
মুন্সীগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির বেহাল দশা
মো. মাসুদ খান, মুন্সীগঞ্জ (দক্ষিন)
সংস্কতি চর্চার বিকাশ কেন্দ্র মন্সীগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির বেহাল দশায় সাংস্কতিক কর্মীরে মাঝে এখন ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। অচল সাউন্ড ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলোক বাতি না থাকা, বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়া, বেশিরভাগ চেয়ার ব্যবহার অনুপযোগী, ব্যাক স্ক্রিন সংকট, বিকল জেনারেটর, বিকল ফ্যান, কক্ষ সংকট, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই শিল্পকলা একাডেমি। বছরের পর বছর ধরে এমন সমস্যার সম্মুখীন শিল্পীরা। তবুও এ জেলার শিল্পীরা সাংস্কৃতিক চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিল্পীরা জানান, শিল্পকলা একাডেমিতে দীর্ঘ দিন যাবত নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন শিল্পীরা। গ্যালারির বেশিরভাগ চেয়ারও ব্যবহারের অনুপযোগী। প্রায় ৭ বছর যাবত সাউন্ড সিস্টেম নষ্ট। দর্শক শ্রেনির বেশিরভাগ চেয়ার ও ফ্যান নষ্ট। প্রায় ৭-৮ বছর যাবত দুই তলা গ্যারারির দু’টি টয়লেট পরিত্যক্ত। অডিটোরিয়ামের পলেস্তারা খসে পড়েছে। শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়াম ভাড়া করেও কোন সুবিধা পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত টাকা গুণে দোকান থেকে সব কিছু ভাড়া নিয়ে অনুষ্ঠান করতে হয়। আলোকসজ্জা, সাউন্ড সিস্টেম, পর্দা, ফ্যান, চেয়ার, জেনারেটরসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ভাড়া নিতে হয়। শিল্পকলা একাডেমির সমস্যা নিরসনে প্রশাসন, শিল্পী, প্রশিক্ষক, কালচারাল অফিসারসহ সবার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সাংস্কতিক ব্যক্তিত্ব অভিজিৎ দাস ববি জানান, এ জেলার অনেক শিল্পী ঢাকার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জেলার সুনাম অর্জন করছে। গণসংগীত প্রতিযোগিতা, নাট্যউৎসবে এ জেলার শিল্পীরে অংশগ্রহণ রয়েছে। ভারতের নাট্য উৎসবেও আছে মন্সীগঞ্জের শিল্পীদের সুনাম। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির বেহাল অবস্থার কারণে নতুন শিল্পী তৈরি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মন্সীগঞ্জ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ঢালী বলেন, জেলার সংস্কতি চর্চার বিকাশে শিল্পকলা একাডেমি গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু আমাদের জেলা শিল্পকলা একাডেমির খুবই জরাজীর্ণ অবস্থা। অবকাঠামোগত ভাবেও জরাজীর্ণ, ব্যবস্থাপনার দিক থেকেও জরাজীর্ণ। শিল্পকলার কোন সাউন্ড সিস্টেম নাই, কোন প্রোগ্রাম করতে হলে বাইরে থেকে সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করে আনতে হয়। যে কোন প্রোগ্রাম করতে হলে সরকারি প্রোগ্রাম বা জেলা প্রশাসকের নিজস্ব প্রোগ্রাম করলেও তাও বাইরে থেকে লাইট ভাড়া করে আনতে হয়। আর আমরা যারা নাট্য দলে আছি, আমাদেরও বাইরে থেকে ভাড়া করতে হয়। প্রোগ্রাম চলাকালীন অনেক সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটরের প্রয়োজন হয়। একাডেমির জেনারেটর বিকল থাকায় সেই সবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিল্পীরা। সেই জেনারেটর আজকে দশ বছর যাবত নষ্ট হয়ে আছে। অল্প কিছু টাকা হলে সেটা ঠিক করা যায় কিন্তু ঠিক করে না। শিল্পকলার অডিটোরিয়ামের যে পিছনের ব্যাক স্কিনের সাদা পর্দা এটা অনেক পুরনো হয়ে ছিড়ে গেছে। এটা দ্রুত পরিবর্তন করা উচিত। দেখতে একেবারে বাজে লাগে। গরমের মধ্যে বসা যায় না। এখানে যদি ৫০টা ফ্যান থাকে অধিকাংশ ফ্যান নষ্ট হয়ে আছে। আমারে শিল্পকলায় ৮টা স্ট্যান্ড ফ্যান ছিল। এখন সবগুলো ভেঙেপড়ে আছে। শিল্পকলায় যে পরিমাণ চেয়ার ছিল, সেই চেয়ার ভাঙতে ভাঙতে এখন চারভাগের একভাগ রয়েছে। শিল্পকলার হল রুমের দুই পাশে যে নান্দনিক সৌন্দর্য ছিল, পারটেক্স ছিল, সেই পারটেক্স আর এখন সৌন্দর্য বহন করছে না। ভেঙেচুড়ে একাকার হয়ে গেছে। এখন অডিটোরিয়ামের দুই পাশে ডেকোরেটরের পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে, কোন রকমে কাজ চালানোর জন্য। তিনি বলেন, এই শিল্পকলা ভবনটি আসলে শুধুই একটি দেয়ালের প্রাচীর। ভেতরে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা নেই। নাটক মঞ্চায়নের অনুপযোগী এই মঞ্চটি মোটেও বিজ্ঞান সম্মতভাবে তৈরি হয়নি। সামান্য বৃষ্টি হলে টিনের চালার ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে মঞ্চ ভেসে যায়। অপরিচ্ছন্ন ময়লা আবর্জনার ভাগাড় হয়ে থাকে শিল্পকলার আশপাশ। এভাবে তো সৃজনশীল চর্চা করা যায় না। সৃজনশীল চর্চার বিকাশের জন্য পরিবেশ প্রয়োজন হয়। এছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে জেলা শিল্পকলা একাডেমির কোন কমিটি নেই। একটি নির্বাচিত কমিটি থাকলে হয়তো কিছুটা হলেও সাংস্কতিক চর্চাবান্ধব হয়ে ওঠতো জেলা শিল্পকলা একাডেমি।