ডার্ক মোড
Wednesday, 23 April 2025
ePaper   
Logo
লাকসামে গভীর রাতে কৃষি জমি ও জলাশয় ভরাট: প্রশাসনকে ফাঁকি, পরিবেশ হুমকির মুখে

লাকসামে গভীর রাতে কৃষি জমি ও জলাশয় ভরাট: প্রশাসনকে ফাঁকি, পরিবেশ হুমকির মুখে

মশিউর রহমান সেলিম, লাকসাম, কুমিল্লা

কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চল লাকসামে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গভীর রাতে কৃষি জমি, নদী, খাল, পুকুর, ডোবা, দীঘি, ও জলাশয় ভরাটের মহোৎসব চলছে। আইন তোয়াক্কা না করে বেকু ও ট্রাক্টর দিয়ে এসব ভরাট করা হচ্ছে মাটি ও বালু ফেলে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে পড়ছে, অন্যদিকে বসতবাড়িও হুমকির মুখে পড়ছে।

লাকসাম পৌর এলাকা ও উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে এই অপতৎপরতা চলছে লাগাতার। জলাধার ও কৃষি জমি রক্ষায় প্রণীত আইন কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। প্রশাসন মাঝে মাঝে মালামাল জব্দ ও মামলা করলেও ভরাটকারীদের দৌরাত্ম্য থামছে না। অভিযোগ উঠেছে, এক শ্রেণির ইউপি সচিব ও ভূমি কর্মকর্তার পকেট ভারী হচ্ছে এ সুযোগে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গভীর রাতে ট্রাক্টর ও বেকু ব্যবহার করে চলমান ভরাট কার্যক্রমে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে খাল-বিল, পুকুর, ও আবাদি জমি। জেলার দক্ষিণাঞ্চলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন এবং ট্রাক্টরে করে কৃষি জমির মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় চলা একটি প্রভাবশালী চক্র। এসব কাজে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে।

এতে একদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়ছে, অন্যদিকে ভবিষ্যতে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা। স্থানীয় সরকার কাঠামোর দুর্বলতা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরবতার কারণেই ভূমিদস্যুরা আরও উৎসাহিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, বৃহত্তর লাকসাম উপজেলা ও দুটি পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে গভীর রাতে প্রকাশ্যে চলে বালু উত্তোলন ও ভরাট কাজ। পুকুর, দীঘি, ও কৃষি জমি ভরাটের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে, এবং মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, “পরিবেশ ও জলাধার আইন লঙ্ঘনকারীদের কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না।” যদিও রাজনৈতিক চাপের কথাও স্বীকার করেন তারা। লিখিত অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালু ব্যবসায়ী বলেন, "আমরা স্থানীয় প্রশাসনসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সাংবাদিকরা লেখালেখি করলেও তাতে কিছুই আসে যায় না।"

এমন আত্মবিশ্বাসী স্বর স্থানীয় প্রশাসন ও আইনের প্রয়োগে দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের ইঙ্গিত বহন করে। যদি সময়মত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে লাকসামের পরিবেশগত বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল।

মন্তব্য / থেকে প্রত্যুত্তর দিন

আপনি ও পছন্দ করতে পারেন