন অনিয়ম দূর্নীতি ও প্রতারণা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহলের দৌড় চাপ শুরু করেন।
বিভিন্ন অভিযোগের সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলী।
সহকারী শিক্ষক শামসুল হকের বিপক্ষে এসব অভিযোগ থাকার পরেও শিক্ষা বিভাগ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় জেলা শিক্ষা কমর্কতা মোঃ গোলাম মাওলা আর্দেশে বাহুবল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলী সহকারী শিক্ষক শামসুল হকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের নাম মাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করলেও বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননিতিনি বর্তমানে কোনো পদেক্ষেপ নেওয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে।
সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানিয়েছিলেন, ওই সহকারী শিক্ষকের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত থাকলে আদৌও তা বাস্তবায়ন হয়নি, ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি চাঁদাবাজি মামলায় জেল খেটে তথ্য গোপন করে ঘটনায় বিদ্যালয় ফাঁকির।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় উপ পরিচালক মোঃ জালাল উদ্দিন কে একাধিক বার মুঠোফোনে ফোন করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য , বাহুবল উপজেলার নতুন বাজার এলাকায় স্থাপিত ওমেরা গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পানির বিভিন্ন মালামাল টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় – বিক্রয়কে কেন্দ্র করে ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে পূর্ব জয়পুর গ্রামের সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার ও তার সহযোগীরা প্রতিপক্ষ চারগাও গ্রামের তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের সঙ্গে স্থানীয় মিরপুর বাজারে মারাত্মক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়।
সন্ধ্যা অনুমান ৬.৩০ ঘটিকা হতে রাত অনুমান ৯.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলাকালে সুজন মিয়া নামে এক ব্যক্তি কাঁচা বাজার হাতে নিয়ে পরিবারের জন্য দৈনন্দিন বাজার সদাই করে নিজ বাড়িতে ফিরার জন্য রওয়ানা দিলে উভয় পক্ষের মারাত্মক আক্রমনের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
এ ঘটনায় পিআইবি ও সিআইডি মামলা তদন্ত করে সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার কে চার্জশিট ভুক্ত আসামি করে। মামলা নং ১৬৯/২০১৬ । এছাড়া উক্ত সংঘর্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ সদস্য সহ আহত হয়েছে এবং পুলিশ ৩৬৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ ফায়ার করে ও ১৮ টি কাঁদানে গ্যাস সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় পুলিশ আক্রান্ত হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার সহ উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
মামলা নং ০৭/২০১৬। অন্যদিকে বাহুবল উপজেলার শ্রীমঙ্গল রোডের উত্তর দিক ইউরোটেক্স কোম্পানির মালিকানাধীন জমিতে মাটি ভরাট কাজ চলাকালীন সময়ে পূর্ব জয়পুর গ্রামের সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার তার সহযোগীদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কাজে বাধাঁ দেয় এবং ১০ লক্ষ্য টাকা চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার কে ১ম আসামি করে তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোম্পানির এমডি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২৬৮/২০১৬ । উক্ত মামলায় পূর্ব জয়পুর গ্রামের সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার প্রায় তিন মাস কারাভোগের পর হাইকোর্টে রিট করে জামিনে মুক্ত হয়ে আসেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরো মামলার নাম্বার গুলো হল- সি আর ও জিআর মামলা নং- ১১/২০০৮ বাহুবল তারিখ: ২৫/০৭/২০০৮ মামলা নং ০৩/২০১৪ বাহুবল তারিখঃ ২/০৮/২০১৪, মামলা নং ১৬৯/২০১৬ বাহুবল তারিখ ১২/ ০৯ / ২০১৬ ( হত্যা মামলার পিবিআই ও বিভাগীয় সিআইডি চার্জশিট ভুক্ত ২০ নাম্বার আসামি), মামলা নং ২৬৭/২০১৬ বাহুবল ( এই চাঁদাবাজি মামলায় প্রায় ২ মাস কারাভোগের পর হাইকোর্টের রিট করে জামিনে আসছেন) , মামলা নং ১০/২০১৫বাহুবল তারিখঃ১২/০৭/২০১৫ , মামলা নং ০৭/ ২০১৬ বাহুবল তারিখঃ ৫/০৯/২০১৬ ( পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, বর্তমানে চার্জশিট ভুক্ত আসামি) , মামলা নং ১৮/২০১৬ তারিখঃ ২৯/১২/২০১৬, মামলা নং ৭/২০১৭ বাহুবল তারিখঃ ১৪/০১/২০১৭। এমনকি হত্যা, চাঁদাবাজি মামলাসহ প্রায় ৮ টির অধিক মামলার বার বার আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিটে নাম থাকলেও পড়তে হয়নি কোন বিড়ম্বনায়। নেই কোনো বিভাগীয় তদারকি, জন্ম দিতেছেন একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার। এদিকে, ধামাচাপা পড়ে যাওয়া বিষয়টি দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর ফাঁস হয়েছে।